বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অপপ্রচারে কান দেবেন না সশস্ত্র বাহিনী দিবসে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুজবে কান না দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। অন্যদিকে বিকেলে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। সশস্ত্র বাহিনীকে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে কাজ চলছে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আলাদা ইনস্টিটিউট, একাডেমি ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির শুরুতে দেশের সকল সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদসমূহে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝেমধ্যে আমরা দেখি, অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়। আমি সবাইকে একটা কথা বলব, এই অপপ্রচারে কান দেবেন না। বিভিন্ন অপপ্রচার, বিশেষ করে পেঁয়াজ, লবণ প্রভৃতির সংকটের অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এটাা করবে আমি জানি, এটা স্বাভাবিক। কাজেই সেটাকে ােকাবিলা করেই আমাদের চলতে হবে, আমরা সেভাবেই চলছি। দেশের একটি স্বার্থান্বেষী মহলের পেঁয়াজ, লবণ ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার সাম্প্রতিক অপচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য এবং সশস্ত্র বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৯ উপলক্ষে এই সংবর্ধনার আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকার কাজ করছে। শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখতে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সশস্ত্র বাহিনীকে কাজ করে যেতে হবে।

সেনা সদস্যদের কাজের প্রশংসা করে এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগও সেনা সদস্যরা মোকাবিলা করছেন। এছাড়া রোহিঙ্গা সদস্যদের আশ্রয় ও নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়েও তারা প্রশংসনীয় কাজ করছেন। দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রশংসা পেয়েছেন। সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সিলেট, কক্সবাজারের রামু ও বরিশালে পৃথক তিনটি পদাতিক ডিভিশন গড়ে তোলা হয়েছে। বিস্তীর্ণ সমুদ্রসীমা ব্যবহারে নৌবাহিনী কাজ করছে। দেশে তাদের যুদ্ধজাহাজ বানানোর কাজ চলছে। বিমানবাহিনীর জন্য বিভিন্ন উন্নত উপকরণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি ও আধুনিক উপকরণের মাধ্যমে প্রতিটি বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আলাদা ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আমাদের মিলিটারি একাডেমি আজ বিশ্বে প্রশংসিত। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। নিজেরা নিজেদের দেশ গড়ে তুলতে চাই। কারও থেকে সাহায্য নিয়ে আর চলতে চাই না।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপিত

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পু¯পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীকে পৃথক পৃথকভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পু¯পস্তবক অর্পণকালে শহীদদের স্মরণে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পু¯পস্তবক অর্পণ শেষে তারা শিখা অনির্বাণে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে এসে পৌঁছলে তাদেরকে স্বাগত জানান তিন বাহিনী প্রধানগণ এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার।
মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আবু মোজাফ্ফর মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে শিখা অনির্বাণে পু¯পস্তবক অর্পণ করেন। শিখা অনির্বাণে পু¯পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে গমন করেন। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং মহাপরিচালকবৃন্দ। সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্ধারিত সংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান করেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট-এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।

যশোর ব্যুরো জানায় : যশোরে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটির ব্যবস্থাপনায় বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে ৪৮তম সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হয়েছে। এদিন সকালে এরিয়া কমান্ডার, যশোর এরিয়া ও জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, ৫৫ পদাতিক ডিভিশন মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, এসবিপি, এসজিপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান এর এয়ার অধিনায়ক, এয়ার ভাইস মার্শাল মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, বিএসপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সশ্রস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ ‘রক্ত ঋণ’ এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে অত্র অঞ্চলের বীরমুক্তিযোদ্ধা, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমন্ডলী ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ শাহীন কলেজ মাঠে উপস্থিত ছিলেন।
বরিশাল ব্যুরো জানায় : সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বরিশালের শেখ হাসিনা সেনানিবাসে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৭ম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার বরিশাল মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী, বিএসপি, এনডিসি, পিএসপি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের সংসদ সদস্যবৃন্দ ছাড়াও উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বরিশাল সেনসানিবাসের বিভিন্ন বিগ্রেডের ব্রিগেড কমান্ডারগণসহ অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান: রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা অবসর প্রাপ্ত সেনাকল্যাণ সমিতি ও বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদ এর যৌথ উদ্যেগে বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর সকালে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের ২য় তলায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি সি.ওয়া. অফি. অব. আব্দুর রশিদ শেখ, সাধারণ সম্পাদক ল্যা.কর্পো. অব. সেলিম আহম্মদ, সি.ওয়া. অফি. অব. একদিল হোসেন, সি.ওয়া. অফি. অব. আবু তাহের মোল্লা প্রমুখ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন