শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গেটম্যানবিহীন রেলক্রসিং

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দেশের অধিকাংশ রেলক্রসিং কার্যত মৃত্যুকুপ। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি ক্রসিংএ গেটম্যান থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে নেই। গেটম্যান থাকলেও অনেক সময় তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। যার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে ট্রেন লাইন পারাপার। তাছাড়া নড়বড়ে লাইন, স্টেশন ও ইয়ার্ডগুলো সংস্কার ও মেরামতের জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যাত্রীসেবা মান বৃদ্ধিরও উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেই। এ চিত্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায়ই রেল ক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটে। রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রতিটি রেলগেটে গেটম্যান দেয়ার মত জনবল রেল বিভাগের নেই। সূত্র জানায়, রেলওয়ের পশ্চিম জোনে খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও ঈশ্বরদী রেলপথ মোট ২শ’ ৪৪ কিলোমিটার। রেলপথে মোট ১৩৯ টি রেলক্রসিংয়ের ৯২ টি সম্পূর্ণ অরক্ষিত। যার কোনটাতেই গেট বা গেটম্যান নেই। অরক্ষিত একেকটি গেট মৃত্যুকুপে পরিণত হয়েছে। সেসব স্থানে ‘এটি অবৈধ রেলগেট, কোনো গেটম্যান নেই, নিজ দায়িত্বে পারাপার হোন’-এমন দায়সারা গোছের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে রেল বিভাগ। অনেক রেলক্রসিংএ গেটম্যান নেই কেন তার জবাব দিতে পারেনি যশোর ও খুলনার স্থানীয় রেল কর্মকর্তারা। তবে শুধু বলেছেন, দেখতেই তো পাচ্ছেন নেই, জনবলের সংকট। এ ব্যাপারে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিএম মিহির কান্তি গুহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে। প্লানিং কমিশনে গেছে, ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
রেলক্রসিংএ গেটম্যান না থাকলে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয় উল্লেখ করে যশোরের চুড়ামনকাঠি, বারীনগর, বারোবাজার এলাকার কয়েকজন জানান, ক্রসিং অরক্ষিত থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারাও সবসময় আতঙ্কে থাকেন। যশোর শহরের খড়কি রেলক্রসিং এর পাশের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বললেন, ‘ট্রেন লাইন পারাপার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে, গেটম্যান দেয়া হচ্ছে না কেন তা বুঝি না। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটলেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের’।
এছাড়া বেশিরভাগ রেলপথই বৃটিশ আমলে নির্মিত স্থাপনা দিয়ে একরকম জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। রেল যোগাযোগ উন্নয়ন হচ্ছে না বললেই চলে। ট্রেনযাত্রীদের টিকিট সংগ্রহ ও যাত্রার ক্ষেত্রে ভোগান্তির শেষ নেই। একশ্রেণীর রেলওয়ে কর্মচারি ও রেল পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ। প্রথম শ্রেণীর টিকিট নিয়েও অনেক সময় বসার জায়গা পাওয়া যায় না। বেনাপোল কমিউটার ট্রেন তো চোরাচালান পণ্য আনা-নেয়ার নিরাপদ বাহন হিসেবে ট্রেন ব্যবহৃত হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমে সংস্কার ও মেরামতের অভাবে ক্রমেই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে রেল যোগাযোগ। সিগন্যাল যন্ত্রপাতিও সবখানে সব সময় কার্যকর থাকে না বলে অভিযোগ। বেশিরভাগ স্টেশনে পিএলসি (পেপার লাইন ক্লিয়ার) ব্যবস্থায় গার্ডের লাল আর সবুজ কাপড় উড়ানোর ওপর নির্ভর করে ট্রেন চলাচল। ইয়ার্ডে বাতি না থাকায় মালগাড়ি থেকে মালামাল চুরির ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। ট্রেনযাত্রী সংখ্যা বেশি হওয়ায় সা¤প্রতিককালে আয় বাড়লেও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই দৈনদশার অবসান ঘটাতে সংশ্লি­ষ্ট কর্তৃপক্ষ উল্লে­খযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
যশোর, খুলনা, বেনাপোল, ঝিকরগাছা, দর্শনা, কালীগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশনগুলোতে জীর্ণ অবস্থা। যশোরসহ কয়েকটি স্টেশন নির্মিত হলেও অসংখ্য সমস্যা রয়েছে। বাসের চেয়ে ট্রেনের ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ায় যাত্রী সাধারণ ট্রেনে যাতায়াতের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি না হলে যাত্রীরা আবার মুখ ফিরিয়ে নেবেন বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। যশোর ও খুলনা এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকার সাথে দিনে ও রাতে সরাসরি যোগাযোগের জন্য যাত্রীরা বর্তমানে বেশি ব্যবহার করছে ট্রেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ রেল লাইন এমনিতেই কাঠের ¯িøপার ও রেল লাইনের পাত দুর্বল তার ওপর পণ্যবাহি ওয়াগনগুলো বেনাপোল ও দর্শনার পথে অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে চলাচল করে। তাতে রেললাইন দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সংশ্লি­ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম জোনে খুলনা-রাজশাহী ৩শ’৪ দশমিক ২০ কি.মি., খুলন-সৈয়দপুর ৩শ’৯৪ দশমিক ৩০ কি.মি., খুলনা-গোয়ালন্দ ২শ’৫৬ দশমিক ৭৮ কি.মি. ও খুলনা-বেনাপোল ৯১ দশমিক ২ কি.মি. রেলপথ রয়েছে। এর কিছু রেলপথের উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু গোটা অঞ্চলের রেললাইন খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে সময়মতো সংস্কার ও মেরামতের অভাবে। বিশেষ করে রেলক্রসিংগুলোর ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি উঠেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন