শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতার মধ্যেই লবণের দাম বৃদ্ধি নিয়ে হুলুস্থুল কা- ঘটে গেছে। দেশে পর্যাপ্ত এবং চাহিদা পূরণের মতো লবণ মজুদ থাকা সত্ত্বেও কে বা কারা লবণ সংকটের গুজব ছড়িয়ে দাম বৃদ্ধি করিয়ে দেয়। গত মঙ্গলবার দেশের প্রায় সর্বত্র এ গুজব ছড়িয়ে পড়লে দোকানে দোকানে লবণ কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় লেগে যায়। এ সুযোগে দোকানদাররাও অধিক মূল্যে লবণ বিক্রি শুরু করে। কোথাও কোথাও লবণের কেজি ১০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। কোনো কোনো এলাকায় ক্রেতারা লবণ কিনতে পারেনি। লবণ না পেয়ে কোথাও কোথাও ভাঙচুরের মতো ঘটনাও ঘটেছে। বলা যায়, লবণ নিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গুজব ছড়ানোর পরপরই শিল্প মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মানুষকে সচেতন হতে বলা হয়। গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তৎপরতা চালায়। ইতোমধ্যে পুলিশ ১১৬ জনকে আটক করেছে। এছাড়া ভ্রাম্যমান আদালত ২৭ জনকে জরিমানা ও ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছে।
এ বছর দেশে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। ১৬ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন। এ হিসেবে পাঁচ মাসেরও বেশি সময়ের লবণ দেশে মজুদ আছে। তারপরও লবণ সংকটের গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। কারা এ ঘটনা ঘটালো তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একশ্রেণীর লবণ আমদানিকারক এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। সাধারণত কোরবানির ঈদের সময় লবণ ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণী কৃত্রিম লবণ সংকট সৃষ্টি করে। তাদের লক্ষ্য বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করা। মহলটি গত বছর এই উদ্দেশ্যে লবণ আমদানির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে দেন-দরবার করে। তারা একজন মানুষের প্রতিদিনের লবণের চাহিদার পরিমাণ বাড়িয়ে দেখিয়ে মন্ত্রণালয়কে আমদানি করার যুক্তি দেখিয়েছিল। মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখে যুক্তরাষ্ট্র ও উন্নত দেশগুলোর যে চাহিদা তার চেয়ে বাংলাদেশে লবণের চাহিদা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় এসব তথ্য ঐ ব্যবসায়ি মহলটির সামনে তুলে ধরলে তারা পিছিয়ে যায়। এ থেকে প্রতীয়মাণ হয়, পর্যাপ্ত লবণ মজুদ থাকা সত্ত্বেও লবণ ব্যবসায়ীদের একটি চক্র লবণ আমদানি করার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। তাদের স্বার্থ হাসিল করার জন্যই লবণ সংকটের গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে তারা হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে। এটা এক ধরনের ডিজিটাল ষড়যন্ত্র। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিগত এক মাসের অধিক সময় ধরে পেঁয়াজ সংকট ও এর দাম সর্বকালের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। পেঁয়াজের কেজি আড়াইশ’ টাকার অধিক মূল্যে বিক্রি হয়। সাধারণ মানুষের অনেকে পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। সরকার কোনোভাবে এই দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জরুরি ভিত্তিতে বিদেশ থেকে এয়ার কার্গোতে করে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। এতে দাম কিছুটা কমলেও তা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরেই রয়ে গেছে। পেঁয়াজের এই সংকটের সুযোগে অসাধু সিন্ডিকেট কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়ে যায়। চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কেজি প্রতি পাঁচ থেকে দশ টাকা বৃদ্ধি পায়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, দেশে পর্যাপ্ত চালের মজুদ থাকা সত্ত্বেও কেজি প্রতি চার-পাঁচ টাকা বেড়ে গিয়েছে। কেন দাম বৃদ্ধি পেল, এর কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এই দামবৃদ্ধির ধারাবাহিকতার মধ্যেই লবণ সংকটের গুজব ছড়িয়ে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস, তখন এই গুজব তাদের কাছে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে ওঠে। আশার বিষয়, সরকার এক্ষেত্রে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নেয়ায় আপাতত তা সামাল দেয়া গেছে। তবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে। কখন কোন পণ্যের দাম নিয়ে এমন তেলেসমাতি কা- শুরু হয়, তা নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। এমন আতঙ্ক ও সংশয় থাকার একমাত্র কারণ, সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এক্ষেত্রে যেন কোনো অভিভাবক নেই। ব্যবসায়ীদের খেয়াল খুশির কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে আছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার ওপর সরকারের সাফল্য ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে। সাম্প্রতিক সময়ে এক্ষেত্রে সরকারের যথাযথ দৃষ্টি আছে বলে মনে হচ্ছে না। প্রতিদিনই জিনিপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করে চলেছে। খাদ্যপণ্যের সংকট না থাকলেও দাম বৃদ্ধি করছে। বাজার পর্যবেক্ষণে সরকারে শক্ত অবস্থান না থাকার কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা যখন তখন জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে দিতে পারছে। এতে তাদের সব ক্ষোভ সরকারের ওপর গিয়েই পড়ছে। সরকার বিষয়টি আমলে নিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। যদি এমন হতো, জিনিসপত্রের সরবরাহ কম, সংকট রয়েছে, তাহলে সাধারণ মানুষ দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করত। আমরা মনে করি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এখনই কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের উচিত হবে অনতিবিলম্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মনিটরিং টিমের মাধ্যমে বাজার পর্যবেক্ষণ এবং জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযান শুরু করা। অসাধু সিন্ডিকেট ও মজুদদারদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন