বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভয়ানক কফিন কন্টেইনার, তাদের চিৎকার কেউ শোনেনি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:২৯ পিএম

ধাতব কন্টেইনারের ভিতর তখনও ছিল মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। তার ভিতর একটি শিশুসহ ৩৯ জন মানুষ। তারা আর্তনাদ করছেন। ধাক্কাচ্ছেন বের হওয়ার দরজার হ্যান্ডেল ধরে। আস্তে আস্তে শক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে। কেউ কেউ বাড়িতে জীবন বাঁচানোর জন্য ম্যাসেজ পাঠান মোবাইলে। কিন্তু তাদের সেই আর্তনাদ ওই কন্টেইনারের বাইরের দুনিয়ার কোনো মানুষের কানে পৌঁছার মতো কোনো উপায় ছিল না। ফল যা হবার তাই হলো।

একে একে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন সবাই। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে পানি জমে বরফ হয়। সেখানে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে কিভাবে বাঁচবেন ওইসব মানুষ! ফলে কঠিন এক ট্রাজেডি রচিত হয়েছে বৃটেনের এসেক্সে। গত বুধবার এ কাহিনী উদঘাটনের পর একের পর এক বেরিয়ে আসছে তথ্য। তা নিয়ে বৃটিশ মিডিয়া গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করছে। এতে ফুটে উঠেছে নিজেদের জীবনকে শতভাগ ঝুঁকির মুখে ফেলেও কিভাবে মানুষ বৃটেন বা ইউরোপ বা উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছে।

উদ্ধার করা কন্টেইনারের দরজার ভিতরে হ্যান্ডেলে রক্তাক্ত হাতের ছাপ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তারা ওই কন্টেইনারের নাম দিয়েছেন ‘কফিন কন্টেইনার’। বেলজিয়ামের জিব্রুজে একটি ফেরিতে উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল ওই মানুষসহ কন্টেইনার। তার ভিতরে আস্তে আস্তে তাপমাত্রা কমতে থাকে। এর শেষ অধ্যায় উন্মোচিত হয় এসেক্সের একটি বন্দর এলাকায়।

নিহত ওইসব অভিবাসীদের মধ্যে ৬ জন ভিয়েতনামি রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময় তারা ছিলেন নগ্ন। কোনো পোষাকই ছিল না পরনে। অথবা সামান্য পোশাক ছিল। তারা ছিলেন ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলীয় ক্যান লোক-এর বাসিন্দা। মারা যাওয়ার আগে তারা দরজায় ধাক্কা দিয়েছেন। আঘাত করেছেন বাইরের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে। কিন্তু না, ফ্রিজ যেমন হয়, ঠিক তেমনই। ভিতরের কোনো শব্দ বাইরে পৌঁছেনি।

ওদিকে এই পাচারে জড়িত থাকার সন্দেহে স্ট্যানস্টেড এয়ারপোর্টে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৪৮ বছর বয়সী একজন ব্যক্তিকে। আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসেছে সব কথা। মারা যাওয়ার আগে ভিয়েতনামের একজন যুবতী ফাম থি ট্রা মাই তার মার কাছে ধারাবাহিক ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি মাকে বলেছেন তাকে তিনি কতটা বেশি ভালবাসেন। মাকে বলেছেন, তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। মারা যাচ্ছেন। তার পরিবারের দাবি, ২৬ বছর বয়সী এই যুবতী উন্নত জীবনের আশায় চীন হয়ে বৃটেনে যাওয়ার জন্য পাচারকারীদের দিয়েছেন ৩০ হাজার পাউন্ড। এমন ১০টি ভিয়েতনামি পরিবার আশঙ্কা করছেন তাদের স্বজনরাও রয়েছেন মৃতদের তালিকায়। নুয়েন দিনহ লুওংয়ের আত্মীয়রা বলেছেন, নিহতদের মধ্যে তিনি থাকতে পারেন। তারা বলেছেন, নুয়েনের বিষয়ে জানেন এমন দু’টি স্থান থেকে তারা জরুরি বার্তা পেয়েছেন। ভিয়েতনামের ১৯ বছর বয়সী একজন তরুণী নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার আত্মীয়রা। তারা বলেছেন, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে তারা ফোন পেয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, ওই তরুণী কন্টেইনারে উঠছেন। তারপর থেকেই তার ফোন বন্ধ।

মানব পাচারের এই ভয়াবহতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ওই কন্টেইনারবাহী লরির চালক মাউরিস মো রবিনসনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ওয়ারিংটনের দম্পতি জোয়ানা মেহের (৩৮) ও তার স্বামী থমাস (৩৮)কে এই ষড়যন্ত্রে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দর থেকে সর্বশেষ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Barzin ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৪৫ পিএম says : 0
Dangaresএখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
Total Reply(0)
M.A. SALAM ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৪৮ এএম says : 0
The only punishment for the criminals is hanging....
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন