শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কারাগার থেকেই আইএস টুপি এনেছিল রিগ্যান

পুলিশের তদন্ত

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

হলি আর্টিজানে হামলা মামলার রায়ের পর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় আইএস টুপির উপস্থিতির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় সারাদেশে। কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শুরু করে আদালতের হাজতখানা, এজলাস— সবখানেই ছিল নিñিদ্র নিরাপত্তা। এর মধ্যে জঙ্গি রিগ্যানের কাছে কিভাবে সেই টুপিটি সরবরাহ করা হয়, তা নিয়ে সদুত্তর মেলেনি কারা কর্তৃৃপক্ষ বা আইন-শৃংখলা বাহিনীর কাছেও। তবে ঘটনা প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। কারা কর্তৃৃপক্ষ গঠন করেছে তদন্ত কমিটি। টুপি রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ে মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকেই আইএসের লোগো সম্বলিত টুপিটি নিয়ে এসেছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ। আদালত প্রাঙ্গণের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে পুলিশের এই দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি কারা কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, তদন্ত শেষেই পুরো বিষয় খোলাসা হবে।

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা করা হয় গত বুধবার। রায়ের পর আসামি রাকিবুল আইএসের প্রতীকসংবলিত টুপি পরে এজলাস থেকে বের হন।
পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, কারাগার প্রাঙ্গণে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তারা দেখেছেন। জঙ্গি রাকিবুল আদালতের হাজতখানা থেকে মাথায় টুপি পরে বের হন। সেই টুপিই পরে এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় তিনি উল্টিয়ে পরেন বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। রায় শেষে আবার কারাগারে ঢোকানোর আগে জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাকিবুল বলেছেন, টুপিটি কারাগার থেকে তিনি এনেছিলেন।

কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, পুলিশ নিশ্চয়ই তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে কথা বলছে। টুপিটি যদি কারাগার থেকে বের হয়, তাহলে প্রিজন ভ্যানে তোলার আগে পুলিশও তো জঙ্গিদের তল্লাশি করেছিল। তারা কেন টুপি পেল না সেই প্রশ্নও থেকে যায়। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ করছে। কমিটি কারাগারের কোনো গাফিলতি পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হোলি আর্টিজানে হামলা মামলার আট আসামিকে বুধবার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে আনা হয়। কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রত্যেক জঙ্গিকে ‘বডি স্ক্যানিং মেশিন’ দিয়ে এবং হাত দিয়ে তল্লাশি করে কারাফটক পর্যন্ত নেয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়া সিসি ক্যামেরার আওতায় হয়েছে। একজন মাথায় সাদা টুপি পরে বের হন, অন্য কারও কাছে কিছু ছিল না।

হোলি আর্টিজানে হামলার পর থেকেই পুলিশ দাবি করে আসছে, জঙ্গিদের সঙ্গে আইএসের কোনো যোগাযোগ ছিল না। অথচ হামলার সোয়া তিন বছর পর এই মামলার রায়ের দিনই আইএসের প্রতীকসংবলিত টুপি পরে জঙ্গি রাকিবুল বেরিয়ে আসেন। আবার এজলাস থেকে বের করার মিনিট দশেক পর যখন প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়, তখন আরেক জঙ্গি রাজীব গান্ধীর (মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত) মাথায়ও একই ধরনের টুপি দেখা যায়। কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আনা জঙ্গিদের মাথায় এই টুপি কীভাবে এল, তা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আবার কারাগার প্রান্ডে কোনো ত্রæটি ছিল কি না, তা তদন্তে তিন সদস্যের পৃথক কমিটি গঠন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা অধিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তা বলেন, শুধু আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময়ই জঙ্গিদের কথা বলার সুযোগ হয়। আদালতে হাজিরার সময় তারা বন্দীকে তল্লাশি করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। আদালত থেকে ফেরার পর তল্লাশি করে ঢোকান। তাদের কাছে কেউ চিঠি লিখলে বা তারা কাউকে চিঠি লিখলে সেগুলো কারারক্ষীরা পড়ে তারপর ব্যবস্থা নেন। বাড়ি থেকে কাপড়চোপড় পাঠালেও সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া হয় না। জঙ্গিদের কার্যক্রম দেখাশোনার জন্য সিসি ক্যামেরা রয়েছে। মুঠোফোনও ব্যবহার করার সুযোগ পান না। তাই পুলিশ যে অভিযোগ তুলছে, তা সঠিক নয়।
জঙ্গী নিজেও স্বীকার করেছে কারাগার থেকে টুপি এনেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের সব বেরিয়ে আসবে।

সন্দেহের তালিকায় ৩০জন, তদন্তে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গি রিগ্যানের মাথায় আইএস টুপির ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৩০ জনের মতো ব্যক্তিকে সন্দেহের তালিকা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একজন ভুয়া আইনজীবীকেও সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে এক নম্বরে।
ওই সূত্র জানায়, ওই ব্যক্তির চলাফেরা, গতিবিধি ও আচরণ সন্দেহজনক আচরণ, কথাবার্তাও অসংলগ্ন। তাছাড়া রিগানকে পাঁঁচ তলায় ওঠানো ও নামানোর সময় যেভাবে ওই ব্যক্তিকে দেখা গেছে, তাতে সন্দেহ করা হচ্ছে তিনিই রিগানকে এই টুপি সরবরাহ করে থাকতে পারেন। এছাড়া তালিকায় থাকা ২৯জনের বিষয়ে তদন্ত করছে একাধিক সংস্থা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ৩০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:১৪ পিএম says : 0
Ma-Shallah-----excellent????????????????
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন