মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ

৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর আ.লীগের সম্মেলন

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম | আপডেট : ৭:৩৩ পিএম, ২৬ নভেম্বর, ২০১৯

সম্মেলনের মৌসুম চলছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে ঢাকা মহানগর, জেলা ও উপজেলায় দলীয় আলোচনার মূল বিষয় বস্তু সম্মেলন। নেতাকর্মীদের আড্ডার বিষয় দলে নতুন কে কে পদ পাচ্ছেন আর কে কে বাদ পড়ছেন। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন। সবগুলো সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ এসেছে।
আগামী ২১ ও ২২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে কারা দলের মনোনয়ন পাবেন তা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
এদিকে শেষ মুহূর্তে দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন পদ প্রত্যাশীরা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে অনেক প্রার্থীর বায়োডাটা সংগ্রহ করেছে এনএসআই, ডিজিএফআই। নেতাদের গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত খোঁজ খবর নিচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
এছাড়া পদ প্রত্যাশীরা নেতারাও নানান ভাবে নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা করছেন। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দলের প্রতি তাদের অবদানের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। কেউ দেখা করতে পারছেন আবার কেউ দেখা করতে পারছেন না। আবার অনেকেই দেখা করার চেষ্টাও করছেন না; তারা বলছেন, নেত্রী দেশের কাজে ব্যস্ত থাকেন তাই দেখা করে তার সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না, যদি নেত্রী দায়িত্ব দেন তাহলে তা তারা পালন করবেন।
সম্মেলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, সম্মেলনে পরিবর্তন আসবে তা নিয়মিত বিষয়। প্রবীনদের জায়গায় নবীনরা আসবে তা চিরাচরিত নিয়ম। সম্মেলনের বিষয়ে একটা কথাই বলবো, স্বচ্ছ, সৎ, দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত নেতারাই সব জায়গায় পদে আসবেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের বরাবর বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এবারও সে হিসেবে ঢাকা দক্ষিণের পুরান ঢাকার নেতারা আশাবাদি তাদের মধ্য থেকে কেউ একজন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হবেন। এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগামী সম্মেলনে আর পদে থাকছেন না বলে নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা রয়েছে। তবে মহানগর সভাপতি আবুল হাসনাত আবারও একই পদে এবং সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ পদোন্নতি না পেলেও মহানগরের একই পদে থাকার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য নেতাদের মধ্যে কোরামিং সৃষ্টি হয়েছে। কেউ নিজে সভাপতি প্রার্থী হয়ে আরেকজনকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিচ্ছেন। কেউ কেউ একজন সভাপতি পদে সমর্থন নিয়ে অন্যজনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে সমর্থন দেয়ার কথা বলে সমঝোতা করার চেষ্টা করছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে চলছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন, মহানগরের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড. কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহি সদস্য অ্যাডভোকেট নজিবউল্লাহ হিরু, মহানগরের সহ-সভাপতি ও ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির, ৩৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু আহমেদ মন্নাফি, আবুল বাশার, নুরুল আমিন রুহুল এমপি।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলিপ রায়, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, প্রচার সম্পাদক আখতার হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক গোলাম সরোয়ার কবির, সাবেক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল আজিজের ছেলে, মহানগর দক্ষিণের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ওমর বিন আব্দাল আজিজ তামিম।
এছাড়াও থানা নেতাদের মধ্যে মহানগরের পদে দেখা যেতে পারে। এতে আলোচনায় আছেন, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদ। গতবার লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি থেকে সরাসরি মহানগর সভাপতি হয়েছিলেন আবুল হাসনাত।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড. কামরুল ইসলাম অবিভক্ত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং বর্তমানে মহানগরের উপদেষ্টা। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ এক এগারোর সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড. কামরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আমি কোন প্রার্থী নই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার ঢাকা মহানগরের খুব সুন্দর একটি কমিটি উপহার দেবেন বলে বিশ্বাস করি।
এবার সভাপতি হিসেবে বেশ আলোচনায় রয়েছেন অ্যাড. নজিবউল্লাহ হিরু। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সুন্দর ও শক্তিশালী একটি কমিটি উপহার দেবেন সবাইকে।
সহ-সভাপতি ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুময়ুন কবির ঢাকাইয়্যা হিসেবে বেশ পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরেই কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। হুমায়ুন কবির ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা সুন্দরভাবে পালন করেছি। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছি। আগামী সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের বাছাই করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সহ-সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফিও মহানগর আওয়ামী লীগের পুরাতন ও পরিচিত নেতা। ৩৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, রাজনীতিতে এখন আর চাওয়াম পাওয়ার কিছুই নেই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। যদি আমাকে কোন দায়িত্ব দিয়ে আবারও সম্মানিত করতে চান আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। আরেক সহ-সভাপতি আবুল বাশার ঢাকাইয়্যা হিসেবে পরিচিত। তিনি রমনা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। মহানগরের রাজনীতিতে ভাল অবস্থান রয়েছে তার।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ডা. দিলীপ কুমার রায়। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমি প্রার্থী নই, তবে যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি তাই নেত্রী মূল্যায়ন করবেন বলে আশাবাদি।
আলোচনায় আছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু এমপি। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগেরও সভাপতি ছিলেন। ঢাকা দক্ষিণে নেতাকর্মীদের মাঝে তার বেশ জনপ্রিয়তা আছে। প্রচার সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যেখানে রাখবেন আমি তাতেই খুশি। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন