শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ক্রমেই উত্তপ্ত পাটকল সেক্টর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

বকেয়া পাওনার দাবিতে আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে পাটকল সেক্টর। দীর্ঘ প্রতিশ্রুতি ও বঞ্চনার শিকার হয়ে ক্ষোভে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে পাটকল শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে ১১ দফা দাবি আদায়ে থেকে অনশনে বসেছেন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নরসিংদী ও খুলনার পাটকল শ্রমিকরা। ৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি দিয়ে প্রতীকী অনশন কর্মস‚চি পালন করছেন তারা। অনশনে মিলে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শ্রমিকদের সহধর্মীণী ও শিশুসন্তানরা অংশ নেন। এসময় ‘ভাত দে, কাপড় দে নয়তো একটু বিষ দে’ স্লোগান দেয়া হয়। প্রতীকী অনশনের পাশাপাশি চলে সমাবেশও। এসময় বক্তারা বলেন, ঘরে চাল নেই, পেটে ভাত নেই। ক্ষুদার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আমাদের শিশুসন্তান ও সহধর্মীণীরাও অনশন কর্মস‚চিতে যোগ দেন। দীর্ঘদিনেও বকেয়া মজুরি, পিএফ’র টাকা প্রদান ও বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, মজুরি কমিশনসহ ১১ দফা ন্যায্য দাবি না মানায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে পাটমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন শ্রমিকরা। অচিরেই দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন পাটকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু শ্রমিকদের এই বিপদের মুহূর্তে এ খবর তাদেরকে আন্দোলন থেকে ফেরাতে পারেনি। শ্রমিক নেতারা বলছেন, আমাদের ঘরে খাবার নেই। বরাদ্দের খবর আর প্রতিশ্রুতিতে আমাদের পেট ভরবেনা। আমরা আমাদের যে ন্যায্য দাবিগুলো পেশ করেছি তা অবিলম্বে কার্যকরী করতে হবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, জাতীয় মজুরি কমিশন অনুযায়ী বেতন ভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে ভুখা মিছিলের পর প্রতীকী অনশন করেছে আমিন জুট মিলের শ্রমিকরা। গতকাল বুধবার মিল গেটে এ অনশন পালন করা হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব ও আমিন জুট মিল সিবিএ সভাপতি আরিফুর রহমান, শ্রমিক নেতা মো. মোস্তফা, শামসুল আলম, সিরাজুল ইসলাম, আশিকুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক কামাল উদ্দিন প্রমুখ।

খুলনা থেকে আবু হেনা মুক্তি জানান, ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে গতকাল বুধবার সকাল আটটায় মিলের উৎপাদন বন্ধ করে পাটকলের প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক ছয়দিনের আন্দোলনের দ্বিতীয়দিনে এ কর্মসূচি পালন করেন।

পাটকল শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) বাতিল, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পিএফ গ্রাচ্যুইটির টাকা প্রদান, শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি নিয়মিত পরিশোধ, পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দসহ শ্রমিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ছয়দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ।

শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ সরদার, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন, প্লাটিনাম মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা সারমিন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, খালিশপুর জুটমিল সিবিএর সভাপতি আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম শেখসহ সিবিএ-নন সিবিএ নেতারা। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে শ্রমিকদের নয় দফা বাস্তবায়নের জন্য বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।

অপরদিকে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে চরম আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে। এ কারণে নিয়মিত মজুরি ও বেতন পাচ্ছেন না শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তারা। এসব পাটকলের শ্রমিকদের ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২ থেকে ৪ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের প্রায় ৫৩ কোটি টাকা মজুরি ও বেতন বকেয়া রয়েছে। ফলে চরম অর্থকষ্টে রয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীরা। এ অঞ্চলের প্রায় ৩১ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী পরিবারে চলছে হাহাকার। দূর্বিষহ দিন কাটছে তাদের।

আর পাটকলগুলোতে ৩০ হাজার মেট্রিকটন পাটপণ্য অবিক্রিত রয়েছে। মূলতঃ উৎপাদিত পাটজাত পণ্য সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় পাটকলগুলো আর্থিক সঙ্কটের কারণে মজুরি-বেতন দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।
পাটকল শ্রমিক হালিম শেখ ও প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, তার ৩ ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে। কিন্তু স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার টাকা এবং শিক্ষকদের বেতনের টাকা দিতে পারছেন না। সারাদিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরলে সন্তানরা যখন টাকা চায়, স্ত্রী যখন বাজার করেছি কিনা জানতে চায়, তখন চুপ করে থাকতে হয়।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, পাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলে স্থায়ী ও বদলি শ্রমিক রয়েছে মোট ২৯ হাজার ৬২৯ জন। তাদের ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। ১ হাজার ২৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বকেয়া রয়েছে ২ থেকে ৪ মাস। সব মিলিয়ে তাদের পাওনা রয়েছে প্রায় ৫৩ কোটি টাকা। এ অঞ্চলের ৯টি পাটকলে বর্তমানে ৩০ হাজার ৪৬২ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ২৮০ কোটি টাকা। এদিকে আর্থিক সঙ্কটের কারণে মিলগুলো প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট কিনতে পারছে না। চলতি অর্থ বছরে মিলগুলোতে কাঁচা পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৮ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৩ কুইন্টাল। কিন্তু ৫ মাস কেনা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ২৬৭ কুইন্টাল। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ। এ অবস্থায় মিলগুলোতে উৎপাদনে ধস নেমেছে। প্রতিদিন ২৭২ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৭৭ মেট্রিক টন।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, সকাল ৮টা থেকে নগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালীতে মিলগেটে শ্রমিকরা অনশনে বসেন। কাজ বাদ দিয়ে ১১ দফা দাবিতে শ্রমিকদের এ অনশন চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। প্রতীকী অনশনের পাশাপাশি চলে সমাবেশও। রাজশাহী পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মস‚চিতে উপস্থিত রয়েছেন রাজশাহী পাটকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাক হোসেন, সহ-সভাপতি আব্দুল আলীম, মাসুদ রানা প্রমুখ।

নরসিংদী : নরসিংদীতে মজুরি কমিশনসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে শ্রমিকদের পাশাপাশি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের স্ত্রী ও তাদের শিশুসন্তানরাও এ কর্মস‚চিতে অংশ নেন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি দিয়ে প্রতীকী অনশন কর্মস‚চি পালন করেন ইউএমসি জুট মিল শ্রমিকরা। এসময় ইউএমসি জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শফিকুল ইসলাম মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, কাউছার আহাম্মেদ, সুমন খন্দকার, জাকির হোসেন, নন সিবিএ পরিষদের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান, মোশারফ হোসেন, কাউয়ুম প্রধান, শামসুল আরেফিন, ইসা হাবিব রিপন সরকারসহ ঐক্য পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
* মজলুম জনতা * ২৮ নভেম্বর, ২০১৯, ৭:১২ এএম says : 0
পাটকল শ্রমিকদের ১১দফা মেনে নিন। খালিশপুর জুট মিলের সভাপতি আবু দাউদ দীন মোহাম্মাদকে ধন্যবাদ।তার পিতা আঃমালেক সরদার একজন নির্লোভ শ্রমিক নেতা ছিলেন।তার পদাংক অনুস্বরন করে শ্রমিক আন্দলন বেগবান করুন।শ্রমিকদের দাবী মেনে নিন।
Total Reply(0)
হতদরিদ্র দীনমজুর ২৮ নভেম্বর, ২০১৯, ৭:৩৪ এএম says : 0
ভাত দে কাপড় দে ,নইলে একটূ বিষঁ দে * কত কষ্টে আছে শ্রমিকরা, পাট মন্ত্রী দেখে যান *ওদের ঘরে খাবার নাই,পাট মন্ত্রী দেখে যান *সন্তানরা অনাহারী পাট মন্ত্রী দেখে যান *দুনিয়ার মজদুর এক হও,লড়াই কর।বাচঁতে হলে,লড়তে হবে এ লড়াইয়ে জিততে হবে।লড়াই ছাড়া মেহনতি শ্রমিক জনতার মুক্তি নাই।।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন