শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১২ জেলায় বাস চলাচল বন্ধ

নতুন সড়ক আইন প্রত্যাহারের দাবি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার প্রতিবাদে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১২ জেলায় বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে পূর্ব কোন ঘোষণা ছাড়াই এই কর্মবিরতি পালন করছে তারা। তাদের হঠাৎ এই কর্মসূচির ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকেই বাস স্ট্যান্ডে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে ফিরে গেছেন। নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, ও চুয়াডাঙ্গা, হিলির পরিবহন শ্রমিকরা এই কর্মবিরতি পালন করছেন। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে প্রতিবেদন :

যশোর ব্যুরো জানায় : শ্রমিক সংগঠনের নেতারা দাবি করছেন, শাস্তির খড়গ নিয়ে রাস্তায় নামতে চাইছে না শ্রমিকরা। এজন্য স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। আর বৈধ কাগজপত্রের চালকরা বলছেন, অবৈধ কাগজপত্রের চালকরা গাড়ি নিয়ে রাজপথে নামতে সাহস পাচ্ছে না। তাই শ্রমিক নেতাদের ইন্ধনে তারা ধর্মঘট পালন করছে। পুলিশ প্রশাসন বলছে, শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে ধর্মঘট না হওয়ায় আলোচনাও ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

গত রোববার সকাল থেকে যশোর অঞ্চলের ১৮ রুটে স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী সাধারণ। সোমবার বেলা ১১টার দিকে বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা কয়েকটি পরিবহণ আটকে দেয় শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা।

শহরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে একাধিক যাত্রী বলেন, ঘোষণা ছাড়াই পরিবহন ধর্মঘট চলছে। অথচ কেউ দায় নিচ্ছে না। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। শহরের পালবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে সাইদুল ইসলামে নামে এক যাত্রী বলেন, জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি কেউ আমলে নিতে চায় না।

যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতি’র সভাপতি মামুনূর রশীদ বাচ্চু বলেন, বৈধ কাগজপত্রের গাড়ি ও চালকদের বাধা দিচ্ছে না। ৯০ শতাংশ চালক রাস্তায় নামছে না। ফলে বাকী ১০ শতাংশ চালক বিবেকের তাড়নায় মাঠে নামেনি। সবাই স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি পালন করছে। বাধ্য করার অভিযোগ সঠিক নয়। এটা কোন ইউনিয়ন বা ফেডারেশনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি নয়। পরিবহন শ্রমিকরা ইচ্ছামত কর্মবিরতি শুরু করেছেন।

যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, রোববার রাতে বৈঠকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আশ্বাস দিয়েছিল সোমবার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করবে। কিন্তু এখানে শ্রমিক কিংবা বাস মালিক সংগঠন নয়, শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি পালন করছে। ফলে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না শ্রমিক সংগঠনগুলো। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কঠোর হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছি।

রাজশাহী ব্যুরো জানায় : হঠাৎ এমন ধর্মঘটে বিপাকে পড়েছে যাত্রীরা। রাজশাহী থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা। নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে সকাল থেকেই রাজশাহীর সাথে সারা দেশের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। সকাল থেকেই আন্ত:নগর বাস ছেড়ে যায়নি। ফলে অনেকেই বাস টার্মিনালে এসে ফিরে যায়। আবার কেউ কেউ বিকল্প হিসাবে ট্রেনে চাপেন। সেখানেও ভীড় দেখা যায়।

যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার আইন করেছে সেটা নিয়ে বাস শ্রমিকদের সমস্যা থাকলে তারা নেতা বা মন্ত্রীদের নিয়ে আলোচনায় বসে সমাধান করতে হবে। হুট করে বাস বন্ধ, সড়ক বন্ধ করে দূর্ভোগ সৃষ্টি করা মোটেও ঠিত নয়।

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান : সকালে যাত্রীরা মজমপুর, চৌড়হাস এলাকায় বাস টার্মিনালে গিয়ে বাস না পেয়ে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে রওনা দেন। যদিও এসব যান মহাসড়কে চলা অবৈধ। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হচ্ছে।

খুলনা : বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারশনের যুগ্ম সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বলেন, শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় এই কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে তারা কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে না। অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য নতুন সড়ক আইনে তাদেরকে ঘাতক বলা হচ্ছে। তাদের জন্য এমন আইন করা হয়েছে যা সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আইন সংশোধনের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি চলবে।

হিলি (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান: দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর থেকে তৃতীয় দিনেও হিলি-বগুড়া রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রিবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন চালকরা। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ওই পথে চলাচলরত যাত্রিরা। তবে সকাল থেকে গাড়ীর কাগজপত্র আপডেট ৪-৫টি গাড়ী চলাচল শুরু করেছে। অপরদিকে অন্যান্য চালকরা দাবি করছেন তাদের গাড়ীর ও চালকদের সঠিক কাগজপত্র না থাকায় তারা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে।

সোমবার সকাল থেকে ৪০টি গাড়ীর মধ্যে ৪-৫টি গাড়ী হিলি-বগুড়া সড়কে চলাচল শুরু করলেও অন্যান্য গাড়ী চলাচল করছে না। তবে হিলি-দিনাজপুর, হিলি-জয়পুরহাট রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

একজন বাস চালক জানান, কেউ মারা গেলে নতুন আইনে চালকের মৃত্যুদন্ড বা আহত হলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আমাদের এতো টাকা দেওয়ার সামর্থও নাই আর আমরা বাস চালায়ে জেলখানায় যেতে চাই না।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার চালকরাও কর্মবিরতি পালন করছেন। বাস না পেয়ে অনেকে ইজিবাইক ও মহাসড়কে চলাচলে নিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহনে চলাচল করছেন। স্থানীয় সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে কামাল হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, জরুরি কাজে তার খুলনা যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তিনি।

ঝিনাইদহ বাস, মিনিবাস ও মাইক্রো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান খোকন বলেন, যান চলাচল ঠেকাতে সড়কে কোনো ব্যারিকেড দেননি তারা। শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কাজ বন্ধ রেখেছে।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হামানুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের অঘোষিত কর্ম বিরতিতে লোকাল রুটগুলোতে বাস, মিনিবাস চলছে না। তবে দূরপাল্লার রুটে যানবাহন চলাচল করছে।

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুর রহমান দাবি করেন, সাতক্ষীরা জেলায় অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল করছে। শুধু যশোর ও খুলনা সড়কে বাস চলাচল করছে না।

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় সকাল ১০টার দিকে অভ্যন্তরীণ ও দুপুর ২টার পর থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম দাবি করেন, শ্রমিক ইউনিয়ন কোনো ধর্মঘট ডাকেনি। পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

শ্রমিক নেতারা জানান, গত রোববার ঝিনাইদহে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রমিক সংগঠনগুলোর যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল স্থানীয়ভাবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত যানবাহন চালাবে। ২২ তারিখে ঢাকায় বৈঠক শেষে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু তার আগেই বন্ধ হয়ে গেল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন