শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিদেশিদের বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন সালমান এফ রহমান

ঢাকায় প্রথম বারের মতো ৩৩তম সিএসিসিআই আন্তর্জাতিক সম্মেলন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, কয়েক বছরের মধ্যে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী ও পটুয়াখালীর পায়রাতে গভীর সমুদ্রবন্দর চালুর আশা করা হচ্ছে। তখন ব্যবসায়ীদের সংকট অনেকখানি কাটবে বলে মনে করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ৩৩তম সিএসিসিআই আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশীদের বিনিয়োগের আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং কনফেডারেশন অব এশিয়া প্যাসিফিক চেম্বার্স অবকমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিএসিসিআই) যৌথ উদ্যোগে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, হংকং, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স, ইরান, শ্রীলংকা, নেপাল, তুরস্কসহ ২৭ দেশের ব্যবসায়ী নেতা, নীতিনির্ধারক ও অর্থনীতিবিদরা এ সম্মেলনে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় আসছে না বড় জাহাজ। তাই আমাদানি ও রপ্তানির পণ্য ঘুরতে হয় সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কায়। এতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগছে। তিনি আরও বলেন, শিগগির এই সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া, সহজ ব্যবসার সূচক দুই অংকে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সব সেবা অনলাইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে ইতিবাচক উল্লেখ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে সরাসরি বিনিয়োগের আহবান জানান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা। সালমান রহমান জানান, বাংলাদেশ এখন দেশী এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অন্যতম গন্তব্যস্থল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার একটি ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব একটি সরকার। ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রণোদনার পাশাপাশি সম্ভাব্য বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কূটনৈতিকদের নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, সরকার সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন এবং দেশের অবকাঠামোগত উন্নয় ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে । এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া বিনিয়োগ সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে সালমান রহমান এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশেগুলোকে সরাসরি বিনিয়োগের আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে সামির মোদি জানান, বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে সিএসিসিআইয়ের সদস্য হয়েছে। বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেশ আশাব্যঞ্জক। এ কারণে এ দেশে সম্মেলন করার জন্য বেছে নিয়েছি। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তথ্য প্রযুক্তি সব খাতেই বড় ভূমিকা রাখবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকেও এর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। অনুষ্ঠানে শিল্পোন্নয়নের পাশাপাশি কৃষি জমি রক্ষার তাগিদ দেন আলোচকরা। সামির মোদি বলেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং সংস্কারের মাধ্যমে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগীয় অঞ্চল এখন বিশ্বে বৃহত্তম এবং দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সা¤প্রতিক এই অগ্রগতি বজায় থাকলে অঞ্চলটি ভবিষ্যৎ বিশ্ব অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দেবে বলেও উল্লেখ করেন সামির মোদি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগীতা এই অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফাহিম বলেন, বাংলাদেশের স্থিতিশীল ম্যাক্রো-ইকনোমিক প্রবৃদ্ধিসহ গত কয়েক দশকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার চিত্র তুলে ধরেন। এফবিসিসিআই সভাপতি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, দ্রæত অগ্রসরমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ, বেসরকারি খাতের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে বিভিন্ন নীতি প্রণয়নে সরকারের সাথে এফবিসিসিআইয়ের অংশীদারত্ব এবং দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সরকারি-বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে অবহিত করেন। বর্তমান সময়ের চাহিদা অনুযায়ি বিশষ করে সরকারের চতূর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নে জ্ঞান বিনিময়, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, প্রযুক্তি বিনিময়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে এফবিসিসিআই কাজ করছে বলেও জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছি। সেই সাফল্যই এ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বকে জানানো হবে। আমরা আরও অনেক দূর যেতে চাই। সে লক্ষ্যে সরকার মধ্যম আয়ের দেশের জন্য রূপকল্প-২০২১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-২০৩০ এবং উন্নত দেশের তালিকায় যাওয়ার জন্য ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করছে। এ জন্য প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে কাঙ্খিক্ষত লক্ষ্যে যেতে হবে আমাদের। এ ক্ষেত্রে সিএসিসিআই কনফারেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। ফজলে ফাহিম বলেন, ফজলে ফাহিম জানান, আগামী বছর বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সম্মেলন আয়োজন করবে। এর মধ্যে জি-৮ সম্মেলন, হালাল ফুড সম্মেলন, কমনওয়েলথ ব্যবসায়িক সম্মেলন; যেখানে ১০৫ দেশের ব্যবসায়ীরা অংশ নেবেন। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সিএসিসিআই সম্মেলনে বিটুবি অর্থাৎ বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সঞ্চালনায় সিএসিসিআই-এর সদস্য দেশগুলোর বিভিন্ন সফল উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত ‘ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা : সিএসিসিআই’ শীর্ষক সেশনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এই সেশনে উদ্যোক্তারা তাদের নিজ নিজ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগগুলো নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের বক্তাদের নিয়ে আরও ৩টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন