শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজধানী রিকশার অভয়ারণ্য!

‘মসজিদের শহর’ ঢাকা এখন ‘রিকশার শহর’

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

পৃথিবীর মানুষের কাছে এক সময় পরিচিত ‘মসজিদের শহর ঢাকা’ এখন যানজট আর রিকশার শহরে পরিণত হয়েছে। ‘সীমিত গণতন্ত্র অধিক উন্নয়ন’ থিউরিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ইউরোপীয় মডেলে উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিতে রাজধানীতে ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, এলিভেটেড হাইওয়ে হচ্ছে; কিন্তু যানজটের কারণে রাজধানীর মানুষের যানজট ভোগান্তি কমছে না। ১০ বছর আগে ঢাকার যে পথ অতিক্রম করতে ৩০ মিনিট সময় লাগতো; এখন সেই পথ অতিক্রম করতে হয় দুই ঘন্টায়। এটা ‘এগিয়ে যাওয়া’ না ‘পিছিয়ে পড়া’ সে বিতর্কে না গিয়েই বলা যায় যানজটের কারণে রাজধানীর মানুষ পিছিয়ে পড়ছে। এই পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে যানজট; আর যানজটের নেপথ্যে রিক্সার বাড়বাড়ন্ত। এমনিতেই অপরিকল্পিত নগরায়ণ তার উপর পথে রিকশার যন্ত্রণা যন্ত্রচালিত যানবাহনের গতি থামিয়ে দিচ্ছে। নিয়ম নীতি না মানায় রাজধানী ঢাকা কার্যত অবৈধ রিকশার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে গেছে।

রাজধানী ঢাকায় যানজটের পরিধি বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। জানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীতে অতিরিক্ত রিকশা বাহন। রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় রিকশার সংখ্যা ঢের বেশি। এই বাড়তি রিকশার পেছনে রয়েছে অবৈধ্য বাণিজ্য। নতুন যন্ত্রণা হিসেবে আবির্ভাব ঘটেছে শহরের মহল্লার অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়ানো ব্যাটারি চালিত রিকশা। প্রথমে এ ধরনের রিকশা রাজধানীতে দুয়েকটা ছিল। বর্তমানে বানের মত হু হু করে যেন বাড়ছে ব্যাটারি চালিত রিকশার সংখ্যা। এতে চালকদের কায়িক শ্রম অনেকটা কমেছে বটে; তবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি। গতির কারণে পথচারীদের জন্য বিপজ্জনক এই রিকশার ব্রেক সিস্টেম এমন ভয়ানক যে যন্ত্রচালিত যানবাহনের দুর্ঘটনার মতোই এই রিকশার দুর্ঘটনা হয়ে থাকে ভয়াবহ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীকে রিকশার অভয়ারণ্যে পরিণত করার নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের অবৈধ রিকশা বাণিজ্য। পরিসংখ্যান বলছে দুই সিটি কর্পোরেশনের দেয়া বৈধ লাইসেন্সধারী রিকশার তুলনায় ১০ গুণ বেশি রিকশা ঢাকা মহানগরীতে চলাচল করছে। অনিবন্ধিত এসব রিকশায় রাজধানীর যানজট বাড়ার পাশাপাশি বিশাল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সিটি করপোরেশন। এমনকি রিকশার বৈধতার বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নেই অধিকাংশ রিকশাচালকের। পরিবহন সেক্টরে যেমন সিন্ডিকেট তেমনি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের রিকশার লাইন্সেস কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটে শ্রমিক লীগ, রিকশা শ্রমিকলীগ ছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগও প্রভাবশালী নেতারা ‘রিকশা লাইসেন্স বাণিজ্য’ করছেন। এমনকি ঢাকা সিটিকে চলাচল করছে হাজার হাজার রিকশা পেছনে সিটি কর্পোরেশনের নেমপ্লেট ও নম্বর নেই। সেখানে বিভিন্ন সংগঠনের নাম লেখা দেখা যায়। সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও অন্তত ৩০টি সংগঠন ও সমিতির দেয়া রিকশায় নাম্বার প্লেট লাগিয়ে অবৈধ রিকশা রাজধানীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

অনুসন্ধান করে জানা যায়, রাজধানীর রিকশা চলাচল নিয়ে যে চক্র গড়ে উঠেছে তা ক্যাসিনো চক্র এবং বাস মালিক শ্রমিকদের সংগঠনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধে নানা সময় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়; পরিবহন সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সড়ক মহাসড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকরা করা হয়েছে। কিন্তু রিকশা নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ক্যাসিনোকা- বন্ধ এবং দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের মতো সিটি কর্পোরেশনে অবৈধ রিকশা বন্ধের অভিযান পরিচালিত হলে কিছুটা হলেও অবৈধ রিকশা কমে যাবে। রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঝে মাঝে আইনশৃংখলা বাহিনী রিকশা আটক অভিযানে নামেন; কিন্তু সে রিকশার কিছু আটক রাখা হয় কিছু চক্রাকারে হাতবদল হয়ে আবার রাস্তায় নামে।

জানা যায়, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ১৯৮৭ সালে নতুন রিকশার লাইসেন্স প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। ওই সময় রাজধানীতে মোট নিবন্ধিত রিকশা ছিল ৮৭৮১১টি। নতুন নিবন্ধন দেয়া বন্ধ থাকায় বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারি কোন সংস্থার কাছে রাজধানীতে অনিবন্ধিত রিকশার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে কিছুদিন আগে বুয়েটের এক গবেষণায় রাজধানীতে এরকম রিকশার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি বলে জানানো হয়।
দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম শহর রাজধানী ঢাকা। অথচ যারা রিকশা চালাচ্ছেন সেই চালকদের অধিকাংশেরই নিবন্ধন বা লাইসেন্স সম্পর্কে নেই কোন জ্ঞান। রিকশা নিয়ে গড়ে উঠা প্রভাবশালী চক্রের বিভিন্ন সমিতি বা সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া কথিত নম্বর প্লেটকেই লাইসেন্স বলে মনে করেন। দেখা গেছে, রাজধানীতে চলাচল করছে এমন অনেক রিকশা পেছনে এ ধরনের দুই থেকে পাঁচটি নেমপ্লেটও দেখা যায়।

এদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার রাইটস (বিলস) নামে একটি শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠানের জরিপে বলা হয়েছে ঢাকার ৯৪ শতাংশ রিকশাচালকই অসুস্থ। এদের মধ্যে ৩০ শতাংশ জন্ডিসে আক্রান্ত। জরীপে বলা হয় রাজধানীতে রিকশা চালিয়ে আয় রোজগার আগের চাইতে বাড়লেও রিক্সাচালকদের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি। বিশেষ করে তাদের বিশ্রাম, খাবার দাবার, বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের সঙ্কটে ভুগতে হয় প্রকটভাবে। রিক্সাচালকদের অনেকের সঙ্গে কথা বলেও এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, যদি অন্য কোথাও কাজের সুযোগ করে দেয়া হয় তাহলে রিকশা চালানোর মতো অমানুসিক কাজ করতে হতো না। কাজেই রিকশা কমানোর জন্য রাজধানীতে সমন্বিত ব্যবস্থায় পরিবহন চালু করার উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন; তেমনি রিকশার দৌরাত্ম কমানো উচিত।

রাজধানীতে মানুষের যানবাহনের গতি যানজটে ঠেকিয়ে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়। রিকশা রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণ। অবৈধ রিকশার লাগাম টেনে ধরতে অবৈধ রিকশা বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের আওতায় আনতে হবে। ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ জরুরি।

রাস্তা দখল মুক্ত করে ব্যবহারযোগ্য করা, ট্রাফিক পুলিশ কয়েক গুণ বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইন ও নিয়ন্ত্রণ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়েও রাজধানতে যানজট অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে সবার আগে টেনে ধরতে হবে অবৈধ রিকশার লাগাম। কয়েক বছর ধরে নগরের অলিগলিতে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালু হয়েছে সেগুলো বন্ধে আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে না পারলে কোনো মেগা প্রকল্পেই জাতির উন্নয়ন ঘটাতে পারবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
নাজিম উদ্দিন ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
এই সুযোগে রিক্সাওয়ালারাও পেয়ে বসেছে
Total Reply(0)
Mohammad Shahidul Islam Shahid ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
ন্যায্য আন্দোলনে হেলমেট বাহিনী নামানো হয় অথচ অন্যায্য আন্দোলনে আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীও নামানো হচ্ছেনা।
Total Reply(0)
Farhad Sarker ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
ছাত্রলীগকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।
Total Reply(0)
Arif Khan Rafi ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
একের পর এক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত জনজীবন আর কত ক্ষমতার দরকার...
Total Reply(0)
Moloy Sarker ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের সাথে প্রতিটা জেলা শহরের সরাসরি রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে পারলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
Total Reply(0)
মেহেদী হাসান ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
দেশে অচিরেই সাইকেলের জন্য অালাদা লেন করা হোক গণপরিবহনের উপর থেকে চাপ কমানো হোক
Total Reply(0)
আবির ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
সারা দেশে বিআরটিসি নামানো হোক
Total Reply(0)
shaik ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ৪:৩২ এএম says : 0
RIKSHA is the mane Problem of Dhaka City. JAM er prodhan karon e holo Riksha. Dhaka City hoitay RIKSHA Tulay dewaa otibo JORURI
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন