মূল প্রজনন মৌশুমের ২২ দিনের ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপনন নিষেধাজ্ঞার সময়ে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে এবার আইন ভাঙার প্রবণতা অধিকমাত্রায় দেখা যাচ্ছে। এমনকি নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে (৯ থেকে ৩০ অক্টোবর) এবার একদিকে যেমনি প্রশাসনের সাথে নৌবাহিনী, পুলিশ ও কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন বাহিনী তৎপর রয়েছে, তেমনি আইন-শৃংখলা বাহিনীর একাধিক সদস্য আইন অমান্যের প্রতিযোগিতায়ও যথেষ্ট তৎপর। ভারতীয় ট্রলারেরও বঙ্গোপসাগরে আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করে মাছ লুটের প্রবণতা বেশি বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে ইলিশ আহরণে জেলেদের আটক করে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে বরিশালের মুলাদী থানার এক এএসআইসহ দুজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেই অনৈতিক কর্মকান্ড থেমে নেই, বরিশাল মহানগর পুলিশের বন্দর থানার সাব-ইন্সপেক্টর ও এএসআই আরো এক ধাপ এগিয়ে নিজেরাই জেলেদের নিয়ে মহানগরী ও জেলার সীমানা পেরিয়ে পটুয়াখালীর বাউফলের ধুলিয়ার তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ আহরণ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় বন্দর থানার সাব-ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান, কনস্টেবল মোহম্মদ আলী ও জুলফিকার আলীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। একই সাথে ঐ থানা থেকে মহানগর পুলিশ লাইন্সে ক্লোজ করা হয়েছে এএসআই তরিকুল ইসলাম, ইরফান হোসেন, সোহেল রানা এবং কনস্টেবল জাকির ও ইবরাহিমকে। এ ঘটনায় বিএমপি’র কমিশনার একজন এডিসি’র নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান হয়েছে।
রাজবাড়ীতেও অবৈধভাবে ইলিশ ধরায় সহায়তার অভিযোগ দুই পুলিশ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার চেয়ারম্যানসহ আরো কয়েকজন আটক হয়েছে বেআইনিভাবে ইলিশ ধরাকালে। প্রতিদিনই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ইলিশ আহরণ প্রতিরোধ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর এসব অভিযানকালে ইলিশ ছাড়াও বেআইনি কারেন্ট জাল ও বেড়জালসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ মৎস্য আহরণ উপকরণ আটক করা হচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের দায়িত্বশীল মহলের মতে, এবার ইলিশের মূল প্রজনন মৌসুমের আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে আইন ভঙ্গের প্রবণতা অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় যথেষ্ট বেশি।
গত ৯ অক্টোবর রাতের প্রথম প্রহর থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থেকে বিগত ১৫ দিনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার অভ্যন্তরীণ ও উপকলীয় নদনদীতে দেড় সহস্রাধিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এসময় সোয়া ৭শ’র বেশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অন্তত ৮শ’ জেলে ও মৎসজীবীকে করাদন্ডাদেশ দেয়া ছাড়াও প্রায় ৯শ’ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসময় প্রায় ২০ লাখ টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। অভিযানকালে প্রায় পৌনে ৪ লাখ মিটার জাল আটক করে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জালও রয়েছে বিপুল পরিমাণে। বাজেয়াপ্তকৃত ঐসব জালের মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা বলে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে। গত ১৫ দিনে পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানের দুই সহস্রাধিক মাছ ঘাট, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার আড়ৎ ও সাড়ে ৩ হাজারের মত বাজার পরিদর্শন করেছে মনিটরিং টিম।
প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার বিষয়টি মনিটরিং করছে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ওয়াসি উদ্দিন-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম। ইতোমধ্যে ঐ টিম দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা সরেজমিনে ঘুরে গেছে। এছাড়াও মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে অপর একটি টিম বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, বর্তমান সারা বিশ্ব আহরিত ইলিশর প্রায় ৬০% বাংলাদেশে উৎপাদিত ও আহরিত হচ্ছে। আর গতবছর দেশে যে প্রায় সোয়া ৫ লাখ টন ইলিশ আহরিত হয়েছে তার ৬০%ই পাওয়া গেছে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় এলাকা থেকে। গত দুই দশকে বরিশাল বিভাগে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ১৫০%-এরও বেশি।
‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানজমট অ্যাকশন প্ল্যান’এর আওতায় ২০০৫ সালই সর্বপ্রথম প্রধান প্রজনন মসুম ১০ দিন ইলিশর আহরণ, পরিবহন ও বিপনন বন্ধ রাখা হয় । ২০১১ সাল তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সাল ১৫ দিন এবং ২০১৭ সাল থক তা ২২ দিন উনীত করা হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদর মত, সারাবিশ্ব উৎপাদন হ্রাস পলও বাংলাদশ গত দড় দশক ইলিশর উৎপাদন প্রায় তিনগুন বদ্ধি পয়ছ।
মৎস্য বিজ্ঞানীদর মত, বাংলাদশর ইকাসিস্টম সারা বছরই ৩০% ইলিশ ডিম বহন কর। এসব ইলিশ পরিপক্ক হয় ডিম ছাড়। য ডিমগুলা পুরুষ ইলিশ দ্বারা নিষিক্ত হয় থাক তা এ মাছর নতুন প্রজন্ম গঠন কর। আর আশ্বিনর পূর্ণিমার আগ-পরের এ সময় দশর চট্টগ্রাম উপকলর মায়ানী পয়টÑমীরসরাই, ভালার পশ্চিম আউলিয়া পয়টÑতজুমদ্দিন, কক্সবাজারর কুতুবদিয়া পয়ট এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতা চাপলি পয়ট-এর ধলচর দ্বীপ, মনপুরা দ্বীপ, মলভীরচর দ্বীপ ও কালিরচর দ্বীপ এলাকায় মা ইলিশর অত্যধিক প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায়। এসব বিবেচনাতেই ঐসব এলকার ৭ হাজার বর্গ কিলামিটার অশি^নর পূর্ণিমার আগ-পড়র ২২ দিন সবধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়ছ।
উপক‚লর ৭ হাজার বর্গ কিলামিটারর মূল প্রজনন ক্ষত্র মুক্তভাব ভাসমান ডিম থক ফুট বর হবার পর ইলিশর লার্ভা, স্বাদু পানি ও নানা পানির নার্সারী ক্ষত্রসমূহে বিচরণ করে। এরা খাবার গ্রহণ করে বড় হত থাক। নার্সারী ক্ষত্রসমূহ ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভস বড়াবার পর জাটকা হিসব সমুদ্র চল যায় পরিপক্কতা অর্জন। বঙ্গাপসাগরর বিভিন এলাকায় ১২Ñ১৮ মাস অব¯ানর পর পরিপক্ক ইলিশ প্রজননক্ষম হয় ওঠ। এর পর তারা আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষত্র ফির আস ডিম ছাড়ার লক্ষ্য।
দশ ইলিশর উৎপাদন ক্রমা^য় বদ্ধি পয় ২০১৭-১৮ সাল ৫ লাখ ১৭ হাজার টন এবং সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছর তা সায়া ৫ লাখ টনরও বশি বদ্ধি পয়ছ বল মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়ছ। গত বছর আশ্বিনর পূর্ণিমার আগ পরর ২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষদ্ধকালীন সময় ৪৮% মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযাগ পয়ছ বল জানিয়ছ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট-বিএফআরআই। ইনস্টিটিউট-এর মত প্রজননক্ষম মা ইলিশর হার ২০১৭ সাল ৭৩% থক ’১৮ সাল ৯৩%-এ বদ্ধি পয়ছ। পাশাপাশি প্রজনন সাফল্যর হারও ৮০%-এ উনীত হয়ছ। গত বছর ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময় দশর উপক‚লভাগর প্রজনন এলাকায় ৭ লাখ ৬ হাজার কজি ডিম উৎপাদিত হয়। যার ৫০% ডিম পরিস্ফুটিত হয়ছে, তার ১০% বঁচ থাকলও দশ গত বছর শুধু মূল প্রজনন মশুম ৩ হাজার কাটি জাটকা মূল ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়ছ বল জানিয়ছন বিএফআরআই-এর বিশষজ্ঞগণ।
এমনকি গতবছর মূল প্রজনকালীন সময় প্রজনন ক্ষত্রসমূহে নমুনা পরীক্ষা কর ৮৩% ইলিশ রেনু পানা পাওয়া যায়। আমাদর অর্থনীতিত জাতীয় মাছ ইলিশর একক অবদান এখন ১%-এরও বশি। আর মৎস্য খাত এ মাছর অবদান প্রায় ১২-১৩%।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন