পূর্ব প্রকাশিতের পর
হঠাৎ এক ব্যক্তি নামাযের মধ্যে হাঁচি দিলো। [এবং আল হামদুলিল্লাহ বললো] প্রতি উত্তরে আমি জোরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বললাম। এটা শুনে মুসল্লাীগণ আমার দিকে তাকাতে লাগল। এ অবস্থা দেখে আমি বলে উঠলাম আপনাদের কি হয়েছে? আপনারা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? তখন তারা তাদের উরুতে হাত চাপড়িয়ে আমাকে শান্ত ও চুপ থাকতে ইঙ্গিত করল। আমি চুপ হয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরেয়ে নাময শেষ করলেন। আমার মা বাবা তাঁর উপর উৎসর্গ হোক। তার মতো এত উত্তম ও সুন্দর শিক্ষাদানকারী কোনো শিক্ষক তাঁর পূর্বেও কাউকে দেখিনি। তাঁর পরেও দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে না প্রহার করলেন, না তিরস্কার করলেন, না ধমক দিলেন; তিনি বললেন, আমাদের এই নামায মানুষের কথাবার্তার উপযোগী নয়। [অর্থাৎ নামাযে কথা বলা যায় না] বরং নামায তো হলো, তাসবীহ, তাকবীর ও তেলাওয়াতে কুরআন।’ [মুসলিম, হাদীস: ৫৩৭; আবু দাউদ, হাদীস: ৯৩০] আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ছিলেন মানব ও মানবতার মহান আদর্শ শিক্ষক। মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর উসওয়া বা আদর্শ। ইতিহাস সাক্ষী, যে জাতি যে কালেই তাঁর সে অনুপম সীরাত ও সুমহান আদর্শ অনুসরণ করেছে সফলতা তাদের পদচুম্বন করেছে। আজও তা আপন আলোয় দ্যদীপ্যমান। হালে অনেক অমুসলিম রাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের শিখানো কোমল ও সহনশীল পন্থ অবলম্বন করছে। এর সুফলও তারা পেয়েছে। আমাদের দেশেও হাতে গুণা কয়েটি মাদরাসায় এ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে আমরা জানি। এতে তারাও বেশ সুফল পাচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। কিন্তু বড় আফসোসের ব্যাপার হলো, আমাদের প্রায় সকলের অবস্থা এর সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছাত্রদের সামান্য ভুলেই চটে গিয়ে গরু-ছাগলের মতো করে বেধড়ক পেটাতে থাকি কিংবা নানা ধরনের কটুবাক্যে তাদের জর্জিত করি বা রাজ্যের সকল রাগ তাদের উপর এক সঙ্গে ঝেড়ে ফেলে। এমনটি কাম্য হতে পারে না। কারণ মাত্রাজ্ঞান হারিয়ে বাড়াবাড়ি করে ফেললে লাভের পরিবর্তে ক্ষতির পাল্লাই ভারী হয়ে উঠবে। দুনিয়া-আখিরাত উভয় জাহানেই তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে বৈ কি। রাষ্ট্রের পক্ষ হতে এ ব্যাপারে যথেষ্ঠ কড়া বার্তা দেওয়া আছে। শিক্ষার্থীকে প্রহারের কারণে অনেক শিক্ষককে জেল-হাজতও খাটতে হয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। তাই এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকা উচিত। এ দিকে এটা হুকুকুল ইবাদের অন্তর্ভুক্ত। তাই পরকালে এর জন্য জবাবাদিহি করতে হবে। আমরা এমন দাবি করছি না যে, শিক্ষায়-দীক্ষায় কেবল আদর-সোহাগ ও কোমল আচরেণর দ্বারাই ষোলআনা সুফল পাওয়া যাবে। কারণ শয়তানের প্ররোচনা, পরিবেশ-পরিস্থিতি, প্রবৃত্তির তাড়না ইত্যাদির কারণে শিক্ষার্থী বিপথগামী হতে পারে। তাই প্রয়োজনস্থলে শাসন না করাও এক ধরনের শিথিলতা। এতে অন্যায়কারী প্রশ্রয় পায় এবং বেআদব ও স্পর্ধিত হয়ে উঠে। বস্তুত কোনোও ধরনের প্রান্তিকতা কল্যাণকর নয়। তাই বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির পথ পরিহার করে আমাদের হাটতে হবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাতলানো মধ্য পন্থায়। স্বামী হিসাবেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যবহার ছিল অনুপম ও অতুলনীয়। তাবৎ দুনিয়ার জন্য অনুকরণীয়। হযরত সাওদা রা.। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন জীবনসঙ্গিনী। সকল মু’মিনের আম্মাজান। সেদিন তার ঘরেই ছিল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর থাকার পালা। ঐদন হযরত আয়েশা রা. রাসূলে আকরাম আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য কিছু হালুয়া পাকিয়েছিলেন। তাই নিয়ে তিনি উপস্থিত হলেন হযরত সাওদা রা. এর ঘরে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে। পাশেই বসা ছিলেন হযরত সাওদা রা.। তাই তাকে বললেন, আপনিও খান। হযরত সাওদা রা. ভাবলেন, আজ তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমার ঘরে থাকার পালা। তো আয়েশা হালুয়া রান্না করে এখানে নিয়ে আসবে কেন? একথা ভেবে হযরত সাওদা রা. স্পষ্টভাবে বলে দিলেন, না, আমি খাবো না। হযরত আয়েশা রা. বললেন খান, নইলে কিন্তু হালুয়া আপনার মুখে মেখে দিব। এ কথা বলে মুখে মেখে দিলেন। হযরত সাওদা রা. হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট অভিযোগ পেশ করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আয়েশা আমার চেহারায় হালুয়া মেখে দিয়েছে। অভিযোগ শুনে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনে কারীমের এই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন- ‘কেউ যদি তোমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে, তুমিও তার সাথে সেরূপ আচরণ করতে পার।’ সুতরাং সে যখন তোমার মুখে হালুয়া মেখে দিয়েছে, তুমিও তার মুখে সেরূপ হালুয়া মেখে দিতে পার। তারপর সাওদা রা. একটু হালুয়া হাতে নিয়ে হযরত আয়েশা রা. এর চেহারায় মেখে দেন। [মাজমাউয যাওয়াইদ, হায়সামী: ৪/৩১৬] কি অদ্ভুত দৃশ্য! হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুই জীবন সঙ্গিনী। একে অন্যের চেহারায় হালুয়া মাখামাখি করছেন, আর এসব ঘটছে স্বয়ং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে! আর তিনি তা দেখছেন আনন্দের সাথে! সেই মহান ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখেন। বাক বিনিময় হয় আল্লাহর সাথে। ওহীর আগমন হয় যার কাছে নিয়মিত। ফিরিশতাদের যাতায়াত হয়। আল্লাহর কাছে যার চেয়ে শ্রেষ্ঠ সত্তা এই জমিনের বুকে নেই। যিনি সৃষ্টির সর্বসেরা, তিনিও তার স্ত্রীদের সাথে এতটা মিশুক আচরণ করেন। তাদেরকে খুশী করতে তিনিও এতটা যতœবান, সচেষ্ট। তাহলে আমরা কোন ছার! মহানবী সালল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইন্তিকাল করেন, তখনও তার নয় জন স্ত্রী ছিলেন। তারাও তো মানুষ ছিলেন। আকাশ থেকে নেমে আসা কোনো ফিরিশতা ছিলেন না বা ভিন গ্রহের কোনো প্রাণীও ছিলেন না। আমাদের মতোই রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন। সতীনদের মাঝে যেসব ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক; যেসব ছোট-খাটো মতের অমিল হয়ে থাকে, তা তাদের ক্ষেত্রেও হয়েছে। কিন্তু হযরত আয়েশা রা. বলেন, মহানবী সালল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা জীবনে একবারের জন্যও কোনো স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেন নি। বরং ঘরে প্রবেশকালে তার পবিত্র চেহারায় মুচকি হাসির স্নিগ্ধতা লেগেই থাকতো। এতে প্রমাণিত হয়, হাসি মুখে ঘরে প্রবেশ করা সুন্নত। রুদ্রমূর্তি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা সুন্নাত নয়; বরং তা মহানবী সালল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত ও আদর্শের খেলাফ। [ইসলাহী খুতুবাত: ২/ ২১৬-২১৭] কিন্তু আমরা কি করছি? একটুতেই রেগে গিয়ে স্ত্রীর গায়ে হাত উঠাই বা তাদের সাথে দাসী-বাদীর মতো দুর্ব্যবহার করি। যা একজন মুমিন ও রাসূলুল্লাহ সালল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শের প্রকৃত অনুসারী কখনো করতে পারে না। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. এর সম্পর্কে যখন অপবাদ রটানো হল, তখন হযরত আয়েশা রা. এর প্রতিটি মুহূর্ত যাচ্ছিল কিয়ামতসম। উৎকন্ঠিত ছিলেন স্বয়ং রাসুলে আকরাম সালল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কথাটি নিয়ে মানুষের মাঝে কানাঘুষা চলছে। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতিতে রাসূলুল্লাহ সালল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার হযরত আয়েশা রা. কে বললেন, আয়েশা দেখ, কথা হচ্ছে, তোমাকে এতো উৎকন্ঠিত ও চিন্তিত হবার প্রয়োজন নেই। তুমি যদি বেকসূর নির্দোষ হও, তবে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তোমার পবিত্রতার কথা জানিয়ে দিবেন। আল্লাহ না করুন, তোমার অসাবধানতায় কোনো ভুল ত্রæটি হয়ে থাকলে আল্লাহর দরবারে তওবা কর, ক্ষমা প্রার্থনা কর। আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিবেন। নবীজী সালল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আয়েশা রা. কে শান্তনা দেয়ার লক্ষ্যে সম্ভাব্য দু’টি দিক তার কাছে তুলে ধরলেন। কিন্তু কেন তিনি সম্ভাব্য দু’টি দিকের বর্ণনা দিলেন, এটা ছিল হযরত আয়েশা রা. এর জন্য বড়ই কষ্টকর, অসহ্য ব্যাপার। এতে বুঝা যায়, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মনেও ক্ষীণ সন্দেহের আভাসের উদ্রেক ঘটেছিল। তিনিও মনে করেছিলেন, হযরত আয়েশা রা. থেকে এ ধরণের বিচ্যুতি ঘটে যাওয়া অসম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ সালল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই ক্ষীণ সন্দেহ হযরত আয়েশা রা.কে দারুণভাবে মর্মাহত করে। তাই তিনি বিধ্বস্ত মনের আর্তি সহ্য করতে না পেরে শুয়ে পড়েন। ঠিক তখনি আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হয়। এতে হযরত আয়েশা রা. কে নির্দোষ ঘোষণা দেয়া হয়। তখন হযরত আবু বকর রা.ও ঘরে উপস্থিত ছিলেন। আয়াত শ্রবণে রাসূলে আকরাম সালল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত আরূ বকর রা.খুবই প্রফুল্লিত হোন এবং মন্তব্য করেন, ইনশাআল্লাহ আজ থেকে এই অপবাদ সম্পূর্ণ মিটে যাবে। এ সময়ে আবূ বকর রা. আয়েশা রা. কে ডেকে বললেন, আয়েশা! শুনো, সুসংবাদ শুনো, আল্লাহ তা’আলা তোমার পবিত্রতার বর্ণনা দিয়ে আয়াত নাযিল করেছেন। এবার উঠো! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম করো। কিন্তু হযরত আয়েশা রা. উঠছেন না। চোখ বুজে আছেন বিছানায় নির্বাক হয়ে। তিনি তার সম্পর্কে অবতীর্ণ আয়াত শুনলেন, যাতে তার পরিত্রতার কথা আলোচনা করা হয়েছে এবং শুয়ে শুয়েই বললেন, এতো আল্লাহ তা’আলার দয়া ও অনুকম্পা যে, তিনি আমাকে নিষ্কলঙ্ক প্রমাণ করেছেন। তাই আমি আল্লাহ ছাড়া আর কারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো না। কৃতজ্ঞতা জানাতে হলে তাকেই জানাবো। যেহেতু আপনাদের ধারণা তো ছিল, আমি অন্যায়-অপরাধ করে বসে আছি। (ইবনে কাছীর: ৬/১৯-২৫, সূরা নূর: আয়াত ১১-২২; বুখারী, হাদীস: ২৬৬১) হযরত আয়েশা রা. দৃশ্যত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে দাড়াতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু এতে তিনি কিছু মনে করেন নি। কারণ, এ ছিল জীবন সঙ্গিনী হযরত আয়েশা রা. এর অভিমান। দাম্পত্যজীবনের এই মান-অভিমান আন্তরিকতারই বহিঃপ্রকাশ। নবী জীবনের এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে, দাম্পত্য জীবন শুধু শাসক শাসিতের জীবন নয়; বরং তা প্রেমময় বন্ধুত্বের অনস্বীকার্য অংশও বটে। আর ভালোবাসার দাবিতে স্বামীদেরকেও সইতে হবে স্ত্রীদের মান অভিমান। হ্যাঁ, একান্ত স্পষ্ট কোনো বিচ্যুতি ঘটে গেলে, সে ক্ষেত্রে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাগও করতেন। তাই বলে শাসকীয় ভঙ্গিতে চটে যেতেন না এবং তাদের গায়ে হাত উঠাতেন না। আমরা সাধারণত যেটা করে থাকি। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হবে একান্ত মধুর, বন্ধ্ত্বুপূর্ণ। এ ক্ষেত্রেও রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ছিলেন অতুলনীয়। মর্যাদার এই চুড়ান্ত আসনে আসীন হওয়া সত্তে¡ও স্বীয় জীবন সঙ্গিনীদের সাথে আন্তরিকতার কোনোই কমতি ছিল না। বরং মন খুশী করার জন্য রাতের বেলা হযরত আয়েশা রা. কে প্রাচীন আরবের এগার রমণীর গল্প শুনিয়েছিলেন। বলেছেন- আয়েশা, শুন ইয়ামনে ১১ জন মহিলা ছিল। একবার তারা সিদ্ধান্ত করলো, তারা সবাই নিজ নিজ স্বামীর অবস্থা বর্ণনা করবে। তাদের স্বামী বাস্তবে কেমন, তাই বলবে খোলামেলা ভাবে। তারপর তারা নিজ নিজ স্বামীর অবস্থা তুলে ধরে সুন্দর উপস্থাপনায়। এভাবে তিনি বিশাল কিচ্ছাটি হযরত আয়েশা রা.কে শুনিয়েছিলেন। (বুখারী, হাদীস: ৫১৮৯; শামায়েলে তিরমিযী, পৃষ্টা- ৯, হাদীস উম্মে যারআ) একেই তো বলে আদর্শ দাম্পত্যজীবন! শশুর হিসাবেও তাঁর আচরণ ছিল অনুপম ও অনুকরণীয়। একবার আলী রা. ফাতেমা রা. এর সাথে রাগ করে মসজিদে গিয়ে শুয়ে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গিয়ে দেখলেন, আলী রা. এর এক পাশের চাদর শরীর থেকে পড়ে গিয়ে শরীরে মাটি লেগে গেছে। এটা দেখে তিনি তার শরীর থেকে মাটি ঝেড়ে দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন, উঠো, হে আবু তুরাব! [মাটির পিতা]। উঠো, হে আবু তুরাব! [বুখারী, হাদীস:৪৪১] এভাবে আপনি মানব জীবনের যে অঙ্গনের দিকেই তাকাবেন, সেখানেই দেখবেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সীরাত ও উত্তম আদর্শ আপন আলোয় দ্যদীপ্যমান। আপনি যদি কোনো কন্যার জনক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি দেখুন, ফাতেমাদের জনক হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পিতা হিসাবে কি আচরণ করতেন। আর যদি হয়ে থাকেন কোনো রাষ্ট্রের শাসক, তাহলে ঐ যে তাকিয়ে দেখুন, মদীনার শাসক হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। আর যদি হয়ে থাকেন ব্যবসায়ী, তাহলে দেখুন, সিরিয়ার ব্যবসায় হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। এক কথায় মানব জীবনের সকল অঙ্গনেই আমারা খোঁজে পাবো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উসওয়ায়ে হাসানা বা উত্তম আদর্শ। এ জন্য মুমিন মাত্রই প্রয়োজন জীবনের সকল অঙ্গনেই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সীরাত, উসওয়া বা আদর্শকে মজবুতভাবে আকড়ে ধরা। তাহলেই কেবল একজন মুমিন ইহপার ও পরপারে পান করতে পারবে শান্তি ও সফলতার অমিয় সুধা। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সীরাত ও আদর্শের আলোয় আলোকিত হোক আমাদের জীবন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন