বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জনগণের ওপর চেপে বসা সরকারকে প্রশ্রয় দেবেন না

প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ‘জনগণের ওপর চেপে বসা’ সরকারকে প্রশ্রয় না দিয়ে ভারত বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের পাশে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিএনপি। জঙ্গিদমনের নামে সারাদেশে সরকারের পরিচালিত ‘সাঁড়াশি অভিযানে’ সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার দুপুরে এক বিক্ষোভ-সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় উঠেছেÑ
আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশের সরকার সঠিক কাজটি করছে, তারা জঙ্গিদমনে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা প্রশ্ন করতে চাই ভারত আমাদের বন্ধু, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের প্রতিবেশী শুধু নয়, তারা অকৃত্রিম বন্ধু। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব সময় আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছেÑ ভারতবর্ষ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মানুষকামী সঙ্গেই থাকবে। নিশ্চয়ই এমন কোনো শক্তি বা সরকারকে প্রশ্রয় দেবে না বা সহযোগিতা করবে না, যারা বাংলাদেশের মানুষের ওপর চড়াও হয়ে এসেছে।
বর্তমান সরকার নির্বাচিত নয় দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এটা দিবালোকের মতো সত্য এই সরকার নির্বাচিত নন। তারা জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে না। এমন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নির্বাচিত ঘোষণা করে এসেছে, যে নির্বাচন দেশের মানুষ গ্রহণ করেনি, বিশ্বও গ্রহণ করেনি। স্বাভাবিকভাবে এদেশের জনগনের প্রত্যাশা সকল গণতান্ত্রিক দেশ গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করবে এবং যারা গণতন্ত্রের পক্ষে সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে, তাদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করবে।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়নে ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়। জঙ্গিদমনের গত ১০ জুন থেকে সপ্তাহব্যাপী ‘সাঁড়াশি অভিযানে’ পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী সাড়ে ১২ হাজার গ্রেফতার হয়েছে যাতে সন্দেহভাজন জঙ্গি ১৭৯ জন। বিএনপির অভিযোগ ওই অভিযানে তাদের প্রায় তিন হাজারের মতো নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জঙ্গি দমনের নামে সারাদেশে এক সাপ্তাহে অভিযানে ১৩/১৪ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ এখন বলছেন, এখানে চিহ্নিত সন্দেহভাজন গ্রেফতার হয়েছেন ১৭৯ জন। তাহলে বাকীরা কারা? বাকীদের তাহলে কেনো ধরলেন?
আসলে এই গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে তারা (সরকার) বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতে চেয়েছেন। যখন তারা (সরকার) সম্পূর্ণরূপে গুপ্তহত্যা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে, সন্ত্রাস বন্ধ করতে, জঙ্গিবাদের উত্থানকে বন্ধ করতে, তখন তারা এই অভিযানের (জঙ্গিদমনে সাঁড়াশি অভিযান) নাম করে শক্ত হাতে আমরা দমন করছিÑ দেশের মানুষের ওপরেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, বাংলাদেশর মানুষকে প্রতিপক্ষ ঘোষণা করে।
তিনি বলেন, এই সরকার সব দিক থেকে ব্যর্থ হয়েছে। কেবল একটি দিকে তারা সফল হয়েছে, সেটা হচ্ছে কিভাবে দেশের মানুষের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো যায়। এদেশের মানুষ শতবর্ষ ধরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে। সেই গণতন্ত্রকামী মানুষকে তারা (সরকার) প্রতিপক্ষ হিসেবে নিয়েছে। আজকে নির্বাচন দিন, সেই নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ হয়, সেখানে তারা কোনো মতেই টিকে থাকতে পারবে না। সেজন্য তারা এই পন্থা অবলম্বন করেছে যে, তারা জঙ্গিবাদের নাম করে, গুপ্তহত্যার নাম করে, আসল অপরাধীদের খুঁজে বের না করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর চড়াও হয়েছে।
দেশে ‘ভীতিকর’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের মানুষের জীবনের আজ নিরাপত্তা নেই। মানুষ অশান্তির মধ্যে বসবাস করছে। সরকার চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অর্থনীতি ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় হাজার হাজার কোটি টাকার লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোনো প্রতিকার নেই কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তো নিজেদের দেশের রাজা বলে মন্তব্য করে চলছে। তারা যা খুশি তাই করছে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।
বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ব্যাপক লুটপাট হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, পদ্মাসেতু প্রকল্প, শুরু করা হলো তিন মিলিয়ন দিয়ে। এখন সেটা ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটা বারো মিলিয়ন মার্কিন ডলারে যাবে। এক কিলোমিটার রাস্তা করতে বাংলাদেশে খরচ হচ্ছে ৫৪ কোটি টাকা। যা ভারতে হয় ১৩ কোটি, পাকিস্তানে হয় ২০ কোটি টাকা। এভাবে টাকার লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা দেশে বিনিয়োগ না করে এখন লাউস, ভিয়েতনাম, কাম্বোডিয়া, মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। দেশে বিনিয়োগের কোনো পরিস্থিতি নেই। এরকম একটা অবস্থার মধ্যে তারা ড্রাম-ঢোল বাজাচ্ছে। এমন উন্নয়ন হচ্ছেÑ এখন গণতন্ত্রকে পেছনে দাও, উন্নয়নকে সামনে নিয়ে আসো। অর্থাৎ এভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করব আর তথাকথিত মেগা প্রজেক্ট দেখিয়ে বলর উন্নয়ন হচ্ছে। সরকার এভাবে উন্নয়নের নামে জনগণের টাকা, ট্যাক্সের টাকা থেকে অর্থ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
এই অবস্থায় থেকে উত্তরণে ভেদাভেদ ভুলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন আর সত্যিকার অর্থে স্বাধীন নেই, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেই। মানুষের অধিকার নেই্। এটা একটা ফ্যাসিবাদী সরকারের নিয়ন্ত্রণে পড়ে গেছে। তাই দেশপ্রেমিক মানুষদেরকে এক হতে হবে, সংগঠিত হতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে হবে। আমাদের মহল্লায়-মহল্লায়, পাড়ায়-পাড়ায় ছড়িয়ে পড়তে হবে। দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে সকলকে সংগঠিত হয়ে এই দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে।
গণগ্রেফতারে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য আন্দোলনে প্রস্তুতি নেয়ারও আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলে, এই রোজার দিনে আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে বন্দি হয়ে আছেন। তাদের মুক্তির জন্য আমাদের আন্দোলন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তাদের প্রতি সমর্মিতা জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার একটার পর একটা অসংখ্য মামলা দিয়ে চলেছে। এমন একজন নেতা নেই, যাদের বিরুদ্ধে ১০ থেকে ১০০টা মামলা নেই। আমাদের সকলকে সপ্তাহে ৪/৫ দিন আদালতে যেতে হয়।
এই অবস্থায় আর কতদিন আমরা থাকবো? এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে এই কারাগার ভাঙতে হবে। আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই।
সভাপতির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সারা পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে এখনো নির্বাচন বলে গ্রহণ করে নাই। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত বলে, এটা কনস্টিটিউশনালী মেন্ডেটরী। আগের ভারতীয় হাইকমিশরার পংকজ শরণ এটা বলেছিলেন। এটা ম্যান্ডেটরি ছিলো, না কী ছিলোÑ আপনি বলাবার কে? এটার দেশের মানুষ বলবে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, আমাদের প্রতিবেশী। তাদের সাথে সকল কিছুর জন্য আমাদের বন্ধুত্ব অপরিহার্যর্ ও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারত যদি শুধু আওয়ামী লীগ সাথে বন্ধুত্বটাকে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব মনে করে, হাসিনার সাথে বন্ধুত্ব মানেই যদি বাংলাদেশের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব মনে করে তাহলে সেটা বন্ধুত্ব হলো না। বন্ধুত্ব হবে দেশে দেশে, বন্ধুত্ব হবে ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে। বন্ধুত্ব হবে সমঝোতা ও সমতার ভিত্তিতে।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, মহানগর নেতা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কাজী আবুল বাশার, বজলুল বাসিত আনজু, ইউনুস মৃধা, উলামা দলের হাফেজ আবদুল মালেক, যুবদলের আব্দুুল খালেক, জামিলুর রহমান নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের লিটন মাহমুদ ও মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন