বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

শেখ হাসিনা আরও একবার খোকার কাছে পরাজিত হলেন -রিজভী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৯ পিএম

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ভলোবাসায় এই দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা। তবে দেশবাসী বেদনার্ত যে, এদেশের বীর সন্তান সাদেক হোসেন খোকা জীবনবাজি রেখে যে দেশটা স্বাধীন করতে বীরোচিত ভূমিকা রেখেছিলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিদেশে মারা যাওয়ার পর তিনি নিজ দেশে ফিরলেন ‘রিফিউজি’ কিংবা ‘রাষ্ট্রীবিহীন নাগরিকে’র মতো ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে যারা এখন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আছেন, তারা সাদেক হোসেন খোকাকে পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ দিতে অস্বীকার করেছে। দেশের জনগণ বিশ্বাস করে এই দেশে এখন শেখ হাসিনার কথা ছাড়া কিছু হয় না। তাই শেখ হাসিনার চাননি বলেই ২০১৭ সালে থেকে চেষ্টা করেও মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সাদেক হোসেন খোকা তার বাংলাদেশী পাসপোর্টের মেয়াদ নবায়ণের সুযোগ পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। 
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করেই জাতীয় রাজনীতিতে প্রবলভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন  সাদেক হোসেন খোকা। আর এবার তার অন্তিম যাত্রায় অসংখ্য মানুষের শোকাহত উপস্থিতি প্রমান করে শেখ হাসিনা তার কাছে আরো একবার পরাজিত হয়েছেন। এই সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করে স্বাধীনতার স্পিরিটকে ক্রমশ: ফিকে করছে। কিন্তু দেশের মৃত্তিকার সন্তান মরহুম সাদেক হোসেন খোকার জানাযায় লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে প্রমান হয়েছে সরকার চক্রান্ত করলেও জনগণের হৃদয়স্পর্শী আবেগকে স্তব্ধ করে রাখা যায় না।
প্রধানমন্ত্রীর হুমকির কন্ঠ আইয়ুব-ইয়াহিয়া-হিটলার-মুসোলিনির কণ্ঠের প্রতিধ্বনি মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, মিডনাইট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে যারা দুর্নীতির অভিযোগ আনবে, তাদের সে অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে, প্রমাণ করতে না পারলে মিথ্যা অভিযোগকারীদেরকে শাস্তি পেতে হবে।’
তিনি বলেন, এটা স্পষ্টত যে,  ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে স্বয়ং ছাত্রলীগ। ভিসি কিভাবে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বিতরণ করেছিলেন তা গণমাধ্যমে বিশদভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রলীগের পদচ্যুত সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগ নেতারা ভিসি এবং ভিসির পরিবারের বিরুদ্ধে টাকা লেনদেনের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন সেটিও গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রীতিধন্য জাবির ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং গতকাল প্রধানমন্ত্রী ভিসিকে রক্ষা করতে বক্তব্য দিয়ে দুর্নীতির পক্ষে সুষ্পষ্ট সাফাই গাইলেন। 
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মিডনাইট সরকারটি দুর্নীতির বহু দৈত্যাকার কেলেঙ্কারীতে নিমজ্জিত। এখন কেউ যাতে তার সরকার ও প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে না পারে এ জন্যই তাঁর এই হুমকি ধামকি। যিনি বা যারা অভিযোগ উত্থাপন করবেন, তাদেরকেই যদি দুর্নীতির প্রমাণ হাতে নিয়ে আন্দোলন করতে হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কাজ কি ? আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনের কাজ কি শুধু বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখা ? কারণ শেখ হাসিনার আমলে মৃত্যু জীবনের ছায়াসঙ্গী হয়ে আছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৬ নভেম্বর বুধবার লন্ডনে দলীয় এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন। ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ৭ নভেম্বরের চেতনা হচ্ছে, যেকোনো অবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষে থাকা, বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে থাকা, জনগণের স্বার্থের পক্ষে থাকা, সর্বোপরি গণতন্ত্র, সাম্য, মানবাধিকার, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে থাকা। যারা এর বিরুদ্ধে তারা বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী অপশক্তি। তারা কখনোই বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি নয়। বর্তমান জনম্যান্ডেটহীন সরকার নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে দেশে-বিদেশে নানারকম চুক্তি করছে, কর্মকান্ড চালাচ্ছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট করেই বলেছেন, বিএনপির নীতি কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয় বরং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের যেসব নীতি ও কৌশল বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী বিএনপি সেইসব নীতি ও কৌশলের বিরুদ্ধে। ভারত কিংবা যে দেশই হোক, বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী কোনো চুক্তি কিংবা কর্মকান্ড হলে বিএনপি অতীতের মতো এখনো কিংবা ভবিষ্যতেও অবশ্যই বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে দাঁড়াবে। দেশের জনগণের স্বার্থের পক্ষে দাঁড়াবে। এটাই বিএনপির নীতি। বিনাভোটের সরকার গত একদশকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছে তার প্রতিটি চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবিও জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসব চুক্তির মধ্যে যেসব চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী সেসব চুক্তি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি। 
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান মিডনাইট সরকারের সাম্প্রতিক কয়েকটি চুক্তির কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেছেন, টাওয়ার বসিয়ে সমুদ্র উপকূলে ভারতের নজরদারির সুযোগ দেয়ার চুক্তিতে বাংলাদেশের কি লাভ সেটা জনগণকে জানতে দিতে হবে। বিদেশ থেকে এলপিজি এনে দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি করে এটি ভারতে রপ্তানি করলে বাংলাদেশের কি লাভ সেটি জনগণের সামনে স্পষ্ট করতে হবে। যার সঙ্গেই যে চুক্তিই হোক, আগে নিশ্চিত করতে হবে বিনিময়ে কি পেলো বাংলাদেশ, কি পাচ্ছে বাংলাদেশ। তারেক রহমান বলেছেন, ভারতের সঙ্গে করা অসম এবং অন্যায্য চুক্তির প্রতিবাদ করায় একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী বিএনপি সম্পর্কে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। তিনি বলেছেন, আত্মমর্যাদাহীন এইসকল ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কার দালালি করছে জনগণ জানতে চায়। বিএনপি মনে করে, একটি দেশের সরকারের সঙ্গে আরেকটি দেশের সরকারের সম্পর্ক হবে ইস্যুভিত্তিক। সম্পর্ক হবে পারপস্পরিক সহযোগিতা, স্বার্থ রক্ষা এবং সমমর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। অথচ নিশিরাতের সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলছেন ভারতের সঙ্গে নাকি বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মতো। বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের এ ধরণের সম্পর্ক উদ্ভট, অমর্যাদাকর এবং দেশের জন্য অবমাননাকর।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তারেক রহমান আরও বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে নিয়ে এখনো চলছে দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র। দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আহবান, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই রাষ্ট্রটিকে আমরা ব্যর্থ করে দিতে পারিনা। এই দেশটা কোনো ব্যক্তির নয়, কোনো দলের নয়, এই দেশটা আমার-আপনার-আমাদের সকলের। এই দেশটাকে রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে. আসুন দেশটাকে বাঁচাতে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। যে যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখি। আওয়ামী জাহেলিয়াতের কবল থেকে দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে এই নভেম্বরের চেতনায় তাই আবারো আমাদের জেগে উঠতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।
 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
DORRA ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩৩ পিএম says : 0
তারেক রহমান কি বলেছে তা কেন এক জন '' লো রেঙ্কিং '' অফিস হোল্ডার বলে ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন