শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এবার বাড়ল চালের দাম

সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫-৬ টাকা

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

প্রায় ২ মাস থেকে দেশে পেঁয়াজের দাম লাগামহীন। ১৫০ টাকা মূল্যেও ১ কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চড়ামূল্যে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে নাকাল দেশবাসী। দেশব্যাপী ১ মাস ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তাই পেঁয়াজ। পেঁয়াজের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা তখন আরেকটি দুঃসংবাদ হয়ে এলো চালের দাম। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে বেড়েছে চালের দাম। একই সঙ্গে ধানের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। সবচেয়ে বেশি মূল্য বেড়েছে মিনিকেট চালের। মোকাম মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
হঠাৎ করে দাম বাড়ার পেছনে কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের যুক্তি, মৌসুম শেষ। তাই সরবরাহ কমে আসায় চালের দাম বেড়েছে। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী মিলারদের কারসাজিকে দায়ী করছেন। আবার মিলাররা বলছেন, সরকার আমন মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহের ঘোষণা দেয়ায় তাদের বাড়তি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এ দিকে, কৃষকের মাঠে এখন আমন ধান রয়েছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক জমিতেই আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে আমন ধানের নতুন চাল বাজারে উঠবে শিগগিরই।

রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও বাদামতলী এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে তাদের বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। মোকাম থেকে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার চাপ থাকায় তারাও বর্ধিত মূল্যে চাল বিক্রি করছেন।
এ বাজারের মেসার্স তাসলিমা রাইস এজেন্সির বিক্রয় প্রতিনিধি বাচ্চু মিয়া বলেন, গত এক থেকে দেড় সপ্তাহ আগেও তাদের বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। যা গতকাল শনিবার বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা। আর ২৮-২৯ টাকার বিআর-২৮ (লতা নামে পরিচিত) চাল গতকাল ৩০-৩১ টাকা, ২৮ থেকেত ৩০ টাকা বিআর-২৯ চাল গতকাল ৩০-৩১ টাকা এবং ৫০ থেকে ৫২ টাকার নাজিরশাইল গতকাল ৫৪-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মিনিকেট চালের দাম সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যে পরিমাণ সিদ্ধ চালের ব্যবহার হয়, তার বেশির ভাগই মিনিকেট। মিনিকেট চাল সব সব শ্রেণীর মানুষ ব্যবহার করেন। আর এ কারণে অসাধু মিল মালিকরা এই চালের সঙ্গে বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ চাল মিশিয়ে বিক্রি করছেন।
বাদামতলী এলাকার মেসার্স মুক্তা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী দীন মোহাম্মদ স্বপন বলেন, বাজারে যত পরিমাণ চালের ব্যবহার হয়, তার ৬০ শতাংশই মিনিকেট। আর এ কারণে মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাসমতি চাল ছাড়া অন্যান্য চাল আমদানি সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। আর এ কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে। তবে চালের দাম যে হারে বেড়েছে সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি বলে জানান তিনি।

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, মিনিকেট চালের দাম তাদের এলাকায় কেজিপ্রতি ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা মিনিকেট চালের দাম ছিল এক হাজার ৮০০ টাকা। এ হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩৬ টাকা। গতকাল শনিবার তা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৫০ টাকায়। এ হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৪১ টাকা। তবে অন্যান্য চালের দাম খুবই কম বেড়েছে। মিনিকেট চালের সঙ্গে সঙ্গে ধানের দামও বেড়েছে বলে জানান তিনি। তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আগে প্রতিমণ (৪০ কেজি) ধানের দাম ছিল ৭৫০ টাকা, যা বর্তমানে ৯৩০ থেকে ৯৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিরদ সাহা জানান, মিনিকেট ধান বোরো মৌসুমে এবার উৎপাদন হয়। তাদের এলাকায় কৃষকের কাছে মিনিকেট ধানের মজুদ নেই। তবে কিছু মিলারের কাছে মিনিকেট ধানের মজুদ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে মিনিকেট চালের দাম কম ছিল। এখন দাম বাড়ায় আগামী আমন মৌসুমে কৃষকের সুবিধা হবে বলে মনে করছেন তিনি।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামে চালের মজুদ রয়েছে ১২ লাখ ৩৯ হাজার টন। ওই দিনের হিসাব অনুযায়ী, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ২৬ টাকা এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়।

চলতি আমন মৌসুমে সরকার ছয় লাখ টন ধান কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কিনছে। সরকার মিল মালিকদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা দরে তিন লাখ ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহ করবে। আর কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকায় কেনা হবে। আগামী ২০ নভেম্বর থেকে ধান কেনা শুরু হবে এবং ১ ডিসেম্বর থেকে চাল কেনা শুরু হবে। এই সংগ্রহ অভিযান ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত চলমান থাকবে। প্রতি কেজি আমন ধানের উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছে ২১ টাকা ৫৫ পয়সা।
আমন মৌসুমে ধান ১ কোটি ২-৩ লাখ টন এবং আউশ ২৬-৩৬ লাখ টন উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে কৃষক যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

এদিকে, গেল বোরো মৌসুমে প্রায় ২ কোটি মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। বাম্পার ফলন ও দাম না পেয়ে মাঠেই ধান পুড়িয়ে ফেলেছিল কৃষক। এ ঘটনায় সরকার নড়েচড়ে বসলেও ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারেনি। অভিযোগ ছিল, মিলাররা ঠিকমতো ধান কিনছেন না। বাধ্য হয়ে ৫০০ টাকা মণেও ধান বিক্রি করতে হয়েছিল কৃষককে। চাল আমদানিতে শুল্ক দ্বিগুণ করা হলেও মাঠে তার ফল লক্ষ করা যায়নি। উল্টো পাঁচ মাস যেতে না যেতেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Rubel Ahmed ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
এখন উনি বলবেন চাউল ছাড়াও ভাত রান্না করা যায়! ওনার বাসায় করেন
Total Reply(0)
Md Jewel Rana ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
সবকিছুরই দাম বাড়বে
Total Reply(0)
Najmul Hoque ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
উন্নয়ন উন্নয়ন উন্নয়ন
Total Reply(0)
Jafra Jannat ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
এবার বলবে চাল খাবেন না
Total Reply(0)
S Islam Sujon ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
এসব দেখার কেউ নেই তাই এই সরকার কখনই জনগনের প্রতিনিধি হতে পারে না।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
দশ টাকা কেজি হতে আর কত দেরী পাঞ্জেরী...
Total Reply(0)
Sajjad ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
চাল নিয়ে আর কত চালবাজি চলবে?
Total Reply(0)
Mohammad ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:২৬ এএম says : 1
উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ। নৌকা ছাড়া উপায় নাই।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন