মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

২৭৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নীতিমালার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলেই বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম

গণভবনে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি -ফোকাস বাংলা


দীর্ঘ ৯ বছর পর দুই হাজার ৭৩০টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়ে এর নীতিমালা যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনারা নীতিমালা অনুযায়ী সকল নির্দেশনা পূরণ করতে পেরেছেন বলে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কাজেই এটা ধরে রাখতে হবে। কেউ যদি এটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, সাথে সাথে তার এমপিওভুক্তি বাতিল হবে। তিনি বলেন, এমপিওভুক্তি হয়ে গেছে- বেতন তো পাবই, ক্লাস করানোর দরকার কী, পড়ানোর দরকার কী- এ চিন্তা করলে কিন্তু চলবে না যোগ করেন তিনি। আগামীতে যারা নীতিমালা পূরণ করবে তাদের এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হবে।

গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় গণভবনে নতুন করে এমপিও’র তালিকাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ঘোষণা উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্গম এলাকায় এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে নীতিমালা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। হাওর-বাঁওড়, চর, দুর্গম এলাকা বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় মাইলের পর মাইল হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। সেখানে এমপিওভুক্তির নীতিমালা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে, যাতে ওই অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পায়। সেই সঙ্গে আমার একটা নির্দেশ আছে ওসব এলাকায় আমরা বেশির ভাগ আবাসিক স্কুল করে দিতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এমপিওভুক্তি চান, তাদের সে নির্দেশনাগুলো মানতে হবে। যাদেরকে এমপিওভুক্ত করলাম তাদের কাছেও আহ্বান থাকবে- নীতিমালা অনুযায়ী সব নির্দেশনা পূরণ করতে পেরেছেন বলেই এমপিওভুক্ত হয়েছেন। এটা ধরে রাখতে হবে। কেউ তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে এমপিও বাতিল হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে আমরা করে দিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু ঐ নীতিমালাগুলো পূরণ করতে হবে এবং সেটা অব্যাহত রাখতে হবে। যদি এমপিওভুক্তির এই সুযোগটাকে অব্যাহত রাখতে চান। ২ হাজার ৭৩০টি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৩৯টি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯৯৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯৩টি কলেজ, ৫৬টি ডিগ্রি কলেজ, ৫৫৭টি মাদরাসা এবং ৫২২টি কারিগরি শিক্ষা ইনস্টিটিউশন রয়েছে।

কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির ব্যবস্থা করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন তাদেরও প্রয়োজন ছিল। তাদেরকে অবহেলা করে কেবল দোষ দিলে চলবে না। শিক্ষাজীবন শেষে তারা কোথায় যাবে, কী কাজ করবে, কিভাবে চলবে? তারা তো এ দেশেরই সন্তান। কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুল পর্যায় থেকেই শিশুরা যেন কারিগরি শিক্ষা নিতে পারে। আমাদের ছোট ছোট শিশুদের ভেতর অনেক মেধা লুকিয়ে থাকে। তারা অনেক কিছু তৈরি করতে পারে, সেটা বিকাশের জন্য একটা সুযোগ আমাদের করে দেয়া দরকার।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এমপিওভুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের প্রতি ধন্যবাদ এবং এমপিওভুক্ত নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা দীর্ঘদিনের একটা চাহিদা ছিল। আমরা এই নিয়ে অনেক দিন থেকেই কাজ করছি। সবাই মিলে কাজ করে একটা তালিকা করে আজ এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারলাম।

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এমপিওভুক্তি নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, আগে যারা এমপিওভুক্ত ছিল তাদের বেতনের টাকাটা সরাসরি ওই প্রতিষ্ঠানে চলে যেত। যার ফলে অনেক সময় তাদের কাছ থেকে একটা নালিশ আসত, যে তারা ঠিকমতো বেতন পায় না।

তিনি বলেন, তখন আমরা ঠিক করি যে, যার যার বেতন তার তার কাছে সরাসরি চলে যাবে এবং প্রতি মাসে একটা পেমেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে যার নামে তার টাকার চেকে পৌঁছে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা করে একটা সুবিধা হলো যে- দেখা গেল প্রায় ৬০ হাজার ভুয়া শিক্ষক ছিল, যাদের নামে টাকা যেত। যখন আমরা প্রতিজনের নামে মাসিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে শুরু করলাম তখন এই ৬০ হাজার শিক্ষকের আর কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না।

যত্রতত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে শিক্ষার সঠিক মানটা আর বজায় থাকে না, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রচন্ড একটা দাবি ছিল এমপিওভুক্তকরণের। আর এজন্য শিক্ষকরা আন্দোলন ও করেছেন। তখন আমরা বলেছি আমরা সবই করব। কিন্তু একটা নীতিমালার ভিত্তিতে করব। তিনি বলেন, শিক্ষাকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দেই বলেই একে একটি নীতিমালার ভিত্তিতে করতে চেয়েছে সরকার। যাতে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। তবে এই নীতিমালা ঠিক করে একে যাচাই-বাছাই করে তালিকাটা করতে একটু সময় লেগে যায়।

তিনি বলেন, তার সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে, দেশের বাজেট বৃদ্ধি করে শিক্ষা খাতে সর্বাধিক ব্যয় বরাদ্দ করেছে, যাতে করে শিক্ষাকে আধুনিক এবং বিজ্ঞানসম্মত করে যুগের চাহিদা মোতাবেক প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা যায়।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিয়ে এবং ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে ঘরে বসে উপার্জনের জন্য তার সরকারের ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং কর্মসূচি’ চালু, কওমি মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থাকে শিক্ষার মূল ধারায় সম্পৃক্ত করা এবং শিক্ষা স¤প্রসারণ ও যুগোপযোগীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদেরকে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সুশিক্ষায় শিক্ষিত সোনার ছেলেমেয়ে তৈরির আহŸান জানান। সেই সোনার ছেলেমেয়ে যেন তৈরি হয় সেই দায়িত্বটা শিক্ষকদের ওপরই বর্তায়। তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থীরা স্কুল পর্যায় থেকেই যাতে কারিগরি শিক্ষা বা ভোকেশনাল ট্রেনিং নিতে পারে সে দিকে লক্ষ রেখে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমাদের ছোট ছোট শিশুদের ভেতরে অনেক মেধা লুকিয়ে আছে। তারা অনেক কিছু তৈরি করতে পারে। সেটা বিকাশের একটা সুযোগ আমাদের করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, শুধু উচ্চশিক্ষা নিয়ে, ডিগ্রি নিয়ে তো লাভ নেই। তাকে তো কিছু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কিছু করে খেতে হবে। সেটার ব্যবস্থা যাতে করতে পারি, যা দেশে-বিদেশে যেখানেই হোক। সেটাকেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। সেভাবেই আমরা করে যাচ্ছি।

সবশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছিল সরকার। এরপর দীর্ঘ দিন এমপিওভুক্তি বন্ধ থাকায় আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এমপিও বা মান্থলি পেমেন্ট অর্ডারের তালিকাভুক্ত বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের বেতনের একটি অংশ সরকার থেকে পান। এ জন্য প্রথমে যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করা হয় এবং শর্ত পূরণের ভিত্তিতে সেই প্রতিষ্ঠানের যোগ্য শিক্ষকরা এমপিও তালিকায় আসেন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কয়েকটি শর্ত দিয়ে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে আলাদা বরাদ্দ রাখা হবে বলে বাজেটের আগে জানিয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু বাজেটে এমপিও নিয়ে কোনো ঘোষণা না থাকায় আমরণ অনশনে বসেন নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যে গত বছর ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভুক্তির কার্যক্রম দ্রুত শুরুর কথা সংসদে জানান।

এরপর এ বছর জুন মাসে ২০১৯-২০ সালের বাজেট ঘোষণা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, দীর্ঘদিন পর এমপিওভুক্তির কার্যক্রম আবার শুরু হচ্ছে এবং নতুন বাজেটে সেজন্য বরাদ্দও রাখা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Hariz Mahmud Sarker ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
From now no salary increase in pressure of strike of any professional body .
Total Reply(0)
কামরুল হাসান ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ শেখ হাসিনা সরকারকে। নিয়মিত লক্ষ রাখতে হবে পড়াশুনার প্রকৃত মান উন্নয়ন হচ্ছে কিনা। যারা ক্রমাগত খারাপ করবে তাঁদের এমপিও ভুক্তি বাতিল করার রেওয়াজ থাকাটা জরুরী।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
Some one raises demand, then instantly the goverment mitigate his deman. This is adminstration. It should better to resign education minister . .
Total Reply(0)
নীল আকাশ ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে ।
Total Reply(0)
Fiha Srabonti ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
দীর্ঘ ৯ বছর পর দুই হাজার ৭৩০টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।... সংবাদটা আসলেই সুখবর ও বটে..
Total Reply(0)
Umed Raja ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
আর কত বছর পরে হবে কে জানে!
Total Reply(0)
Rana Sarker ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
কিছু কিছু শিক্ষকের (যারা ননএমপিও থেকে গেলো) সন্তানদের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে গেলো।
Total Reply(0)
OK Nishan ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
ঘোষনা নয়? বাস্তবায়ন করুন।পাশাপাশি শিক্ষার মান এ-র বিষয়ে নজরদারি রাখুন।
Total Reply(0)
Sumon Ahmed Ronju ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
আলহামদুল্লিলাহ। দীর্ঘ ৯ বছর আমার বড় ভাই একটি নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্টানে বিনা বেতনে কাজ করছে। জানিনা তার কর্মস্থল শিক্ষা প্রতিষ্টান টি এমপিও হয়েছে কিনা। যদি এমপিও হয় তাহলে আমাদের পরিবারের সবচেয়ে খুশির দিন টা হবে আজ। ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রি কে
Total Reply(0)
Tofazzal Hossain ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৯ এএম says : 0
কাজটা ভাল লাগলো
Total Reply(0)
Monirujjaman ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:০১ এএম says : 0
Thanks
Total Reply(0)
Mohammed moni uddin ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৮:২১ এএম says : 0
অফুরন্ত ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন