বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লবণ কেনার হিড়িক

৪ লাখ টন মজুদ আছে : মোল্লা সল্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:১৪ এএম

দেশে পর্যাপ্ত মজুদ, গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না : বিসিক
উৎপাদন বেশি হওয়ায় উল্টো বিক্রি কম : কনফিডেন্স
অভান নেই কৃষকরা দাম পাচ্ছে না : পূবালী সল্ট
সরবরাহের কোনো সমস্যা নেই : এসিআই


‘এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে/ চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে’ (শামসুর রাহমান)। কবির এই ‘প-শ্রম’ কবিতার মতোই গুজবে কান দিয়ে লবণ কেনার হিড়িক পড়েছে। গতকাল সারাদেশে লবণের সঙ্কট গুজবে ভোক্তাদের মধ্যে লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় দোকানে লবণ ক্রয়ের জন্য ক্রেতাদের লাইনও দেখা যায়। এই সুযোগ অসাধু কিছু ব্যবসায়ী লবণের দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়িয়ে দেন। লবণ উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্র কক্সবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাল লাখ টন লবণ মজুদ রয়েছে। কৃষকরা লবণ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) জানিয়েছে, দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ভোজ্য লবণ মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণ চাষিদের কাছে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুদ রয়েছে।

জানতে চাইলে বিসিকের কন্ট্রোল রুম থেকে আবুল খায়ের বলেন, এটি সম্পূর্ণ গুজব। পেঁয়াজের দামের মধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা লবণ সঙ্কটের গুজব রটিয়ে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছে। দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আ. গাফফার খান ইনকিলাবকে বলেন, দেশে লবণের কোনো সঙ্কট নেই। আমরা লবণসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ে গুজব বন্ধ এবং বাজার মনিটরিং করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া দিয়েছি। তারা মাঠে থাকবেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পেঁয়াজ সঙ্কটের পর লবণ নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ায় মানুষের মধ্যে লবণ সঙ্কটের ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। যার জন্য ভোক্তারা একসঙ্গে তিন-চার কেজি করে কেনায় ব্যবসায়ীরা লবণের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইনকিলাবের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা জানান, গ্রামের হাটবাজারে লবণ সঙ্কট গুজব ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষ লবণ ক্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছেন। একজনের লবণ কেনা দেখে অন্যজন কয়েক কেজি করে কিনে রাখার প্রয়াস পাচ্ছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লবণ নিয়ে কোনো ধরনের গুজব যাতে না ছড়ায়, সে লক্ষ্যে কাজ করছেন। কোথাও কোথাও পুলিশ মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে লবণ নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

পেঁয়াজকে ছাপিয়ে গতকাল টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে ওঠে লবণ। মঙ্গলবার সকাল থেকে শত শত কেজি লবণ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে। দোকানিরা জানেন না নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের চাহিদা হঠাৎ কেন বাড়ল। ক্রেতারাও এর সঠিক কোনো কারণ জানেন না। তাদের ভাষ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখেছেন, বাজারে এ ধরনের কথা শুনেছেন। সিলেটে লবণ দেড়শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রির খবর মিডিয়ায় পড়েছেন। এ পরিস্থিতিকে গুজব অভিহিত করে ছড়িয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভুল তথ্য ছড়িয়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছেন। গতকাল সরেজমিন ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, মালিবাগ, স্বামীবাগ, মিরপুর, পুরান ঢাকার বিভিন্ন বাজার, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, নিউমার্কেট ও মালিবাগ এলাকার বাজার ও মুদি দোকানগুলোতে শত শত কেজি লবণ বিক্রি হয়ে গেছে। বিক্রেতারা এ কথা স্বীকার করে বলছেন, কোথাও কোথাও দ্বিগুণ দামে বিক্রি হলেও অধিকাংশ বিক্রেতা বলছেন আগের দামেই তারা লবণ বিক্রি করছেন। তবে হঠাৎ চাহিদা কেন বাড়ল, তা তারা জানেন না। আর ক্রেতারা বলছেন, শুনেছি পেঁয়াজের মতো লবণেরও দাম বেড়েছে। এ কারণে আগে আগেই কয়েক কেজি করে লবণ কিনে রাখছেন তারা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকেই কাঁচাবাজারে লবণের দাম বাড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লবণ নেই বলে কোনো কোনো ব্যবসায়ী চড়া দাম হাঁকতে থাকেন।

লবণ সঙ্কট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দেশের লবণ সরবরাহকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান মোল্লা সল্টের মহাব্যবস্থাপক আবদুল মান্নান বলেন, আমি এখন কক্সবাজারে। এখানে চাষিদের কাছেই চার লাখ টনের মতো লবণ মজুদ আছে। বাজারে লবণের দাম নেই। লবণের চাহিদা কম। এ কারণে অনেক চাষি এখনো নতুন মৌসুমের লবণ চাষ শুরু করেননি। আমরা লবণের দাম বাড়াইনি। সরবরাহ ঠিক আছে। মিল আগামী দুই মাস চালানোর মতো লবণ আমাদের হাতে আছে। এসিআই সল্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর বলেন, লবণ সঙ্কট এটা গুজব। সরবরাহের কোনো সমস্যা নেই। আমরা একটি পয়সাও দাম বাড়াইনি। ক্রেতাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পূবালী সল্টের মালিক পরিতোষ কান্তি সাহা বলেন, আমার কাছে যারাই লবণের কথা জানতে চাইছে, তাদের বলছি, কত লাগবে নেন। কোনো অভাব নেই। নারায়ণগঞ্জে অপরিশোধিত লবণের বস্তা (৭৫ কেজি) ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা। এ দামে কৃষকের খরচই ওঠে না। কনফিডেন্স সল্টের মহাব্যবস্থাপক মো. সামসুদ্দিন বলেন, লবণের ঘাটতি তো নেই-ই, উল্টো বিক্রি কম। এর কারণ শুল্কমুক্ত বন্ডের লবণ বাজারে চলে আসছে। দেশি কৃষক ও মিল মালিকেরা বিপাকে আছেন। মিলগুলোও খুব খারাপ অবস্থায় আছে।

গতকাল শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সঙ্কট রয়েছে মর্মে গুজব রটনা করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

এছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি নভেম্বর মাস থেকে লবণের উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে। দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য লবণের চাহিদা কম-বেশি এক লাখ মেট্রিক টন। অন্য দিকে লবণের মজুদ আছে সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন। সে হিসাবে লবণের কোনো ধরনের ঘাটতি বা সঙ্কট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিসিকের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লবণচাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সরকারের সার্বিক সহায়তায় লবণ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে লবণ মৌসুমে (নভেম্বর-মার্চ) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬.৫৭ লাখ মে. টন। কিন্তু বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ ১৮. ২৪ লাখ মে. টন উৎপাদিত হয়েছে। এ বছরের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে লবণের মজুদের পরিমাণ ৬.৫০ লাখ মে. টন। যা প্রায় ৫-৬ মাসের চাহিদার সমপরিমাণ। বিজ্ঞপ্তিতে ব্যবসায়ী, বিজনেস চেম্বার মিডিয়া ও অন্যান্য ফোরামকে লবণ নিয়ে সৃষ্ট গুজব রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

লবণ চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সরকারের সার্বিক সহায়তার ফলে লবণ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের লবণ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রেকর্ড পরিমাণ ১৮ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। ১৫/১১/২০১৯ তারিখ পর্যন্ত দেশে লবণের মজুদের পরিমাণ সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন।

এদিকে লবণ নিয়ে যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে তথ্য অধিদফতর। গতকাল মঙ্গলবার অধিদফতরের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লবণ নিয়ে বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য যেকোনোভাবে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে গুজব ছড়ানোতে লিপ্ত রয়েছে। দেশে লবণের প্রাপ্যতা নিয়েও গুজব ছড়ানোর একটি অপচেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে প্রকৃতপক্ষে দেশে লবণের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন লবণ উৎপাদিত হয়ে বাজারে আসবে। বর্তমান মজুদের সঙ্গে যোগ হবে নতুন উৎপাদিত লবণ। ফলে দেশে লবণের কোনো সঙ্কট নেই এবং এমন কোনো সম্ভাবনাও নেই। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে অবগত করানোর জন্য বিসিকের জেলা কার্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। লবণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশনের জন্য বিসিকের প্রধান কার্যালয়ে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।

এদিকে লবণের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে যেন কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য ঢাকা মহানগর পুলিশসহ (ডিএমপি) সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের মাঠে নামার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বাজার এবং দোকানে দোকানে গিয়ে তল্লাশি চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়ানোর পরই গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতর ও ডিএমপি থেকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। ডিএমপির সব পুলিশ সদস্যদের ওয়্যারলেসে নির্দেশ দেন অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশন) মনিরুল ইসলাম। নির্দেশনা পেয়ে ইতোমধ্যেই পুলিশ সদস্যরা মাঠে নেমে বিভিন্ন দোকানে গিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। আমাদের বরিশাল অফিস জানায়, লবণ নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি)।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায় : নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজার, কাজির দেউড়ি, চকবাজারসহ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দাম আগের মতই আছে। এক কেজি প্যাকেট ৩৫ টাকা আর আধা কেজি প্যাকেট ১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লবণের দাম বাড়ছে এমন গুজব থেকে লবণ বিক্রি বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে এর পেছনে মূল্য কারসাজি বা সিন্ডিকেটের তৎপরতা থাকতে পারে বলেও ধারণা অনেকের।
যশোর ব্যুরো জানায়: প্রশাসন ও লবন কোম্পানীর কর্মকর্তারা বলছেন মূল্য বাড়েনি মোটেও, ¯্রফে গুজব। সন্ধ্যায় যশোরের বড় বাজারে ক্রেতাসাধারণ কিছু কিনুক আর না কিনুক লবন কিনছেন একথা জানালেন ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন। লবন ক্রয়ের হিড়িকে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে যা লবন মজুদ ছিল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) তা শেষ বলে জানা যায়।

রাজশাহী ব্যুরো জানায় : দুপুর পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎ লবন সঙ্কটের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় ক্রেতারা বাজারে লবনের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। গুজবের পেছনে ছুটছে ক্রেতারা। বড় বড় কোম্পানীর লবনের পরিবেশকরা জানান বাজারে লবনের ভাল সরবরাহ আছে। পরিবহনের চলমান অস্থিরতার কারণে হয়তো সরবরাহে কিছুটা বিঘœ হতে পারে। তবে সঙ্কটের কোন কারণ নেই।

ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায় : ময়মনসিংহে মঙ্গলবার দিনভর লবনের দাম বৃদ্ধির গুজবে জনসাধারণ ও প্রশাসনের ভেতরে-বাইরে মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে দুপুর গড়িয়ে বিষয়টি জেলা পুলিশ প্রশাসনের নজরে আসলে লবনের বাজারে তৎপরতা চালায় পুলিশ। ফলে পুলিশী নজরধারীতে অনেক ব্যবসায়ী সুলভ মূল্যে লবন বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

বরিশাল ব্যুরো জানায় : বরিশাল মহানগরীর মত পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠী থেকে লবনের মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কিত গুজবের খবর পাওয়া গেছে। আর এ গুজবের রেশ ধরতে উপজেলা প্রশাসন থেকে বিক্রি নিয়ন্ত্রণেরও উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। তবে প্রশাসনের তরফ থেকে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও লবনের সরবারহ ও মজুত ঘাটতি নেই ।

খুলনা ব্যুরো জানায় : লবণের মূল্য ২০০ টাকায় পৌছাবে শুনে বাজারে দৌড়াতে থাকেন শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। ৫ থেকে ১০ কেজি যার যা সামর্থ্য আছে সর্বোচ্চ কেনার চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে অনেক ব্যবসায়ী লবণ মজুদ করতে থাকেন আরও দাম বৃদ্ধির আশায়।

খুলনা জেলা প্রশাসন থেকে জানান হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে কিছু সুবিধাবাদী মানুষ। এই গুজব থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে হবে।

ছাগলনাইয়া (ফেনী) : লবনের দাম বৃদ্ধির গুজবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাগলনাইয়া থানার পুলিশ পৌর শহরের জমদ্দার বাজারে বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালায়। এসময় ২ জন ক্রেতাকে ২৫ কেজি লবনসহ আটক করা হয় বলে ছাগলনাইয়া থানার উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেন জানান।

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. নাসরীন পারভীন বলেন, লবনের দাম বৃদ্ধির গুজব শুনে বাজারে গিয়ে দোকানীদের সতর্ক করেছি কেউ যেন বেশী দামে এবং কাউকে বেশী পরিমানে লবন না দেয়। আর বণিক সমিতি ও ইউপি চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে তারা যেন মাইকিং করেন যাতে জনগন লবনের দাম বৃদ্ধির গুজবে কান না দেন।

স্টাফ রির্পোটার গাইবান্ধা: জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, পলাশবাড়ি, সাদুল্যাপুর উপজেলা সদর এবং গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারগুলোতে লবণের মূল্য বৃদ্ধি এবং দুষ্প্রাপ্যতার গুজব সকাল বেলা থেকেই ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মতিন ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে কথা বললে তারা জানান, এ ধরণের গুজবের কোনো ভিত্তি নেই এবং লবণের কোনো সংকট বা মূল্য বৃদ্ধিরও কোনো কারণে নেই। তবে এব্যাপারে বাজার মনিটরিং করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানান তারা।

ফেনী : এ বিষয়ে ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক পারভেছুল ইসলাম হাজারী বলেন, এক শ্রেনীর গুজব প্রিয় লোক আছে এসব বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। বাজারে পর্যাপ্ত লবন মজুদ আছে কোন ঘাটতি নেই।

নীলফামারী : গতকাল বিকেলে জেলা সদরের গাছবাড়ী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে সাধারণ মানুষজন হুড়াহুড়ি করে শুধু দোকান থেকে লবনেই কিনছেন। এদিকে জেলার ডিমলা উপজেলাও একই অবস্থা বলে জানা গেছে।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) : উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন বাজারে মাইকিং করা হয়েছে এবং কয়েকটি লবনের দোকানিকে অহেতুক দাম বৃদ্ধি করার জন্য জরিমানা করা হয়েছে। উল্লাপাড়ায় অন্তত ২ মাসের লবন মজুদ রয়েছে।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর): লবনের মূল্য বৃদ্ধির খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো সরিষাবাড়ীর দোকান গুলোতে ৫০ থেকে ৭০/৮০ টাকা দামে বিক্রির হিড়িক পড়লে প্রশাসন মাঠে নামলে তৎক্ষনাত বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে।

লালপুর (নাটোর): লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, লবনের কোন ঘাটতি নেই, এইটা একটি গুজব। যদি কেউ লবনের অধিক দাম নেই এবং এই ধরনের গুজব ছড়াই আমরা তা প্রতিরোধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

মাদারীপুর : সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের হাউসদী বাজার ও তালতলা বাজারে অতিরিক্ত দামে লবন বিক্রি শুরু করলে সন্ধায় পুলিশ ওইবাজারে গেলে দোকানদাররা তাৎক্ষনিক দোকান করে দেয়। এদিকে কালকিনি উপজেলার ফাসিয়াতলা বাজারে লবন অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার দায়ে স্থানীয় দোকান দাস স্টোরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) : বিভিন্ন জায়গায় লবন কিনতে গিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে, এমন সব গুজবে নেছারাবাদের হাটেবাজারে লবন কিনতে দোকানে ছুটছে মানুষ। এদিকে বাজারে লবনের দাম বৃদ্ধির গুজবের কথা শুনে তাৎক্ষনিক সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার আবদুল্লা আল মামুন বাবু মাইকিং করে অপপ্রচারে কান না দেয়ার জন্য জনগনের প্রতি আহবান জানান।

ঠাকুরগাঁও : জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে লবণসহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ স্বাভাবিক ও পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু একটি কুচক্রি মহল লবণের দাম নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে যে লবণের দাম অনেক বৃদ্ধি হবে। এই গুজবে কান দিয়ে শহরের বাজারগুলোতে অতিরিক্ত মূল্যে লবণ বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : হঠাৎ করে এভাবে লবনের বেচাকেনা বৃদ্ধিতে লবন ডিলার, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ী বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ক্যাশ মোমো ছাড়া লবন নিতে বারণ করেছেন। তিনি আরো বলেন অতিরিক্ত দামে লবন বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Aashiqur Jaman ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩২ এএম says : 0
পর্যাপ্ত পরিমানে লবণ উৎপাদন হয় , মজুদও আছে এখন প্রশ্ন হলো ৭/৮ টাকার লবণ ৩৫ টাকা হবে কেন ?
Total Reply(0)
M Raju ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৩ এএম says : 0
যারা ভয়ে আগে ভাগেই প্রোয়জনের চেয়ে বেশী দামে বেশী লবন কিনেছেন তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা
Total Reply(0)
Mir Sharif Uddin ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৩ এএম says : 0
যারা গুজব রটিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
Total Reply(0)
Muhammed Miraz ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৩ এএম says : 0
রেখেছো বাঙালি করে,মানুষ করোনি।,,,,,,,,,যদি মানুষ হইতো তা হলে লবণ কিনতে ব্যস্ত হইতো না,যারা গুজব ছড়াইছে তাদের খুঁজে পিটাইতো।
Total Reply(0)
Nissan Jasim ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৪ এএম says : 0
এ সকল ক্রেতাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা উচিত। জেল হাজতে নিয়ে এদের মেন্টরিং, মনিটরিং ও কাউন্সিলং করানো দরকার।
Total Reply(0)
Ajoy Das ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৫ এএম says : 0
অফিসের সহকর্মীকে দেখলাম আজ অফিস টাইমে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে আগে লবন কিনে বাসায় রেখে আসছে
Total Reply(0)
MD Mehedi Hassan ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৫ এএম says : 0
আফসোস লাগে এই জাতির জন্য এই জাতির ভবিষ্যৎ সত্যিই অন্ধকার
Total Reply(0)
গোলাম মাওলা মোললা ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৬ এএম says : 0
ভোগ্যপণ্য যারা কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে ঐ সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীদের ডায়রেক ক্রসফায়ার চাই
Total Reply(0)
Alvi Mahmud ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৬ এএম says : 0
যারা আজকে গুজবে কান না দিয়ে লবন কিনেন নাই... তারাই দেশের সুনাগরিক
Total Reply(0)
খাঁন মুহাম্মাদ রাজীব ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৭ এএম says : 0
যারা প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণ তিনগুন চারগুণ লবন আজকে কিনেছেন তারা সত্যিকার অর্থে পরকালের চিন্তায় চিন্তিত নন। একজন পয়সা ওয়ালা মানুষ দশ জনের লবন একাই কিনে নয়জন মানুষের হক নষ্ট করেছেন। এমন অনেক মানুষ ও আজ বাজার ঘুরে এক কেজি লবন পায়নি যার সত্যিই বাসায় রান্নার লবণ নাই।
Total Reply(0)
Mijanur Rahman ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৭ এএম says : 1
ধন্যবাদ প্রশাসন কে।যারা জনগনের পরিশ্রমের টাকা লুট করতে চাইছিল,তাদের গ্রেফতার করার জন্য।জয় বাংলা।
Total Reply(0)
ash ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ৪:৪৫ এএম says : 0
KI OPODARTHO SHORKAR AKTA, SYNDICATE DER HANDLE KORTE PARCHE NA ! MONE HOCHE SYNDICATE ER HAT ONEK LOMBA USA TO UK PORJONTO, NA HOLE AMON HOTE PARE NA
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন