শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পেঁয়াজ ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’

প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম


গত দুদিনে প্রায় ১০০ টাকা বেড়ে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। মিসর থেকে আমদানিকৃত বড় আকারের কালো পেঁয়াজ ১৮০-১৯০ টাকায় কিনছেন ভোক্তারা। দফায় দফায় দাম বাড়ায় পেঁয়াজ নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। এভাবে দাম বাড়ার পেছনে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ১৪টি মনিটরিং টিম সর্বদা কাজ করছে নিত্যপণ্যের বাজারে। অকারণে মজুদকৃত পেঁয়াজের দাম বেশি নেয়া হলে শাস্তি পেতে হবে ব্যবসায়ীদের।

এদিকে, বাসের যাত্রী থেকে শুরু করে মতিঝিলের কর্পোরেট অফিসগুলোর টেবিলেও চলছে পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনা। ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ এখন এই পেঁয়াজ। কবে নাগাদ পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হবে এ কথার স্পষ্ট উত্তর নেই কোথাও। কারণ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যেও মসলা জাতীয় এই পণ্যের দাম ১০০ রূপি ছাড়িয়ে গেছে। কলকাতা, ত্রিপুরা ও দিল্লীসহ কোথাও পেঁয়াজের সুখবর নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের বড় চালানটি দেশে আসলেই দাম পড়ে যাবে। কারণ ওই সময় ৬০ হাজার মে. টন পেঁয়াজ আসবে দেশে। আমদানিকৃত এই পেঁয়াজ আগামী দু’একদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছবে।

জানা গেছে, পেঁয়াজের সঙ্কট দূর করতে মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক, থাইল্যান্ড এবং চীন থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে নিয়মিত পেঁয়াজ আসছে। সম্প্রতি মিসর ও তুরস্ক থেকে আরও ৫ হাজার মে.টন পেঁয়াজ দেশে আনা হয়। তবে মিসর থেকে আমদানিকৃত ৬০ হাজার মে. টনের বড় চালান এখনও দেশে এসে পৌঁছায়নি। পেঁয়াজের এই সঙ্কট সামনে রেখেই অসাধু ব্যবসায়ীরা ফাঁয়দা লুটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বেশকিছু পাইকারি ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগে জড়িমানা করা হয়। এখন দাম বাড়ানো হচ্ছে-ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কথা বলে। বুলবুলের আঘাতে সাময়িক যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হলেও এখন পরিস্থিতি ভাল। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা হচ্ছে। পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আল-আমিন জনকণ্ঠকে বলেন, পাইকারিখ্যাত শ্যামবাজারে পেঁয়াজের অভাব নেই। টাকা দিলে বস্তায় বস্তায় মিলছে পেঁয়াজ। তিনি বলেন, খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১০-১৫ টাকা বেশি নেয়া হয়। কিন্তু পাইকারি বাজারে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা করা হচ্ছে। তবে এটা মানতে চান না পাইকারি ব্যবসায়ীরা। শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ বলেন, বাজারে পেঁয়াজের মজুদ শেষ হয়ে আসছে। এ কারণে দাম বাড়ছে। আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই দাম কমবে।
উল্লেখ্য, গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। পেঁয়াজের বড় উৎস ভারত গত ২৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে রফতানি বন্ধ ঘোষণা করলে দেশে দাম বাড়তে থাকে। দেড় মাসের ব্যবধানে জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজে প্রায় ৩ থেকে ৪ গুন দাম বেড়ে গেছে। এখন প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশে বছরে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে উৎপাদন হয় ১৮-১৯ লাখ টন। ঘাটতি পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করে পূরণ করা হয়। কিন্তু গত বছর ভারী বৃষ্টিপাত ও অসময়ে বৃষ্টিপাতে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে। এবছর ঘাটতির পরিমাণ আরও বেশি। এছাড়া ভারতেও এবছর পেঁয়াজের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।

কমছে পেঁয়াজের ব্যবহার
দাম বাড়ার কারণে পরিবার প্রতি পেঁয়াজের ব্যবহার কমে গেছে। স্বল্প আয়ের মানুষ বিশেষ করে রিকসাচালক, ভ্যানচালক ও দিনমজুরেরা শাক-সবজির মতো তরকারি পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করছে। মাছ ও গোশত রান্না হলে সামান্য পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে। পেঁয়াজ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত গৃহিণীরা। কারণ তারা রান্না করার সময় পর্যাপ্ত পেঁয়াজ পাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে মানিক নগরের গৃহিণী রাহিমা আক্তার বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজার খরচ বেড়ে গেছে। এ কারণে তরকারি রান্নায় পেঁয়াজ কম ব্যবহার করা হচ্ছে। আপাতত মাছ ও মাংস ছাড়া কোন তরকারিতে আর পেঁয়াজ নয়। ভোট ছাড়া সরকার পেঁয়াজ ছাড়া তরকারিই খাওয়াবে- ড. মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ভোট ছাড়া আওয়ামী লীগ যে সরকারে এসেছে সেটা প্রমাণ করার জন্যই শেখ হাসিনা আমাদেরকে পেঁয়াজ ছাড়া তরকারি খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আজকে দেখেন দেশের অবস্থা। যে পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা ছিল, সেটা আজকে ২০০ টাকা। আর প্রধানমন্ত্রী নাকি তার পরিবারে বলেছেন, ‘পেঁয়াজ দিয়ে তরকারি দরকার নেই’। আমাদের কথা হচ্ছে- ভোট ছাড়া যদি সরকার হয়, তাহলে পেঁয়াজ ছাড়া বাংলাদেশের মানুষকে তরকারি খাওয়াবে। ভোট ছাড়া তারা সরকারে এসেছে সেটা প্রমাণ করার জন্যই শেখ হাসিনা আজকে আমাদেরকে পেঁয়াজ ছাড়া তরকারি খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা আছে দুর্নীতিবিরোধী, তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিয়ে গবেষণা করে। হালনাগাদ একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৮২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৮। যেখানে ভারত মাত্র ৭৮তম, আর পাকিস্তান আমাদের থেকে অনেক উপরে আছে, তাদের অবস্থান ১৫৩। এটা লজ্জার। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি কি পরিমাণ আজকে শুধু দেশেই না সারা বিশ্বে প্রমাণিত। সেই রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে চুনোপুটিদের ধরার একটি অপচেষ্টা করছে। কিন্তু এদেশের জনগণ বুঝে ফেলেছে। আমরা যদি দুর্নীতি থেকে মুক্ত হতে চাই, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই, শুধু নামেই ঐক্য নয়, দেশের সব জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামতে হবে।
ইতিহাস বিকৃত করে জিয়াউর রহমানকে বাদ দেয়া যাবে না উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ইতিহাস যতই বিকৃত করুক না কেন, যখন ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে লেখা হবে, তখন জিয়াউর রহমানকে বাদ দিয়ে ইতিহাস লেখা সম্ভব হবে না।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, খালেদা জিয়ার ওপর আওয়ামী লীগ নেত্রীর রাগের কারণে তিনি এখন কারাগারে। কোনও মামলার জন্য নয়, গণতন্ত্রকে হত্যা করার জন্য তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের রাতে ডাকাতি করার জন্য খালেদা জিয়া আজকে কারাগারে। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নাই, এমন অবস্থা যে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত পচন ধরেছে। এই পচন থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। কাজেই আমাদের প্রেসক্লাবের ভিতরে, রাস্তায় সবক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী মো আবু তাহের প্রমূখ।###

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন