শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মানবতার সেরা সাধক

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ৫:৪৮ এএম

হযরত সিদ্দীকে আকবর রাযি. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটতম সাহাবী। তাঁর মনোনীত ইমাম। মুসলিম জাতির প্রথম খলিফা। যিনি ঈমান, তাকওয়া, ত্যাগ ও সত্যের সাধনায় সর্বোচ্চ স্থান লাভকারী উম্মত। সিদ্দীক খেতাবপ্রাপ্ত।

তিনি পথ চলতে গিয়ে মরুভূমির কোনো বৃক্ষশাখায় গজিয়ে ওঠা একটি সবুজ পাতা কিংবা কোনো সময় মাটিতে পড়ে থাকা কোনো তৃণলতা হাতে নিয়ে আবেগে কেঁদে একাকার হতেন। বলতেন, ‘যদি আমি মানুষ হয়ে না জন্মাতাম, যদি একটি গাছের পাতা বা ঘাস-লতা হতাম আর উট আমাকে খেয়ে ফেলত তা হলে তো আমাকে আর আল্লাহর বিচারের সম্মুখীন হতে হতো না।’

মানুষ হওয়া, বিশিষ্ট হওয়া, উল্লেখযোগ্য হওয়া, দায়িত্বশীল হওয়ার যে কত যন্ত্রণা এ বিষয়টি কত যে আধ্যাত্মিক তা খুব চিন্তাশীল মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব। আল্লাহর ভয়, গভীর তাকওয়া, কঠিন বিনয় ও সর্বোপরি আখেরাতের চিন্তা, নবীর পর দুনিয়ার সেরা মানুষটিকে কিভাবে যে এমন ভাঙচুর করত, তা কেবল প্রকৃত সুফি-সাধক ও সত্যিকারের আলেমরাই বুঝতে পারবেন।

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.। তপ্তমরু থেকে মসজিদে নববীর ছায়ায় এসে পৌঁছালেন। ক্ষুধা, তৃষ্ণা দুটোই ছিল। দেখলেন তার বসার জায়গায় এক বাটি দুধ রাখা আছে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি দুধটুকু পান করলেন। একটু পরই কাজের লোক এসে বলল, এ দুধটি আপনি পান করেছেন হে আমীরুল মুমিনীন। এটি তো আমাদের ছিল না। এ দুধ ছিল জনগণের জন্য দান করা।

কথাটি শুনেই হযরত ওমর রাযি. দুধের দামের চেয়ে বেশি মূল্য সরকারি তহবিলে জমা করে দিলেন। এরপরও তার মনে শান্তি এলো না। তিনি কৃত্রিম উপায়ে জোর করে দুধটুকু বমি করে ফেলে দিলেন। কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নীতি ও আদর্শ তাকে এর অনুমতি দেয় না।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, তোমরা অন্যায়ভাবে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না। বলা হয়েছে, তোমরা হালাল ও পবিত্র রিযিক থেকে ভক্ষণ করো। হাদীস শরীফে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম খাদ্যে গঠিত।

আরেকদিনের ঘটনা। সন্ধ্যার পর নিজ অবস্থায় বসে আছেন হযরত ওমর রাযি.। পরিচিত এক ব্যক্তি গেলেন সেখানে। জরুরি কথা আছে তার সাথে। লোকটি ঘরে গিয়ে বসামাত্রই হযরত ওমর রাযি. বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। বললেন, বলো ভাই তোমার কী কথা। লোকটি বললেন, কথা তো বলবই কিন্তু আপনি ঘর অন্ধকার করে দিলেন কেন?

ওমর রাযি. জবাব দিলেন, এতক্ষণ আমি রাষ্ট্রের কাজে ব্যস্ত ছিলাম আর এ বাতিটি আমাকে জনগণের কাজের জন্যই দেয়া হয়েছে। তোমার আমার ব্যক্তিগত কাজ বা আলাপের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার জায়েয হবে না। অন্ধকারেই কী বলার বলে ফেল।

এমন অসংখ্য ঘটনায় খলিফা ওমর রাযি. এর শাসনকালের প্রতিটি দিনক্ষণ ভরপুর। যিনি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে বলেছিলেন, দীর্ঘ আট বছর মুসলিম জাতির যে ভারী বোঝা আমি বহন করলাম আমার কোনো সন্তানের কাঁধে যেন এ বোঝা আর না চাপে।

পরবর্তী খলিফা নির্ধারণের জন্য তিনি ছয়জনের যে পরিষদ প্রস্তাব করে যান তাতে তার সুযোগ্য সন্তান আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরকে অন্তর্ভুক্ত করলেও শর্তজুড়ে দেন যে, সে পরামর্শে অংশ নিবে কিন্তু খেলাফতের দায়িত্ব নিজে নিতে পারবে না। প্রার্থী হয়ে তো নাই, সবাই চাপিয়ে দিলেও না। কারণ, সেই আগের কথাই। যে বোঝা এতদিন আমি বহন করেছি আমি চাই না আমার বংশের কারও কাঁধে এ বোঝা আবার চেপে বসুক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মিলন ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ৩:০১ এএম says : 0
জ্ঞানগর্ভ এই লেখাটির জন্য উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
বুলবুল আহমেদ ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ৩:০১ এএম says : 0
ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে
Total Reply(0)
মিনার মুর্শেদ ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ৩:০৩ এএম says : 0
এই বিষয়গুলো পড়ে সে অনুযায়ি জীবন পরিচালনা করা জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেছি
Total Reply(0)
পারভেজ ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ৩:০৪ এএম says : 0
ইনকিলাবের এই বিভাগটির বা কলামটির জন্য নিয়মিত একবার হলেও ইনকিলাব পত্রিকা পড়ি
Total Reply(0)
নাসির উদ্দিন ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ৩:০৫ এএম says : 0
অনলাইনে অশান্তি অস্থিরতা আর আজে বাজে নিউজের মাঝে এসব লেখা পেলে তখন খুব ভালো লাগে। মন্টা ভালো হয়ে যায়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন