শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নরসিংদীর বাজারে হঠাৎ চালের মূল্য বৃদ্ধি

কেজিপ্রতি বেড়েছে ২ টাকা বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

পেঁয়াজের বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা মুনাফা লুটের পর মুনাফাখোর মজুদদারদের কালো থাবা পড়েছে চালের বাজারে। আমনের উৎপাদন মৌসুমকে সামনে রেখে নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে গেছে।
গত এক সপ্তাহে কেজি প্রতি চালের দাম বেড়েছে দুই টাকা। বস্তা প্রতি বেড়েছে ২০০ টাকা। ২৮ ও ২৯ ভ্যারাইটির ৩৪ টাকা কেজির চাল বর্তমানে ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মিনিকেট, কাজল, লতা, বাংলামতি ইত্যাদি ভ্যারাইটির চাল কেজিপ্রতি ২ টাকা করে এবং বস্তা প্রতি ২০০ টাকা করে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর হঠাৎ করে চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে কিছু বলতে পারছে না খুচরা বিক্রেতারা। তবে অনেকে বলছে আশ্বিন-কার্তিক মাসে চালের মূল্য স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
তবে সচেতন ভোক্তারা জানিয়েছেন, উৎপাদন মৌসুমকে সামনে রেখে চালের মূল্য বৃদ্ধির একাধিক কারণ থাকতে পারে। মিলার এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা মাঠ পর্যায় থেকে খবর নিয়ে যখন বুঝতে পারে যে ধানের উৎপাদন আশাব্যঞ্জক নয় তখনই তারা চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। ইতোপূর্বে কয়েকটি উৎপাদন মৌসুমে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে মিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। দ্বিতীয় কারণ হল পুরান চালের মজুদ শেষ হয়ে গেলে চালের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু নরসিংদী শহরসহ জেলার কয়েকটি বাজারে খবর নিয়ে জানা গেছে পুরান চাল আমদানিতে কোনো ঘাটতি নেই। চালের সরবরাহ আগের মতোই রয়েছে। খুচরা ছাটাই করতে যেমন চালের অভাব নেই, তেমনি পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের মজুদ ভান্ডারেও চালের কোন অভাব নেই। বিনা কারণে আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বস্তা প্রতি ২০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে সব বাজারে চালের মূল্য সমান হারে বাড়েনি। কোথাও বস্তা প্রতি ২০০ টাকা কোথাও ১০০ টাকা আবার কোথাও ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সচেতন গ্রাহকদের মতে, এই অসমান মূল্যবৃদ্ধি প্রমাণ করে যে মুনাফাখোররা ফটকাবাজির ব্যবসা করার জন্য চালের মূল্য বাড়িয়েছে।

এদিকে আমন চাষের সাথে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে ধানের উৎপাদন খুব একটা আশাব্যঞ্জক নাও হতে পারে। বিশেষ করে চলতি বছর মেঘনা অববাহিকায় স্বাভাবিক বর্ষা হয়নি। মেঘনা ও এর শাখা নদী সমূহের কূল ছাপিয়ে চড়ায় পানি ওঠেনি। যার ফলে সেচ প্রকল্প বহির্ভূত এলাকাগুলো আমন চাষের আওতায় আসেনি। আমন চাষের অনেক জমি এ বছর অনাবাদি রয়ে গেছে। আমন ধান দেশের প্রধান ফসল হলেও আমনের অনেক জমি হাউজিং কোম্পানিগুলোর দখলে চলে গেছে। এসব জমিগুলো পড়ে রয়েছে অনাবাদি।
এছাড়া দেশে গভীর পানির কোন ধান উদ্ভাবিত না হওয়ার কারণে আমন মৌসুমে হাজার হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যায়। যার ফলে কোন আমন মৌসুমে কাঙ্খিত উৎপাদন আশা করা যায় না। আর সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে মুনাফাখোর পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর চালের মূল্য নিয়ে ফটকাবাজি ব্যবসা করে জনগণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

এ বছর আমন মৌসুম অতি সন্নিকটে। নতুন ধান ঘরে ওঠার একমাসও বাকি নেই। এ অবস্থায় বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি একটি অশুভ ইঙ্গিত। ইতোপূর্বে আমন ধানের কয়েকটি উৎপাদন মৌসুমেও চালের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। সরকার শত চেষ্টা করেও চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পারেনি। এ বছর হঠাৎ করে চালের মূল্য বৃদ্ধি অতীতের কয়েকটি উৎপাদন মৌসুমে ধানের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কোন ইঙ্গিতবহ কিনা তা সময়ই বলে দেবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন