শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চার শতাধিক ব্যাংক হিসাব

দুদক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য চায়

সাঈদ আহমেদ | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

চার শতাধিক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের জব্দকৃত ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপকের কাছে এ তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন সংস্থার মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান।
দুদক সূত্র জানায়, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এফআইইউ। বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠানো সাঈদ মাহবুব খানের চিঠিতে বলা হয়েছে, দুদকের চলমান অনুসন্ধান ও মামলার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য জব্দ করা হিসাবগুলোর বিবরণীসহ প্রকৃত অর্থ লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনা প্রয়োজন। জব্দকৃত ব্যাংক হিসাবধারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিবরণী, লেনদেনের তথ্য, নথিপত্র জরুরি ভিত্তিতে পাঠানোর অনুরোধ জানাচ্ছি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি দুদক।

পূর্তের ১১ প্রকৌশলীল দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে সহ এবার ১১ প্রকৌশলীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেুেছ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার সংস্থার পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নিষেজ্ঞা আরোপের অনুরোধ জানানো হয়। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিরা হলেন, উৎপল দে, প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, মোহাম্মদ ফজলুল হক, আব্দুল কাদের চৌধুরী, মো. ইলিয়াস আহমেদ, তত্ত্বআবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল মোমেন চৌধুরী, মো. রোকন উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী মমিতুর রহমান এবং সাজ্জাদুল ইসলাম। এর আগে গত ২৭ অক্টোব এই ১১ জনের বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় সংস্থাটি। তাদের ১১ জনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ বিদেশে অর্থ পাচার, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

উৎপলের দুর্নীতির তথ্য দুদকে : দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্টোপলিটন ও ঢাকা জোনের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে এবং জিকে শামীমের সহযোগি ১০ প্রকৌশলীর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দুদকের হাতে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ কারণেই তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
সূত্রমতে, উৎপলের বিরুদ্ধে কানাডা ও ভারতে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তার ছেলে কানাডায় বসবাস করছে। সেখানে কি পরিমাণ টাকা তিনি পাচার করেছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি উৎপল দে তার ছেলেকে কয়েক কোটি মূল্যের গাড়ি কিনে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিম্নমানের রড-সিমেন্ট প্রয়োগ করার কারণে নির্মাণের আগেই ভেঙ্গে পড়েছিল কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের দেয়াল। ওই সময় নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন এই উৎপল দে। পরে এ ঘটনার তদন্ত করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেও ধামাচাপা পড়ে যায় গণপূর্তের সেই তদন্ত প্রতিবেদন। তারপরও অদৃশ্য ইশারায় তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নেন। তবে ঠিকাদার জিকে শামীমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসায় সম্প্রতি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে উৎপল কুমার দে কে ঢাকা মেট্টো ও ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ থেকে সরিয়ে রিভার্জ পদে নিয়োগ করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, মহাজোট সরকারের প্রথম মেয়াদে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ পান। অথরাইজড অফিসার পদে দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে বহু দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। টাকা ছাড়া তার সময়ে নকশা অনুমোদন হতো না। দীর্ঘ সময় রাজউকের অথরাইজড অফিসার পদে দায়িত্ব পালনের পর আজিমপুরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান। পরে ঢাকা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন এ কর্মকর্তা। তাকে বলা হয় ঘুপচি বিজ্ঞাপনের প্রবর্তনকারী। গণপূর্ত ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। মেট্টো জোনের দায়িত্বে থাকায় জাতীয় সংসদ, গণভবন, বঙ্গভবন থেকে শুরু করে সচিবালয়, মন্ত্রীপাড়াসহ সব ভিভিআইপি এলাকার পূর্ত কাজ তার অধীনেই হয়। এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে ভিআইপি বরাদ্দ নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

গণপূর্ত বিভাগে দুর্নীতি সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু এবং শওকত উল্লাহ। এদের মধ্যে ফজলুল হক মধুর সঙ্গে জি কে শামীমের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। পঙ্গু হাসপাতালের আধুনিক ভবন নির্মাণ, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ভবন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, নিউরো সায়েন্স, বিজ্ঞান জাদুঘরসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্প জি কে শামীমের জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (জি কে বিল্ডার্স) করেছে। এসব প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন ফজলুল হক মধু। এ কারণে নিজেরটাসহ সবার কমিশন তিনিই গ্রহণ করতেন। সিটি ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা শওকত উল্লাহ মন্ত্রীপাড়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দায়িত্বে থেকেও প্রধান প্রকৌশলীর ডান হাত হিসেবে কাজ করেন। সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর রফিকুল ইসলামের সিন্ডেকেটের অন্যতম সদস্য ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত। সব ধরনের কমিশনসহ বদলি, পদোন্নতি, পোস্টিং বাণিজ্যের মূল হোতা ছিলেন তিনি।

ফিরোজের বিরুদ্ধে মামলা :
এদিকে কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি এবং কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল আলম ফিরোজের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। সহকারি পরিচাল মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৬৮ লাখ ২ হাজার ৬৩৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে র‌্যাবের একজন নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ৯৯০ পিস ইয়াবা ও একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়। শফিকুল আলম ফিরোজকেও গ্রেফতার করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন