অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান ও হায়দরাবাদের সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ভারতের দ্বিতীয় জাকির নায়েক হয়ে উঠতে চলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।
গতকাল শনিবার (১৬ নভেম্বর) তার এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন বাবুল। তিনি বলেন, ‘এআইএমআইএম প্রধান দ্বিতীয় জাকির নায়েক হতে চলেছেন। অযোধ্যার জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন তার সমালোচনায় লাগাতার বিতর্কিত মন্তব্য করছেন। তিনি যদি আরও বেশি কথা বলেন, তাহলে তাকে চুপ করানোর আইন কেন্দ্রের কাছে আছে। ভবিষ্যতে দেশের সেই আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বাবরি মসজিদ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে একাধিকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ওয়াইসি। তবে শুক্রবার জাতীয় একটি সংবাদমাধ্যামকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বাবরি মসজিদ মামলার রায় প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি সরাসরি বলেন, আমি আমার বাবরি মসজিদ ফেরত চাই।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যা কিছু ভারতের সংবিধান এবং বহুত্ববাদের বিরোধিতা করে তার বিরোধিতা আমি করবই। আমার জন্য সংবিধানই শেষ কথা। সংবিধানই আমাকে সেই অধিকার দিয়েছে যেখান থেকে শ্রদ্ধার সঙ্গে আমি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করতে পারি। যা সংবিধানের বিরুদ্ধ তার বিরোধিতা আমি করবই।
পাশাপাশি আসাদুদ্দিন আরো বলেন, আমাদের যুদ্ধ এক টুকরো জমির জন্য নয়। আমার আইনি অধিকার যেন অক্ষুন্ন থাকে সেইদিকে নজর রাখা। শীর্ষ আদালতও জানিয়েছেন বাবরি মসজিদ তৈরি করার জন্য কোনো মন্দির ধ্বংস করা হয়নি। তাই আমি আমার মসজিদ ফেরৎ চাই।
আসাদুদ্দিনের 'আই ওয়ান্ট মাই মসজিদ ব্যাক' মন্তব্যের স্পষ্ট বিরোধিতা করে বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় শনিবার জানান, অল-ইন্ডিয়া-মজলিস-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন প্রেসিডেন্ট আসাদুদ্দিন ওয়েইসি ক্রমেই দ্বিতীয় জাকির নায়েকে পরিণত হচ্ছেন। উনি যদি প্রয়োজনের বেশি কথা বলেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশে আইনশৃঙ্খলা রয়েছে।
নভেম্বরের ৯ তারিখ সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদ মামলার রয়ে মসজিদের জমিতে মন্দির তৈরিতে শিলমোহর দিয়ে অযোধ্যার অন্য পাঁচ একর জমিতে মসজিদ তৈরির অনুমতি দিয়েছে। তবে ওই পাঁচ একর জমি নিয়ে বিভিন্ন মুসলিম নেতারা বিরোধিতার পাশাপাশি আসাদুদ্দিন ওয়েইসিও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার জেরে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসির নামে। সেই অনুযায়ী তদন্তও শুরু হয়েছে। এখন দেখার বিষয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র হুঁশিয়ারির পর হায়দরাবাদের সাংসদ ওয়েইসির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে কেন্দ্র।
নিজের বক্তৃতা নিয়ে ২০১৬ সালে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়েন জাকির নায়েক। সে সময় তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও উগ্রপন্থাকে উসকে দেয়ার অভিযোগ তুলেছিল ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। একই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় তার প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনসহ (আইআরএফ) ও পিস টিভি।
অভিযোগ ওঠার পর ২০১৬ সালের ১ জুলাই ভারত ছেড়ে যেতে বাধ্য হন জাকির নায়েক। ভারতে মামলা হওয়ার পর জাকির নায়েক মালয়েশিয়ায় আশ্রয় চাইলে তাকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেয় তৎকালীন নাজিব রাজাক সরকার। এরপর থেকে তিনি মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া শহরে বসবাস করে আসছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন