শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আলোকিত বিশ্ব সভ্যতা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৪ এএম, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রচলিত কায়েমী স্বার্থবাদী শ্রেণি সাম্রাজ্যবাদ, আঞ্চলিক সম্প্রসারণবাদ, ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক ও অগ্নিউপাসক, ধর্ম ও সংস্কৃতি এবং উশৃঙ্খল বস্তু ও ভোগবাদী সমাজ ইত্যাদি সবকিছু মোকাবেলা করে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত নিষ্পেষিত মানবতাকে মুক্তির বাণী শোনাতে এসে তাকে দুঃখ, কষ্ট, সংগ্রাম, সাধনা, যুদ্ধ ও সংঘাতের একটি কঠিন জীবন পার করতে হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি উত্তম আচরণ, পরম ধৈর্য, ক্ষমা ও উদারতার মধ্য দিয়ে তার বৈরী পরিবেশকে অতুলনীয় অনুক‚ল পরিবেশে রূপান্তরিত করতে পেরেছিলেন।

কিন্তু তাঁর বাণীটি যেহেতু কেবল আরব ভূমির জন্য নয়, কেবল তাঁর গোত্র ও অঞ্চলের জন্য নয়, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়, অতএব তাকে বিশে^র বড় বড় সব শক্তির প্রতি এ বার্তা পৌঁছে দিতে হয়েছে। তিনি খ্রিষ্টজগতের প্রধান কেন্দ্রগুলোতে, পারস্য সম্রাটের কাছে, কাছ ও দূরের বিভিন্ন আরব-আফ্রিকান শাসকদের কাছে কূটনৈতিক পত্র প্রেরণ করেন। এ পত্র ছিল মদীনারাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বিকৃতির পত্র।

আল্লাহর রাসূল হিসাবে বিশ্বমানবতার নতুন বিশ্বব্যবস্থার নতুন বার্তা মেনে নেয়ার আহ্বানের পত্র। রাসূলের নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব স্বীকার করে আল্লাহর বান্দাদের মানবাধিকার প্রদানের তাগাদাপত্র। মহানবী কল্যাণরাষ্ট্রের সাথে নিরাপত্তা চুক্তির পত্র। কোনোরূপ সাড়া না দিলে মানুষের মৌলিক অধিকার ও মুক্তির জন্য লড়াইয়ের জন্য তৈরি থাকার পত্র। এ বিশাল বিপ্লবের গোড়াপত্তন করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পার্থিব জীবনের দিনগুলো পূর্ণ করেন।

তাঁর ওফাতের পর খোলাফায়ে রাশেদীন ও পরবর্তী নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরাধ্য কাজ দুর্বার গতিতে অগ্রসর হতে থাকে। মাত্র কয়েক দশকে তখনকার পৃথিবীর প্রায় সবটুকুই ইসলামের ন্যায়বিচার ও সুশাসনের আওতায় এসে ধন্য হয়। বিশ্বব্যাপী বিজিত দেশ ও মানুষ এর আগে কখনো এমন তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিয়েছে বলে ইতিহাসে পাওয়া যায় না। মজলুম মানবতা প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ কেবল ইসলামের হাতেই লাভ করেছিল।

পারস্য বিজয়ের সময় সাহাবীদের প্রতিনিধি পারস্য সেনাপতির কাছে গেলে সম্রাট সাহাবীকে প্রশ্ন করেছিল, তোমরা মরুবাসী ভুখানাঙা লোকেরা কেন আমাদের দেশ দখলের জন্য ছুটে এসেছ? কেন আমার সাম্রাজ্য অবরোধ করে রেখেছ?

সাহাবী জবাবে বলেছিলেন, আমরা আসিনি, আল্লাহ আমাদের পাঠিয়েছেন। উদ্দেশ্য তিনটি :
এক. আমরা আল্লাহর বান্দাদেরকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে এক আল্লাহর দাসত্বে ফিরিয়ে নিতে চাই।
দুই. নানা ধর্ম ও মতবাদের জুলুম ও শোষণ থেকে তাদের মুক্ত করে ইসলামের ন্যায়বিচার ও সুশাসনের পথ দেখাতে চাই।

তিন. তাদের পার্থিব জীবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে এক খোদার সহজ ও শান্তিময় দিকগুলোর সাথে পরিচিত করতে চাই।
পাঠক লক্ষ করলে দেখবেন, একজন অতি সাধারণ সাহাবী এখানে কোরআন-সুন্নাহর উদ্ধৃতি বা নেতৃবর্গের দোহাই উল্লেখ না করে নিজ উপলব্ধি থেকে বিশ^মানবতার মুক্তির জন্য প্রেরিত মহান ইসলামের বিপ্লবী বার্তাটি কত সহজ-সরল ভাষায় তার নিজস্ব ভাষ্যে পারস্য সম্রাটকে শোনালেন।

এখানে আকিদার কথা রয়েছে। শিরকের বিরুদ্ধে তাওহীদের জয়ধ্বনি রয়েছে। ধর্ম, মতবাদ ও সংস্কৃতির শোষণের প্রতি ইশারা রয়েছে আর এসব থেকে মুক্ত হয়ে ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও সুশাসন লাভের নিশ্চয়তার আহ্বান রয়েছে। আর রয়েছে অর্থনৈতিক ও আধ্যাত্মিক মুক্তির বার্তা। পার্থিব জীবনের সকল মানবিক দুর্বলতা, সংকীর্ণতা, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, দম্ভ-অহংকার, ঘৃণা, শত্রুতা, সাম্প্রদায়িকতা, কৃপণতা প্রভৃতি দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত উন্নত আধ্যাত্মিক অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে এ জগতের আবিলতা থেকে নিষ্কৃতি লাভের মাধ্যমে জীবনের প্রশস্ত ও উদার অঙ্গনে বিচরণের যোগ্যতা অর্জন, যা মানব জীবনের চরম স্বার্থকতার মহান উপলব্ধি। পাঠক আজকের বিশ^মানবতার জন্যও কি এ আহ্বান পূর্ণত ও নিশ্চিতভাবে অপরিহার্য নয়?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Atif Islam Sumon ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)। মানবজাতিকে সঠিক পথ ও মুক্তির দিশা দেয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা তাঁকে দুনিয়াতে পাঠান। আল্লাহ বলেন, হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শকরূপে। আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে। (সূরা আহযাব ৪৫-৪৬)।
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
মানবজাতির আদর্শ হজরত মুহাম্মদ (সা.)। দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পরকালে মুক্তির জন্য তিনি জীবন ভর মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান করেছেন। হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে শ্রেণিবৈষম্যকে অতিক্রম করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব জাগ্রত করেছেন। আকাবার শপথ, মদিনা সনদ ও হুদায়বিয়ার সন্ধি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
অন্ধকার যুগের পশুসুলভ জীবনাচার ও জুলুম, নিপীড়ন–নির্যাতনের সামাজিক অন্যায়–অবিচার ও অত্যাচারের তমসা থেকে মানবতাকে সভ্যতার আলোর দিকে এগিয়ে নিতে; তিনি ভোরের সমীরণপ্রবাহ সঙ্গে নিয়ে, প্রভাত রবির রঙিন আলোয়, সকালের সূর্যের হাসি হয়ে উষার আকাশে উদিত হলেন মুক্তির দূতরূপে। তখন চলছিল আইয়ামে জাহেলিয়াত, মানে অন্ধকার যুগ। অজ্ঞানতা, মূর্খতা, কুসংস্কার ও পাপাচারে নিমজ্জিত ছিল জাজিরাতুল আরব বা আরব উপদ্বীপ। এ সময় জ্ঞানের আলো নিয়ে, মুক্তির বাণী নিয়ে পৃথিবীতে আসেন মানবতার মহান বন্ধু হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
বিশ্বের সেরা নাম ‘মুহাম্মদ’। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয় নবী (সা.)–এর আলোচনা সমুন্নত করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আর আমি আপনার স্মরণ ও আলোচনা উন্নত করেছি।’ (সুরা-৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৪)।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ব্যক্তিজীবনে, সমাজ ও রাষ্ট্রে একমাত্র তাঁর অনুকরণ–অনুসরণই দিতে পারে মুক্তির দিশা।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
কত গল্প, কত উপন্যাস, কত কবিতা-ই না আমরা পড়ি। কেবল পড়া হয় না, জানা হয় না মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে। কথার ফাঁকে ফাঁকে গল্পের বাঁকে বাঁকে বলে ফেলি সক্রেটিস এই বলেছেন, শেক্সপিয়ার এটা লিখেছেন। কিন্তু বলতে পারি না প্রিয় নবী কী করেছেন কিংবা কী বলেছেন। হৃদয়ে ভাসে না তার জীবনের ঘটনাবলী, মানবতার কল্যাণে সম্পাদিত তাঁর কার‌্যাবলী। তাঁকে ভালো না বাসলে ভালো কাজের প্রতি মহব্বত আসবে কী করে!
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ প্রাত্যহিক জীবনে অনুকরণ–অনুসরণ করে চলছে তাঁর জীবনাচার ও অনুপম মহান আদর্শ। সব মানুষের হৃদয়ে তিনি জ্যোতির্ময় চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন অনন্তকাল।
Total Reply(0)
Md amran Hossain ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ৭:১৫ এএম says : 0
অত্যান্ত চমৎকার তিনটি কথা খুবই আকশ্মিক
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন