শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পাবনার পদ্মাকোলে কুমিরের পর এবার সাপ-বিষাক্ত পোকা মাকড়ের আতঙ্ক বিরাজ করছে

পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৯, ৫:১৭ পিএম

পাবনার সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের চর কোমরপুর ও চর সদিরাজপুরে পদ্মাকোলে কুমির আতঙ্কের পর এবার চরে বিষধর সাপের এবং পোকার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এরই মাঝে বিষাক্ত পোকার কামড়ে মারা গেছেন এক ব্যক্তি, বিষধর সাপের কামড়ে গুরুতর আহত আরেক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আতঙ্কে চরের জমিতে চাষাবাদ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, শুষ্ক মৌসুমে প্রতি বছরই পাবনার পদ্মার চরগুলোতে রবিশস্য আবাদ করা হয়। কিন্তু, চলতি বছর বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পরেও সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের চরসদিরাজপুর গ্রামের বিশাল চর এলাকা এখনও অনাবাদী এবং ঝোপ জঙ্গলে আবৃত হয়ে আছে।

কৃষকরা জানালেন, এ বছর উজান থেকে নেমে আসা পদ্মার পানিতে হঠাৎ বন্যায় তলিয়ে যায় উপজেলার ২৫০০ বিঘা আয়তনের সবচেয়ে উঁচু এই চরটি। পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা কাজে গিয়ে দেখতে পান বিষাক্ত সাপ ও পোকা মাকড়ের আনাগোনা। ফসল আবাদের জন্য জমির ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করতে গিয়ে অতিস¤প্রতি বিষাক্ত পোকার কামড়ে মারা যান আফজাল কাজী (৫০) নামের এক ব্যক্তি। সাপের কামড়ে গুরুতর আহত হয়ে নজরুল ইসলাম (৩৫) নামের আরেক কৃষক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন।

পোকার কামড়ে মারা যাওয়া আফজাল কাজীর পুত্র শাহীন জানান, তাঁর পিতা নভেম্বর মাসের এক তারিখ মাঠে কাজ করতে আসেন। জঙ্গল পরিষ্কারের সময় তাকে কাঁকড়া বিছা পোকা কামড় দেয়। বিষক্রিয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সপ্তাহ ঢামেকে এ থাকার পর তিনি মারা যান চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিষক্রিয়াতেই তার মৃত্যু হয়েছে।

সরেজমিনে চরসদিরাজপুরে গিয়ে দেখা যায়, শুকিয়ে আসা শীর্ণ পদ্মায় ছোট নৌকায় পার হতে হয় চরে যেতে হয় । কোন বসতবাড়ী নেই, তবে বর্ষার পানি সরে যাওয়ায় চরের জমিতে পলি পড়ে উর্বর হলেও অনেক স্থান জঙ্গল আবৃত থাকায় বিষধর সাপ ও পোকা মাকড়ের উপদ্রব রয়েছে।

দোগাছি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী জানান, আগে কখনো এ ধরণের অপরিচিত সাপ, পোকার আনাগোনা দেখা যায়নি । এ বছর চরে কাজ করতে আসা অনেকেই বিভিন্ন ধরণের সাপ ও পোকা দেখেছেন। তিনি নিজেও সাপ-পোকা মাকড় দেখেছেন, এর মধ্যে পরিচিত গোখরা সাপ ব্যতিরেকেও অপরিচিত সাপ দেখা গেছে।
আফজাল কাজীর মৃত্যুর পর চাষীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এদিকে, স্থানীয় কৃষকদের নিকট থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম, কৃষি কর্মকর্তা এস এম মাসুম বিল্লাহ, জেলা কীটতত্ত¡বিদ হেলাল উদ্দিনসহ উপজেলা প্রশাসনের ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি। বন্যার কারণে সাপ ও পোকার উপদ্রব বেড়েছে বলে ধারণা তাদের।

জেলা কীটতত্ত¡বিদ হেলাল উদ্দিন বলেন, পোকার কামড়ে মারা যাওয়া আফজাল কাজীর পরিবারের বক্তব্য ও দেখানো ছবিতে মনে হচ্ছে তিনি স্করপিয়ন জাতীয় বিছা কাঁকড়ায় কামড়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ ধরনের পোকার বিষক্রিয়ায় মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

পাবনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, পোকা ও সাপের উপদ্রবের বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় উপকরণ ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। আতঙ্কিত না হয়ে স্থানীয়দের সতর্কতার সাথে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ।

প্রসঙ্গত : এই এলাকার চরকোমরপুর গ্রামের পদ্মাকোলে বিগত ২০১৮ সালে বিরল প্রজাতির কুমির দেখা যায়। এলাকা মানুষজনের মধ্যে বিরাজমান ছিল কুমির আতঙ্ক । পরে কুমিরটি দোগাছী ইউনিয়নের পদ্মা কোলে জেলে হাতে ধরা পড়ে। কুমির আতঙ্ক চলে যাওয়া পর এবার ডাঙ্গায় সাপ- বিষাক্ত পোকা মাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন