বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সরেজমিন বৃটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচন : ব্রেক্সিটের ভাগ্য ঝুলছে ১২ ডিসেম্বরের ভোটে

বাড়তে পারে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত এমপির সংখ্যা

অলিউল্লাহ নোমান, বৃটেন থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ৬:০৪ পিএম

যুক্তরাজ্যে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণনা আরো আগেই শুরু হয়েছে। আগামী ১২ ডিসেম্বর ভোট গ্রহনের দিন ধার্য্য রয়েছে। এ ভোটের উপর নির্ভর করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বের হয়ে আসা বা থেকে যাওয়া। ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দল গুলো ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ব্রেক্সিটকে প্রাধান্য দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কনজার্ভেটিব পার্টি। রবিবার ঘোষিত ইশতেহারের শিরোনাম হচ্ছে-‘গেট ব্রেক্সিট ডান’। পাশাপাশি আগামী ৫ বছর কোন রকমের কর বৃদ্ধি না করার ঘোষনা রয়েছে ইশতেহারে। 

অপরদিকে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি বেক্সিট ইস্যুতে নীরবতা দেখিয়েছে ইশতেহারে। লেবার পার্টির ইশতেহারে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এনএইচএস বা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসসহ অন্যান্য সেবা খাত। রেলওয়েসহ বিভিন্ন সেবাখাত জাতীয় করনের অঙ্গিকারও রয়েছে লেবার পার্টির ইশতেহারে। ব্রেক্সিটের বিষয়ে লেবার পার্টি প্রধান জেরেমি করবিনের বক্তব্য হচ্ছে, বিজয়ী হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে ফ্রি ট্রেডসহ নতুন চুক্তি করা হবে। একই সাথে ৬ মাসের মধ্যে আরেকটি গণভোটের কথাও বলছেন তিনি। এতে লেবারপার্টি সমর্থক, কিন্তু বেক্সিটপন্থি, তারা ভোট এনিযে দোটানায় পড়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন এতে লেবার সমর্থক ব্রেক্সিটপন্থিদের ভোট অন্য দল গুলোর দিকে ঝুকবে।
অন্যদিকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি সেবাখাত ও ক্লাইমেট চেঞ্জকে পাধান্য দিয়েছে ইশাতেহারে। পাশাপাশি ব্রেক্সিটের বিষয়ে তাদের বক্তব্য পরিস্কার। এ ইস্যুতে জনগনের মতামতের জন্য আরেকবার গণভোটের প্রস্তাব করা হয়েছে ইশতেহারে। তাদের ঘোষণা হচ্ছে, লিবারেল ডেমক্রেটিক পার্টি বিজয়ী হলে বেক্সিট প্রশ্নে আরেকটি গণভোট দেয়া হবে।
গত মে মাসে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে নব গঠিত ব্রেক্সিট পার্টি অর্ধেকেরও বেশি আসনে ছাড় দিয়েছে কনজারভেটিব পার্টিকে। যেসব আসনে কনজারভেটিব নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে, সেখানে প্রার্থী দেয়নি নাইজাল ফারাজের বেক্সিট পার্টি। ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারী এ দলের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী ৪ মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট নির্বাচন। গত মে মাসে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বাজিমাত করে দলটি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দলটি বৃটেন থেকে সর্বোচ্চ ২৯টি আসন লাভ করে। এছাড়া ওয়েলস-এ আঞ্চলিক পার্লামেন্টেও ৪টি আসনে জয়লাভ করে নবগঠিত এ দলটি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে যারা রয়েছেন তারাই মূলত এ দলের সমর্থক। ১২ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এ দলটি প্রথমে সব আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। পরবর্তীতে তারা এ নীতি থেকে সরে আসে। ৩৩৭টি আসনে ছাড় দেয় ক্ষমতাসীন কনজারভেটিব পার্টিকে। যেসব আসনে কনজারভেটিব প্রার্থীরা নিরাপদ মনে করা হয় সে আসন গুলোতে ভোটে ভাগ বসাতে চায়নি বেক্সিট পার্টি। কারন ইউরোপী ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে বর্তমান কনজারভেটিব পার্টির শীর্ষ নেতারা।
মোট কথা হচ্ছে, ব্রেক্সিট ইস্যুতে কনজারভেটি পার্টির অবস্থান পরিস্কার। লিাবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির অবস্থানও ক্লিয়ার। কনজারভেটিব পার্টির অবস্থান হচ্ছে গত অক্টোবরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সর্বশেষ সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী যে কোন মূল্যে বেক্সিট চুড়ান্ত করা। গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বরিস জনসন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বেক্সিট নিয়ে এ চুক্তি সম্পাদন করেন। তবে, এ চুক্তিটি পার্লামেন্ট অনুমোদন করেনি তখন। তাই ব্রেক্সিটের জন্য ৩০ অক্টোবরের পর দ্বিতীয় দফা সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয় বৃটেনের পক্ষ থেকে। এতে আগামী জানুয়ারীর শেষ দিন পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। লেবার পার্টির বক্তব্য হচ্ছে, বিজয়ী হলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে নতুন চুক্তি এবং আরেকটি গণভোটের আয়োজন। লিবারেরল ডেমক্রেটিক পার্টির ব্রেক্সিট ইস্যুতে দ্বিতীয় গণভোটের প্রস্তাব। অন্যান্য ছোট এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলো তাদের ইশতেহার ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে গ্রীন পার্টি গুরুত্ব দিয়েছে ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং বেক্সিট প্রশ্নে দ্বিতীয় গণভোট। পার্টি গুলোর ইশতেহার নিয়েই এখন মূলত চুলছেড়া বিশ্লেষণ করছে ভোটাররা।
১২ ডিসেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে দুইটি জাতীয় টিভি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আই টি ভি’র ‘হেড টু হেড’ অনুষ্ঠানে লেবার পার্টি প্রধান রেজিমি করবিন এবং কনজারভেটিব প্রধান বরিস জনসন মুখোমুখো বিতর্কে অংশ নেন। দুই জনের মাঝে ছিলেন একজন সঞ্চালক। পাশাপাশি অডিয়েন্সেরও প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল। এই বিতর্কে দর্শকের অনলাইন মতামত নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এতে বরিস জনসনকে এগিয়ে রাখা হয়েছে ৫১ পয়েন্ট দিয়ে। অপরদিকে জেরিমি করবিনকে দেয়া হয়েছে ৪৯ পয়েন্ট। পরের দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের প্রধান শিরোনাম করা হয়, জেরিমি করবিন ব্রেক্সিট প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ৯বার এড়িয়ে গেছেন।
দ্বিতীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় বিবিসি’ র আয়োজনে। এতে লেবার, কনজারভেটিবের পাশাপাশি লিবারেল ডেমক্রেটিক পার্টির প্রধানও উপস্থিত ছিলেন। মূলত এসব বিতর্ক এবং ইশতেহারই হচ্ছে এখানে প্রচারণার মূল অস্ত্র। বাংলাদেশের ন্যায়, পোষ্টার, ব্যানার বা নির্বাচনী জনসভা এখানে হয় না। এতবড় একটি জাতীয় নির্বাচনে কোথায়ও একটি পোষ্টার দেখা যায় না। রাস্তায় কখনো প্রচার মাইকের আওয়াজ নেই। বড়জোড় প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষিত লিফলেট বাড়ি বাড়ি লেটার বক্সে পৌছে দেয়া হয়। ভোটার নিজের বিবেচনায় যে দলের ইশতেহারে ঘোষিত কর্মসূচি পছন্দ করেন, তাঁকে ভোট দিয়ে আসেন। এর বেশি কিছু নয়। ভোট সামনে রেখে রাজনৈতিক উত্তেজনা বা মারামারির ঘটনা এখানে ঘটে না। সবাই যারযার মত করে নিজেদের কর্মসূচি ভোটারের সামনে উপস্থাপন করেন মিডিয়ার মাধ্যমে।
পোনে ৫ বছরে ৩টি জাতীয় নির্বাচন
গত পোনে ৫ বছরের মধ্যে বৃটেনে তৃতীয়বারের মত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ব্রেক্সিট ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিগত দু’টি পার্লামেন্ট মেয়াদ পুরন করতে পারেনি। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, দেড় বছর আগে ২০১৭ সালের ৮ জুন। এর আগের নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৫ সালের ৭ মে। ব্রেক্সিট বা বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রশ্নেই এ দু’টি পার্লামেন্ট নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙ্গে দিতে হয়। ২০১৫ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে কনজারভেটিব পার্টির ইশতেহারে ঘোষণা করা হয়েছিল বিজয়ী হলে ব্রেক্সিট ইস্যুতে গণভোট দিবে। বিজয়ের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিট ক্যামেরন নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৩ জুন গণভোটের আয়োজন করেন। বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে, নাকি ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসবে? এ প্রশ্ন সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয় গণভোট। গণভোটের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিট ক্যামেরন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন। অথচ ভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নে না থাকার পক্ষে রায় দেয় জনগণ। তাই গণভোটের পরের দিনই পদত্যাগ করেন ডেভিট ক্যামেরণ। জনগনের রায় অনুযায়ী ব্রেক্সিট এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি অন্যদের সুযোগ করে দেন। তাঁর পদত্যাগের পর কনজারভেটিব পার্টি প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেরিজা মে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহনের পর গণভোটের রায় অনুযায়ী ব্রেক্সিট এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেন। কিন্তু ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে চুক্তি সম্পাদনের আগেই তিনি একটি জাতীয় নির্বাচনের ডাক দেন । বিরোধী দলের নেতা লেবার পার্টির জেরিমি করবিন সে প্রস্তাব লুফে নেন। তখন সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে ২০১৭ সালের ৮ জুন অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। এতে তেরিজা মে’র কনজার্ভেটিব পার্টি পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরীষ্ঠতা হারায়। সরকার গঠনের জন্য তেরিজা মে নর্দার্ণ আয়ারল্যান্ডের একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভর করতে হয় তখন। উত্তর আয়ারল্যান্ড ভিত্তিক ডিইউপি বা ডেমক্রেটিক ইউনিয়নিষ্ট পার্টির সংসদ সদস্যদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে হয় তাঁকে। কিন্তু, সংখ্যালগু সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় পদে পদে খেসারত দিতে হয়েছে তাঁকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সম্পাদিত চুক্তি পার্লামেন্ট অনুমোদন করাতে ব্যর্থ হন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে তাঁর সম্পাদিত চুক্তি পার্লামেন্টে পরপর ৩ বার উত্থাপন করা হয়। প্রতিবারই ভোটে হেরে যায়। এতে ব্রেক্সিটের নিয়ম অনুযায়ী গণভোটের ২ বছরের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করা সম্ভব হয়নি। ২০১৮ সালের ৩০ মে ছিল বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার দিন। কিন্তু পার্লামেন্ট চুক্তি অনুমোদন না করায় বেক্সিট সম্মাদন সম্ভব হয়নি নির্ধারিত সময়ে। এজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে সময়ের আবেদন করতে হয় তাঁকে বৃটেনকে। তখন ৩০ অক্টোবর (২০১৮) পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন সময় বৃদ্ধি করে। এর আগেই গত জুলাই মাসে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তেরিজা মে প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানানোর পর পরবর্তী দলনেতা কে হবেন, কনজারভেটিব পার্টিতে এনিয়ে নির্বাচন হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনুষ্ঠিত ভোটে নেতা নির্বাচিত হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। দলনেতা নির্বাচিত হওয়ার পর তেরিজা মে’র স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বেক্সিট সম্পাদনের দায়িত্ব বর্তায় তখন তাঁর কাঁধে।
দায়িত্ব নিয়ে অতি অল্প সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে নতুন আরেকটি চুক্তি করেন জনসন। তাঁর চুক্তিও পার্লামেন্টে অনুমোদন করাতে ব্যর্থ হন। যদিও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ব্রেক্সিট ইস্যুতে তাঁর নীি হচ্ছে-ডো অর ডাই। যে কোনমূল্যে তিনি ৩০ অক্টোবরের মধ্যেই ব্রেক্সিট সম্পাদন চান। এমন কি নতুন চুক্তি না হলে, চুক্তিবিহীন (নো ডিল) ব্রেক্সিটের ঘোষনা দিয়েছিলেন তিনি। এতে তাঁর দলের ২৬জন সংসদ সদস্য বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তারা চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে। যে কোন মূল্যে চুক্তিবিহীন বেক্সিট ঠেকানোর লক্ষ্যে বিরোধী দল গুলোর সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন ২৬ বিদ্রোহী সংসদ সদস্য। এর মধ্যে দলটির অনেক সিনিয়র নেতাও রয়েছেন। এতে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট নয় মর্মে পার্লামেন্টে একটি আইনও পাস করিয়ে নেয় বিরোধী দল গুলো। সে আইনের কারনে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ডো অর ডাই নীতিতে ব্রেক্সিট সম্পাদন সম্ভব হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নিজে থেকেই সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন জাতীয় নির্বাচনে প্রস্তাব আনেন। এতেও তখন বিরোধী দল গুলো সায় দিতে নারাজ। পরপর তিনবার তাঁর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দল গুলো। এনিয়ে পার্লামেন্টে তৈরি অচলাবস্থাকে বৃটেনের ইতিহাসে বড় রাজনৈতিক সঙ্কট হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এ অচলাবস্থা কাটাতে সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর নির্বাচন করতে সম্মত হয় বিরোধী দল গুলো।
মজার বিষয় হচ্ছে, আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে বিরোধী দল গুলোর পক্ষ থেকে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের দাবী উঠানো হয়। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক বৃটেনে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের দাবী উঠানো হয় খোদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। আর বিরোধী দলীয় নেতার পক্ষ থেকে সেটাকে প্রত্যাখান করা হয়েছে বারবার। প্রধানমন্ত্রীর বরিস জনসনের বক্তব্য ছিল পরিস্কার। ব্রেক্সিট প্রশ্নে সংসদের অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে জনগনের কাছে ফিরে যেতে হবে। জনগণ যে রায় দেবে সে অনুযায়ী আগামী পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নিবে।
যেভাবে ভোট গ্রহন হয়
আগেই উল্লেখ করেছি, বৃটেনে ভোট নিয়ে কোন রাজনৈতিক পোষ্টার নেই। কোথায়ও ব্যানার নেই। প্রার্থীদের সালাম এবং দোয়া চেয়ে পোষ্টারের সুযোগ নেই বৃটেনে। মাঠে ময়দানে কোন রকমের মাইকিং নেই ভোট চেয়ে। গণমাধ্যমের প্রচারণা এবং বাড়ির লেটার বক্সে লিফলেট পৌছে দেয়ার মধ্যেই প্রচার সীমিত।
ভোটের দিন সরকারি ছুটি নেই। স্কুল, কলেজ যথারীতি খোলা থাকে। কোন স্কুলেই ভোট কেন্দ্র হয় না। স্থানীয় কমিউনিটি হল গুলোতে ভোটকেন্দ্র বসানো হয়। সরকারি কর্মকর্তারা পোলিং, প্রিসাইডিংয়ের দায়িত্বে থাকেন না। কেন্দ্রে কোন পুলিশ বা ম্যাজিষ্ট্রেটেরও প্রয়োজন হয় ন। সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন হয় প্রতিটি কেন্দ্রে। কমিউনিটির বিভিন্ন পেশা থেকে পোলিং ও প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করা হয়। তাই সরকারি ছুটির প্রয়োজনীতা এখানে দেখা দেয় না। স্কুল-কলেজে ভোটকেন্দ্র হয় না। তাই ভোটের দিন স্কুল-কলেজ বন্ধের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেয় না বৃটেনে।
ওয়েষ্টমিনিষ্টার স্টাইল বা সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক হচ্ছে বৃটেন। তাই রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়ে থাকে, বৃটেনের জাতীয় সংসদ নারীকে পুরুষ বা পুরুষকে নারী করা ব্যতীত সবকিছু অনুমোদনের ক্ষমতা রাখেন। রাণী বা রাজতন্ত্রের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেই সংসদ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। এবং এ ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য কর্মসূচি নিয়ে নির্বাচনে যেতে হয় জনগনের কাছে। যারা নিজেদের কর্মসূচি জনগনের মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে নিতে পারেন, তারাই সংসদে সংখ্যাগরীষ্ঠ আসন লাভ করেন।


৪ জন বাঙ্গালী নারী এবার হতে পারেন বৃটেনের এমপি
বিগত দু’টি পার্লামেন্টে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ৩জন নির্বঅচিত হয়েছিলেন। এর আগে ছিলেন একজন। লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসাবে বৃটেনের পার্লামেন্টে ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত এমপি হন রুশনারা আলী। টানা ৩টি নির্বাচনে একই আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসাবে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। এবারো তিনি একই আসনে লেবার পার্টির প্রার্থী। এছাড়া বিগত পার্লামেন্টে তিনি লেবার থেকে ছায়া ক্যাবিনেটের সদস্য।
২০১৫ সালে রুশনারা আলীর সাথে আরো দুইজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নারী বৃটেনের পার্লামেন্ট মেম্বার হিসাবে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী এবং রুপা হক লেবার পার্টি থেকে প্রথমবারের মত নির্বাচিত হন ২০১৫ সালের নির্বাচনে। ২০১৭ সালের নির্বাচনেও তারা একই আসন থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হয়ে আসেন। এবারো নিজ নিজ আসন থেকে তারা লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়েছে। কোন অঘটন না ঘটলে, এবারও রুশনারা আলী চতুর্থ বারের মত এবং টিউলিপ সিদ্দিকী ও রুপা হক তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত হবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। কারন এ গুলো বরাবরই লেবার পার্টির নিরাপদ আসন হিসাবে মনে করা হয়।
এই তিন নারীর সাথে লেবারের আরেকটি নিরাপদ সীটে মনোনয়ন পেয়েছেন এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নারী। পূর্ব লন্ডনের পপলার এবং লাইমহাউজ নিয়ে গঠিত আসনে এবার লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন আফসানা বেগম। এটাকে লেবার পার্টির নিরাপদ সীট হিসাবে মনে করা হয়। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত অপর ৩ নারীর সাথে এবার আফসানাও যাবেন বৃটিশ পার্লামেন্টে এমনটাই এখন ধারনা করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন