মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নতুন ঠিকাদারদের সুযোগ দেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

একনেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ প্রকল্পের অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ঠিকাদারদের কাজে সুযোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনটা এমন যে, বড় বড় ঠিকাদার ছাড়া নতুন, ছোট ঠিকাদাররা সুযোগ বেশি পায় না। এটাকে একটু সহজ করেন, যাতে করে আরও কেউ ঢুকতে পারে এবং প্রতিযোগিতা হয়। তিনি বলেন, সবাই যেন উন্নয়ন কাজে অংশ নিতে পারে, তবে মান ঠিক রেখে। কাজ জানে না এমন কাউকে কাজ দেয়া যাবে না।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে একনেক সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের ১৯তম একনেক সভার সভাপতিত্ব করার সময় এই নির্দেশ দেন। সভায় ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার পর মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন সহজ করার কাজ চলছে। এটা হয়ে গেলে নতুন নতুন প্রতিযোগিতা হবে এবং নতুন ঠিকাদাররা ঢোকার সুযোগ পাবে।

খুব আগ্রহ নিয়ে প্রায়ই প্রকল্প পাস করা হয়, দালান-কোঠা নির্মাণ করা হয়। এগুলো হওয়ার পর পরবর্তীতে যেসব কাজ থেকে জনগণ সরাসরি এসবের সুবিধা ভোগ করবে, তখন আর আগ্রহ দেখা যায় না সংশ্লিষ্টদের। তাই যে আগ্রহ নিয়ে প্রকল্প পাস ও দালান- কোঠা নির্মাণ করা হয়, একই আগ্রহ নিয়ে পরবর্তী কাজও করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এম এ মান্নান বলেন, আগ্রহ নিয়ে প্রায়ই প্রকল্প পাস করা হয়, দালান-কোঠা নির্মাণ করা হয়। তারপরে আর বাকি কাজ হয় না। হয় জনবল নাই, নয় যন্ত্রবল নাই। যে আগ্রহ নিয়ে আপনারা প্রকল্পের কাজ শেষ করেন, একই আগ্রহ নিয়ে আপনারা (সংশ্লিষ্টরা) দয়া করে বাকি কাজগুলো করবেন। যাতে জনগণ যে সেবা পাওয়ার কথা, সেখান থেকে সেটা তারা পায়।

নিজের বক্তব্য তুলে ধরে এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ। এটার সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। আমার নিজ এলাকায় এ রকম কিছু স্থাপনা আছে। তড়িঘড়ি করে স্থাপনা কাজ শেষ করা হয়েছে, তারপরে আর কাজ হয় না।

নতুন সড়কের চেয়ে মেরামতের দিকে জোর দিতে হবে
নতুন সড়ক নির্মাণের চেয়ে সড়ক মেরামত, মান-উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন থেকে সাবধানতার সঙ্গে সড়ক করতে হবে। কারণ, প্রচুর সড়ক হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, নতুন সড়ক নেয়ার আগে আমাদের চিন্তা করতে হবে। যেসব সড়ক আমাদের আছে বিশেষ করে আন্তঃজেলা সড়ক, এগুলোকে আমরা বিশ্বমানের না হলেও আঞ্চলিক মানের করতে চাই। চার লেন করতে চাই, পুরু করতে চাই, যাতে সামান্য বৃষ্টিতে না ভেঙে যায়। এজন্য এখন থেকে আমাদের মনোযোগ থাকবে সড়কের উন্নয়ন ও মেইনটেন্যান্সের দিকে। নতুন সড়ক নেব না, তা বলছি না। খুব সাবধানতার সঙ্গে নেয়া হবে। আর বর্তমানগুলোকে আমরা উন্নত করব। এটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত।

যত্রতত্র সেতু না করার নির্দেশ
‘যত্রতত্র ব্রিজ কইরেন না, সাবধানে ব্রিজ কইরেন’, প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করেছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, গ্রামে-গঞ্জে আমরা অসংখ্য সেতু বানাচ্ছি, কিন্তু অহেতুক যেন না বানাই। এতে পানি চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হয়। নদীগুলো এমনি ভরে যাচ্ছে, সেতু নির্মাণ করলে পানি প্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হয়, পলি পড়ে আরও ভরে যায়। আপনারা সাবধানে সেতু বানাবেন, অহেতুক বানাবেন না। যেখানে নদ-নদী সোজা-সরল করার প্রয়োজন আছে, সেগুলো তা করার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলে জানান মন্ত্রী।

খুলনা-যশোর সড়ক নিয়ে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী
খুলনা-যশোর সড়ক নির্মাণ নিয়ে একনেক সভায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কাজটি দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, খুলনা-যশোর সড়কটা তার কাছে খুবই বিরক্তিকর একটা সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কের কাজ ফেলে রাখা হয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন যে, ওবায়দুল কাদেরসহ এটার সঙ্গে যারা যারা আছেন, সবাই এটার কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করেন। মানুষের অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, এটা আমার জানার বাইরে ছিল। আমি জেনে গেলাম। আমি খোঁজ নেব।

এদিকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার খরচ করবে ৪ হাজার ৪৩৯ কোটি ৮৬ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সভা শেষে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের রয়েছে ৩৬৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘যশোর (রাজারহাট)-মনিরামপুর-কেশবপুর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৭৫৫) উন্নয়ন’ প্রকল্প, ৭১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ফেনী- সোনাগাজী-মুহুরী প্রকল্প সড়কের ৩০তম কিলোমিটারে ৩৯১ দশমিক ৩৫ মিটার দীর্ঘ মুহুরী সেতু এবং বক্তারমুন্সী-কাজিরহাট-দাগনভূঁঞা সড়কের ১৩তম কিলোমিটারে ৫০ দশমিক ১২ মিটার দীর্ঘ ফজিলাঘাট সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প এবং ৩৬১ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কক্সবাজার জেলার একতাবাজার থেকে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি মহাসড়ক (জেড-১১২৫) উন্নয়ন’ প্রকল্প।

এছাড়া একনেক সভায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ৭৯ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘আগারগাঁওস্থ শেরেবাংলা নগরে পর্যটন ভবন নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১২০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সিলেট জেলার সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় দশগ্রাম, মাহতাবপুর ও রাজাপুর পরগনা বাজার এলাকায় সুরমা নদীর উভয় তীরে ভাঙন হতে রক্ষা’ প্রকল্প এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা (পিপিএস) নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন