বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

মহীয়সী নারীদের জীবনকথা

হাফসা বিনতে সীরীন | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ৫:২৭ এএম

॥ এক ॥

মক্কা, মদীনা, কুফার ন্যায় বসরা নগরীও ছিল দ্বীনের এক উর্বর ভূমি। এ উর্বর ভূমিতে জন্ম নিয়েছেন হাজারো আলেম, মুহাদ্দিস, ফকীহ, ক্বারী, আরবী ব্যাকরণবিদ, আবেদ, যাহেদ। হাসান বসরী, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন, রাবেয়া বসরী, মুয়াযা আল আদাবিয়া, ছিলা ইবনে আশইয়াম, ইয়াস ইবনে মুয়াবিয়া এ মহামনীষীগণ এ বসরা নগরীরই সন্তান। হাফসা বিনতে সীরীনও তাদের একজন। নারী তাবেয়াদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম সারির। তিনি ইলম, প্রজ্ঞা, ইবাদাত-বন্দেগী, পরহেযগারী ইত্যাদিতে হাসান বসরী ও আপন ভাই মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের সমকক্ষ। নবীজীর একান্ত খাদেম হযরত আনাস রা.-এর সাথে ছিল তার পারিবারিক সম্পর্ক। তাঁর কাছ থেকে হাফসা বিনতে সিরীনের ভাই-বোন সকলে ইলম, আমল, আখলাক শেখেন।
নুসায়বা বিনতে কা‘ব নামে একজন বড় সাহাবিয়া ছিলেন। নবীজীর সাথে অনেক যুদ্ধে শরীক ছিলেন। অসুস্থদের সেবা করতেন। আহতদের চিকিৎসা করতেন। নবীজীর কন্যা ইন্তেকাল করলে তাঁকে তিনিই গোসল করান। মৃতের গোসলের পদ্ধতির ক্ষেত্রে তাঁর হাদীসই মূল। ইবনে আবদুল বার রাহ. বলেন- তিনি নারী সাহাবীগণের মধ্যে উপরের তবকার সাহাবিয়া ছিলেন। হাফসা বিনতে সীরীন এ মহান সাহাবিয়া থেকেও ইলম শেখেন এবং তাঁর আমল, আখলাক ও প্রজ্ঞা দ্বারা আলোকিত হন। বসরাতে ছিলেন আরেক মহান তাবেয়ী আবুল আলিয়া রুফাই ইবনে মেহরান। তাবেয়ীদের মাঝে ইলম, আমল ও প্রজ্ঞায় যারা শীর্ষে, তিনি ছিলেন তাদের একজন। আবু বকর ইবনে আবু দাউদ বলেন, সাহাবীদের পর কুরআন সম্পর্কে আবুল আলিয়া থেকে বেশি জ্ঞানী কেউ নেই। হাফসা বিনতে সীরীন এ মহান তাবেয়ী থেকেও ইলম অর্জন করেন। এছাড়াও বসরার অন্যান্য আলেম থেকেও ইলম অর্জন করে। অসংখ্য ছাত্র তার থেকে ইলম আহরণ করে। ঐ যুগের বড় বড় আলেম তার থেকে ইলম অর্জন করতে আসেন। আইয়ূব আসসাখতিয়ানী, খালিদ আলহাযযা, আছিম আল আহওয়াল, আবদুল্লাহ ইবনে আওন, কাতাদা, ইবনে সীরীন, হিশাম ইবনে হাসসান, কাযী ইয়াস ইবনে মুয়াবিয়া; যারা ছিলেন ঐ যুগের বিদগ্ধ প-িত মুহাদ্দিস, যারা ছিলেন ঐ যুগের ইলমের ইমাম। এরা সকলে তার ছাত্র। তার কাছ থেকে হাদীস অর্জন করেন।
সম্ভবত হাদীসের এমন কোনো কিতাব পাওয়া যাবে না, যেখানে তার হাদীস নেই। হাদীসশাস্ত্রে যেসব ব্যক্তি শীর্ষ চূড়ায় উন্নীত, যাদের হাদীস গর্ব সহকারে হাদীস বিশারদগণ বর্ণনা করতেন হযরত হাফসা এদের অন্যতম। হাদীসের ক্ষেত্রে তিনি যেমন বিদগ্ধ প-িত ছিলেন তেমনিভাবে জ্ঞানী ছিলেন কুরআনের বিষয়েও। কুরআন পাঠের অনেক নিয়মনীতি আছে। মদ-গুন্নাহ, মাখরাজ, সিফাত, ওয়াকফ-ওয়াস্ল-সহ অনেক বিষয় রয়েছে, যার কায়দা-কানুন অনেক। আবার কুরআনের অসংখ্য শব্দ এমনও রয়েছে, যা বিভিন্নভাবে পড়া যায়, যাকে পরিভাষায় ‘কিরাত’ বলে। এটা স্বতন্ত্র এক বিরাট শাস্ত্র। হযরত হাফসা এ শাস্ত্রেও পা-িত্য অর্জন করেন; বরং মাত্র বার বছর বয়সেই এ শাস্ত্র আয়ত্ব করেন।
হাফসা বিনতে সীরীন হলেন মহান তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন-এর বোন। ইবনে সীরীন ইবাদাত-বন্দেগীসহ যাবুীয় বৈশিষ্ট্যে হাসান বসরীর সমকক্ষ; বরং কোনো কোনো বৈশিষ্ট্যে তিনি এগিয়ে। দু’জন একই সময়ের এবং একে অপরের বন্ধু। এ ইবনে সীরীনের মত মহাপ-িতও কুরআনের কোনো কোনো বিষয়ে বোন হাফসার শরণাপন্ন হতেন। বর্ণনাকারী বলেন, কুরআনের পাঠরীতির কোনো বিষয়ে ইবনে সীরীনের খটকা হলে বলতেন, যাও তোমরা হাফসাকে জিজ্ঞেস কর। আর সে কীভাবে পাঠ করে শোন।
আর ইবাদত-বন্দেগীতে তিনি এমন ছিলেন, যা আমাদের জন্য অবিশ্বাস্য। হিশাম বলেন, তার নামাযের ঘরে জোহরের সময় যে প্রবেশ করতেন আর বের হতেন না। ইবাদত-বন্দেগীতে ডুবে থাকতেন। সেখানে আসর, মাগরিব, ইশা, ফজর পড়ে যখন ভালোভাবে সূর্য উদিত হত তখন নামায পড়ে বের হতেন। এসময় অযু গোসল ও ঘুম সেরে নিতেন। এরপর যখন যোহরের সময় হত তখন পুনরায় নামাযঘরে চলে যেতেন। মাহদী ইবনে মায়মূন বলেন, হাফসা তার নামাযের ঘরে ত্রিশ বছর ছিল; তা থেকে কোনো প্রয়োজন ছাড়া বের হত না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন