শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নরসিংদী সরকারি কলেজ প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অনাস্থা

প্রশাসনিক কাজে অচলাবস্থা

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

 মারাত্মক প্রশাসনিক সঙ্কটে পতিত হয়েছে নরসিংদীর সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নরসিংদী সরকারি কলেজ। ৮২ জন শিক্ষক কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক হাবিবুর রহমান আকন্দের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত বিএ পরীক্ষায় নরসিংদীর এমপি বুবলীর জালিয়াতির ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দেয়ায় অভিযুক্ত হবার পর শিক্ষকদের পক্ষ থেকেই প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান আকন্দের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই অনাস্থা অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অনাস্থা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে নরসিংদী সরকারি কলেজ জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই কলেজে হাজার ১৯ টি অনার্স এবং ১৩ টি বিষয়ে মাস্টার্স রয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকসহ অনার্স মাস্টার্সে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা রয়েছে কমবেশি ৩০হাজার।
গত ৩০ জুন প্রিন্সিপাল হিসেবে কলেজে যোগদানের পরপরই কলেজের শিক্ষকমন্ডলীর সাথে পরামর্শ ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধির নামে অনার্স মাস্টার্সের শ্রেণিকক্ষগুলো উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছেন। প্রিন্সিপাল প্রফেসর হাবিবুর রহমান আকন্দের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের ফলে নরসিংদী সরকারি কলেজের হাজার-হাজার ছাত্র-ছাত্রী উচ্চশিক্ষা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। প্রিন্সিপালের এই আত্মকেন্দ্রিক সিদ্ধান্তে সমর্থন যোগাচ্ছেন কলেজের উপাধ্যক্ষ জাহানারা বেগম।
নরসিংদী সরকারি কলেজের প্রায় সকল শিক্ষার্থী নিম্ন বৃত্ত শ্রেণির। তারা নামমাত্র বেতনে সরকারের আনুকূল্যে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান আকন্দ সি.টি পরীক্ষার নামে এক পৃষ্ঠার পরীক্ষার জন্য সরকারি আর্থিক পরিপত্র অমান্য করে ৭০০ ও ৫২৫ টাকা ফি আদায় করে কমবেশি ৫৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালান। কলেজের শিক্ষক মন্ডলী এই দুর্নীতির ঘটনার প্রতিবাদ করার পর প্রিন্সিপাল আকন্দ এই অনৈতিক অর্থ আদায় বন্ধ করলেও টাকাগুলো ছাত্রদেরকে ফেরত দেননি। শিওর ক্যাশের মাধ্যমে কিছু শিক্ষার্থীর নিকট থেকে তিনি অবৈধ অর্থ আদায় করেছেন।
অভিযোগ ও অনাস্থাপত্রে ৮২ জন শিক্ষক প্রিন্সিপাল আকন্দ ও ভাইস প্রিন্সিপাল জাহানারা বেগমকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তারা কলেজের আভ্যন্তরীণ বন্টন নীতিমালা নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন। সরকারি আর্থিক বিধিবহির্ভূত অর্থ প্রদানে শিক্ষকরা সম্মত না হওয়ায় কলেজের সব ধরনের আর্থিক বন্টন চার মাস ধরে বন্ধ করে রেখেছেন। যার ফলে শিক্ষক-কর্মচারী সকলেই বৈধ আর্থিক সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। শুধু তাই নয় প্রিন্সিপ্যাল আকন্দ কলেজের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কমিয়ে দিয়েছেন। প্রিন্সিপাল আকন্দ বিকেল পাঁচটার পর শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে স্ব স্ব বিভাগে অবস্থানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। যার ফলে ভর্তি ফরম পূরণসহ সকল বিভাগীয় কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
ছাত্র শিক্ষক অভিভাবকদের কেউ ফি’র বিস্তারিত বিবরণ জানতে চাইলে তিনি জানিয়ে দেন যে সচিব ছাড়া কাউকে এ ব্যাপারে জানানো যাবেনা। কোনো আর্থিক বিষয়ে কোনো তথ্য তিনি কাউকে দিতে বাধ্য নন। মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী কলেজের নিজস্ব নিয়মে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা ভর্তি অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার কমিটি করা হতো।
কলেজে একটি ক্রয় সংস্কার ও মেরামত কমিটি রয়েছে। কিন্তু প্রিন্সিপাল আকন্দ কমিটিকে পাশ কাটিয়ে একক সিদ্ধান্তে উপাধ্যক্ষকে নিয়ে বিবিধ তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করেন। নিজের আখের গোছানোর জন্য তিনি এই আর্থিক দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে আইসিটি ক্লাস নেবেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরা। শিক্ষকরা পাঠ বঞ্চিত হয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ করেও প্রিন্সিপাল এর নিকট থেকে কোন সুফল পায়নি। যার ফলে আইসিটি বিষয়টি অনেক সেকশনে ছাত্রদের কাছে অপাঠ্যই রয়ে গেছে। প্রিন্সিপাল আকন্দ প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে সাধারণ শিক্ষকদের উপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছেন। কোন শিক্ষক তার অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তিনি তাদেরকে বদলির হুমকি দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই তার কার্যকলাপের সমালোচনা করায় তিনজন শিক্ষককে তিনি হাতিয়া সন্দ্বীপ, বিয়ানীবাজার এবং ঝিনাইদহে বদলি করিয়েছেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন