শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

| প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দুর্নীতির অভিযোগে ভাইস চ্যান্সেলরের পদত্যাগের দাবীতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ নামক সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচির উপর আকস্মিক হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর মঙ্গলবার দুপুরের হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয় বলে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়লেও ভিসির অপসারণ বা আন্দোলনরতদের সাথে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার ইতিবাচক কোনো তৎপরতা দেখা না গেলেও ছাত্রলীগের হামলার পর ভিসিকে প্রকাশ্যে আসতে দেখা গেছে এবং তিনি আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। হামলার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আকস্মিক হামলায় আন্দোলনকারিরা হতাহত, ছত্রভঙ্গ ও হতচকিত হয়ে পড়লেও হামলার পর আন্দোলন আরো উত্তাল হয়ে উঠার খবর পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেটের জরুরী সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং ২ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের ঘোষণা দিলে ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনকালীদের সাথে যোগ দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শুধু পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের প্রতিষ্ঠান নয়। আমাদের জাতীয় রাজনীতির গৌরবময় ঐতিহাসিক অর্জনগুলোর প্রায় সবই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন ও ত্যাগের অসামান্য ভ‚মিকায় সমুজ্জ্বোল। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জাতির সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবদান রাখবে, এটাই স্বাভাবিক। সেখানে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকান্ডে যদি কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং সে সব দুর্নীতির সাথে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা থাকে, তার বিরুদ্ধে সচেতন ও বিবেকবান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী ভূমিকা থাকবেই। ছাত্রলীগের সাবেক দুই শীর্ষ নেতার অপসারণের অন্যতম কারণ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছিল। ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম অর্থ লেনদেনের কথা স্বীকার করেছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হলেও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ভিসি’র বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের ডাক দেন। আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা বা সমঝোতার কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়কে অকার্যকর করে রাখা এবং অবশেষে ন্যক্কারজনক হামলার পর অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবিভাবকতুল্য। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ভিসি দুঃখ প্রকাশ না করে ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা লজ্জাজনক নজির সৃষ্টি করেছেন। দেশের শীর্ষ একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছ থেকে এমন আচরণ অনাকাক্সিক্ষত ও অস্বাভাবিক।
আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিক এক দশকের শাসন ক্ষমতায় ছাত্রলীগের দুষ্কর্ম-দুনার্ম যেন সরকারের পিছু ছাড়ছে না। সেই বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে অসংখ্য হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী ঘটনায় সরকারের অনেক প্রসংশনীয় কাজ ও জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ¤øান হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে এক দশক আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবকত্ব পরিত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও স্থানীয় ছাত্রলীগের একেকটি অঘটনের পর অভিযুক্তদের বহিষ্কার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়া হলেও এই ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটির নামের উপর কলঙ্ক লেপন একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা এবং গত সপ্তাহে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে পানিতে ফেলে দেয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের একশ্রেণীর নেতাকর্মীর অপকর্মের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। ইতিপূর্বে কোটা বিরোধী আন্দোলনে যেভাবে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষেও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ একই ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তবে হামলা করে কখনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কোনো যৌক্তিক আন্দোলন দমন করা যায়নি। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ রাখা কোনো সমাধান নয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত দুর্নীতির উপযুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে দুর্নীতিবাজদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক। আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সাথে জড়িত ও দায়ী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
jack ali ৭ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:২২ এএম says : 0
Oh ----- Muslim---Still there is time to wake up---and punish this criminal as soon as possible---if not we will not be able to live with dignity---- these government are criminal no doubt-----they are torturing people around the country.
Total Reply(0)
Nadim ahmed ৭ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:৩৫ এএম says : 0
This VC, in the 1st place, is a teacher. So because of a teacher the students are badly affected in their study. So she disqualified as a teacher and she should immediately resign as a teacher and as VC. Secondly, she supported the terrorist act of Chatro League. So she is done with enough that she is not in favor of education, students and teachers. She proved that she is in favor of terrorism and against the nation. So she should be gone through court trial.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন