বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি চলছে -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:১৩ পিএম

বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিএসএমএমইউ'র (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) পরিচালক প্রেস কনফারেন্স করে প্রমান করলেন যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। পচিালকের বক্তব্যে মনে হয়েছে পিজিতে বেগম জিয়ার সঠিক চিকিৎসা হবে না। দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে যে ছিনিমিনি চলছে সেটি পরিচালকের বক্তব্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। একটা নীল নকশা অনুযায়ী যে বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে-এটার প্রমান-তিনি বলেছেন জীবন-মৃত্যু নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। এই বক্তব্য বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর মধ্যে ভয়াবহ আশংকা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আমি অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএসএমএমইউ’র পরিচালক বলেছেন বেগম জিয়া প্রস্তুতি নিতে নিতে ২টা আড়াইটা বেজে যায়, অনেক সময় ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় চিকিৎসকদের। পরিচালকের বক্তব্য সত্যের অপলাপ। বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে এটি শুধু ডাহা মিথ্যাচারই নয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সরকারের পঙ্কিল রাজনৈতিক আবর্তের মধ্যে ঢুকে পড়বেন এটি কেউ প্রত্যাশা করেনি। প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহ ও প্রণোদনায় পিজির পরিচালক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য রেখেছেন। নীতি-নৈতিকতা, আদর্শের উপরে কেউ কেউ নিজের ব্যক্তি স্বার্থকে গুরুত্ব দেন। সেনাবাহিনীর একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং চিকিৎসক হিসেবে এই দুটি উচ্চমানের পেশাকে তিনি অবজ্ঞা করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বেগম খালেদা জিয়া প্রতিদিন সকালের দিকেই রেডি হয়ে যান ইনস্যুলিন নিতে, চিকিৎসা নিতে, তিনি চিকিৎসকদের অপেক্ষায় বসে থাকেন কিন্তু চিকিৎসকরা দুপুর ১২টা থেকে ১টার আগে তাঁর কেবিনে আসেন না।
পরিচালককে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিজভী বলেন, পরিচালক সাহেবকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি-বিকেল ৪টা পর্যন্ত কবে কোন কোন ডাক্তার দেশনেত্রীর চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করেন, তাদের নাম জনগণকে বলুন। তিনি দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে সরকারের বক্তব্য তোতা পাখির মতো বলছেন। তারা বলছেন দেশনেত্রীর সুগার নিয়ন্ত্রণে, আসলে সকালের ফাষ্টিংয়ে সুগার ১১ থেকে ১৪ এর মধ্যে থাকে। তাহলে পরিচালক সাহেব এটিকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ বলছেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা তুলে ধরে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গতকালও তাঁর সুগার ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দেশনেত্রীর বাই ল্যাটারাল ফ্রোজেন সোল্ডার অর্থাৎ দুটি হাতের সোল্ডার জয়েন্টই ফ্রোজেন হয়ে গেছে। তাঁর রিষ্ট জয়েন্ট এবং হাতের স্মল জয়েন্টগুলি বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তিনি হাইলি এক্টিভ ডিফরমিং, রিমেটয়েড আর্থ্রাইটিস, হাইপারটেনশন, অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তিনি জেলখানায় সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় এবং স্বাভাবিক পরিবেশ না থাকায় এসব রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। এক দুর্বিষহ অসুস্থার মধ্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দিনযাপন করছেন। তাঁর কোন চিকিৎসাই হচ্ছে না।

দেশে শাসন এখন নগ্নরূপে প্রকাশ পেয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরিকে গতকাল সাজানো মিথ্যা মামলায় তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। মামলায় বলা হয়েছে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, তাই তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে গতমাসের শেষ সপ্তাহে চার্জ গঠনের জন্য তারিখ নির্ধারিত ছিল। ঐ তারিখে জনাব গিয়াস কাদের চৌধুরী সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকায় সময়ের আবেদন করা হয়। চার্জগঠনের জন্য ১ম তারিখেই সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে ওয়ারেন্ট দেয়া হয় এবং মামলায় চার্জ গঠন করে সাক্ষীর জন্য তারিখ ধার্য রাখা হয়। গত পরশু দিন ছিল সাক্ষীর জন্য ১ম তারিখ। ঐদিনই আদালতে ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মাত্র ২০ মিনিটে ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়ার পরদিনই ৩০/১০/১৯ ইং তারিখে রায় প্রচারের জন্য দিন ধার্য রাখা হয়। এটা একটা নজীরবিহীন ঘটনা। বিচারকের এই রায় পূর্বপরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিচারক সাজা দেওয়ার জন্য অধিক উৎসাহিত হয়ে দ্রুত বিচারকার্য শেষ করেছেন। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনেই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সাজা দেয়া হয়েছে। মিথ্যা সাজানো মামলায় আদালতকে ব্যবহার করে সাজা দেওয়ায় আবারো প্রমাণিত হলো-দেশে নাৎসীবাদী শাসন এখন নগ্নরুপে আত্মপ্রকাশ করেছে। কারন ভিন্নমতকে কোনভাবেই সহ্য করতে পারছে না এই সরকার। বিরোধী দলের রাজনৈতিক বক্তব্যের কারনে শাস্তির নোটিশ হাতে নিয়ে বসে আছে আওয়ামী সরকারের আদালত। নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী ক্ষমতাসীনরাই কথা বলবেন, লাগামহীন বক্তব্য দিবেন, সভা-সমাবেশ করবেন। কিন্তু দেশে আর কোন বিরোধী রাজনৈতিক দলের সেই অধিকার থাকবে না, এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা বক্তব্য দিয়ে তাদেরকে লৌহকপাটের ভেতরেই থাকতে হবে। সরকারের সমালোচনাকে এখন অপরাধ হিসেবে গন্য করা হচ্ছে। নাৎসী দু:শাসনের আত্মা এখন আওয়ামী সরকারের ওপর ভর করেছে। সারাদেশ এখন শেখ হাসিনার গ্যাস চেম্বারে বন্দী। এ রায় একদলীয় নব্য বাকশালেরই বহি:প্রকাশ। আমি এ রায়ের তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছি। অবিলম্বে ফরমায়েশি কারাদন্ডাদেশ বাতিল করে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মুক্তি দাবি করছি।

সরকারের সিন্ডিকেটের কারণে পেয়াজের দাম বাড়ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, বেড়েই চলছে পিঁয়াজের দাম। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম সব রেকর্ড ভেঙেছে। খুচরা বাজারে পিঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছুঁই ছুঁই অবস্থা। দেশি পিঁয়াজ খুচরা বাজারে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১৫০ টাকাও দাম চাওয়া হচ্ছে। আমদানি করা ভারতীয় পিঁয়াজও ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমার বা মিশর থেকে আনা পিঁয়াজের দামও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে আরও আগে। বাজারে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। এক বছরে পণ্যটির দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। আর এ মাসে বেড়েছে ৬১ শতাংশ। গত ২৯শে সেপ্টেম্বর দেশি ও আমদানি করা পিঁয়াজের দাম ছিল কেজি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। ঠিক এক মাস পর পিঁয়াজের দর হয়েছে কেজি ১০৫ থেকে ১২০ টাকা। পিঁয়াজের দাম এখন শক অব দি কান্ট্রি। দুর্নীতি ও ভুলনীতি সরকারের নীতি হওয়ার কারনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। সরকারের সিন্ডিকেটের কারনেই পিঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবিলম্বে পিঁয়াজের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন