বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

হংকংয়ের মানবাধিকার রক্ষায় মার্কিন বিল পাস, চীনের নিন্দা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৪ পিএম

হংকংয়ের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে চীনের হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে গণতন্ত্রপন্থীদের সমর্থনে একটি সর্বসম্মত বিল পাস হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) পাস হওয়া বিলটিতে হংকংয়ের মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়ে মার্কিন সমর্থনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষের দমনপীড়ন থেকে হংকং-এর গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের সুরক্ষায় এ বিল পাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে অঞ্চলটিতে বিক্ষোভ চলছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

সিনেটে কণ্ঠভোটে পাস হয় ‘হংকং হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি অ্যাক্ট’ নামের বিলটি। এখন প্রতিধি পরিষদের তোলা হবে বিলটি। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অনুমোদন পেলে এটি প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হবে।

কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চললেও সম্প্রতি হংকং-এর গণতন্ত্রপন্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। গত ১৮ নভেম্বর ভোর থেকেই হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি এলাকায় বিক্ষোভকারীদের তীব্র সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ। এক পর্যায়ে ব্যারিকেডের পেছন থেকে পুলিশের দিকে পেট্রোল বোমা ও তীর ছুড়ে মারে আন্দোলনকারীরা। এতে ইউনিভার্সিটির প্রবেশপথে বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই পুলিশের পক্ষ থেকে বিক্ষোভকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, পুলিশের ওপর হামলা বন্ধ করা না হলে তারা বিক্ষোভরতদের ওপর গুলি ছুড়বে। এমন পরিস্থিতিতেই পার্লামেন্টে বিল এনে হংকং-এর বাসিন্দাদের মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়ে সমর্থনের অঙ্গীকার করে যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব পক্ষের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সোমবার হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের পর সংস্থাটির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, যে কোনও সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য।

ফেডেরিকা মোঘেরিনি বলেন, সংযম প্রদর্শন এবং উত্তেজনা নিরসনের প্রচেষ্টায় সব গঠনমূলক অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপগুলো অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। হংকং-এর বাসিন্দাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের মতো মৌলিক অধিকারগুলোর সুরক্ষা অবশ্যই বহাল রাখতে হবে।
এদিকে গণতন্ত্রপন্থীদের বিরোধিতায় পার্লামেন্টে বার্ষিক পরিকল্পনা প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছেন হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম। বুধবার দু'দফা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পরে পূর্বে ধারণ করা ভিডিও ভাষণে বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

বুধবার বার্ষিক পরিকল্পনা প্রকাশের জন্য পার্লামেন্টে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে থাকেন হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম। উপর্যপুরি প্রশ্নবান, এক সময় হট্টগোলে রূপ নেয়। বাধ্য হয়ে বক্তব্যে বিরতি দিয়ে পার্লামেন্ট ছাড়েন ক্যারি। আনুমানিক ২০মিনিট পর আবারও পার্লামেন্টে ফেরেন তিনি। তোপের মুখে দ্বিতীয় দফায়ও পার্লামেন্ট ছাড়েন তিনি। পরে পূর্বে ধারণ করা ভিডিওতে বার্ষিক পরিকল্পনা তুলে ধরেন প্রধান নির্বাহী।

হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বলেন, বিরোধীরা হংকংকে মারাত্মক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। চার মাসে তাদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ৪শ' বিক্ষোভে ১ হাজার ১শ' মানুষ আহত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আটক করা হয়েছে ২ হাজার ২শ' জনকে। হংকংয়ের নিরাপত্তা এবং জনগণের অধিকার সংরক্ষণে এক দেশ দুই নীতিই আমাদের রক্ষাকবচ। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করবে না প্রশাসন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, ভাষণে মূল সংকট এড়িয়ে গেছেন ক্যারি লাম। তার এ ভাষণের কোনো অর্থ হয়নি। বলেছিলেন আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। সংকট সমাধানে এখনো কোনো পদক্ষেপ তিনি নেননি। সংকটের রাজনৈতিক সমাধান চাই আমরা।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, গেলো চার মাস ধরে হংকংয়ের তরুণরা স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন করছে। অন্যায়ভাবে তাদের সেই স্বপ্ন মিশিয়ে দেয়া যাবে না। হংকংয়ের জনগণের দাবির সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ, সিনেট সর্বসম্মতভাবে একমত। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য রক্ষার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র যদি মানবাধিকার নিয়ে কথা না বলে তাহলে আমরা আমাদের নৈতিকতা হারাবো।

এদিকে হংকং-এর বিক্ষোভে সহিংসতার তীব্র সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লিউ জিয়াওমিং। লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি মনে করি হংকং সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুব চেষ্টা করছে। তবে পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্যই হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। এই অস্থিরতা থামানোর মতো পর্যাপ্ত সমাধান ও ক্ষমতা আমাদের রয়েছে।

চীনপন্থী রাজনীতিক ও হংকং আইন পরিষদের সাবেক প্রধান জেসপার সাং বলেছেন, হংকং-এর বিক্ষোভকে ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ পরিস্থিতিতে রূপান্তর করা হবে! আর বেইজিং চেয়ে চেয়ে তা দেখবে! এমনটা হবে না। পরিস্থিতি দিন দিন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন