শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ইত্যাদিতে প্রচারিত সেই আমেরিকান ডাক্তার দম্পতি ভাইরাল

আবদুল মোমিন | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৯:৪৫ এএম

টাঙ্গাইলের মধুপুরের একটি হাসপাতালের হাল ধরতে সুদূর আমেরিকা থেকে ছুটে আসা আমেরিকান ডাক্তার দম্পতি জেসিন ও মেরিন্ডি ইন্টারনেটে প্রশংসায় ভাসছেন। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিটিভিতে প্রচারিত হানিফ সংকেতের ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এই দম্পতিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে জেসিন-মেরিন্ডি দম্পতির প্রশংসা করছেন নেটিজেনরা।

মধুপুরের কালিয়াকুড়ি গ্রামে হাসপাতালটি নির্মাণ করেন নিউজিল্যান্ডের নাগরিক ডা. এড্রিক বেকার। টানা ৩২ বছর গ্রামের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ২০১৫ সালে মারা যান ডা. এড্রিক বেকার। এরপর হাসপাতালটির হাল ধরার মতো কেউ ছিল না। দরিদ্র মানুষদের জন্য এড্রিক বেকারের প্রতিষ্ঠিত সেই হাসপাতালের হাল ধরতে আমেরিকার আরাম আয়েশের জীবন ফেলে ছুটে আসেন এই দম্পতি। যার কারণে প্রশংসায় ভাসছেন তারা।

ইত্যাদি অনুষ্ঠানের প্রতিবেদনটি এখন সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। যে দেশে যাওয়ার জন্য দুনিয়ার সবাই পাগল সেই আমেরিকার বিলাসবহুল জীবন দূরে ঠেলে বাংলাদেশে এসে দরিদ্র মানুষের সেবা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় দম্পতির প্রশংসা করেছেন নেটিজেনরা। পাশাপাশি নিজের দেশের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা দিতে কেউ এগিয়ে না আসা দেশবাসীর জন্য লজ্জার মনে করছেন তারা।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘‘আমাদের লজ্জা নাই। চোক্ষে বালু দিয়া ঘষলেও আমরা লজ্জাহীন, তাই লজ্জিত হইতে জানি না। তবু অভিনন্দন জানাই ডা. জেসিন ও মেরিন্ডি দম্পতিকে।’’

রাশেদ হুসাইন লিখেছেন, ‘‘প্রথম অভিভূত হয়েছি উনাদের মানব সেবা দেখে! পরে কষ্ট পেয়েছি আমাদের দেশে কী এমন একজন মানুষও নেই, এই কথা ভেবে। আমাদের দেশের মানুষদের উনারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন নিজের দেশ ছেড়ে এসে। অথচ এটা আমাদের দেশ। আমাদের কারো এমন মানবপ্রেম বা দেশ প্রেম নেই? এতো এতো মানুষ আমাদের দেশে কিন্তু একজন মানুষও পেলাম না যিনি মানব সেবাকে ব্রত করে নিজের সুখকে তুচ্ছ করেছেন!’’

‘‘আমার ছোট্ট বিশ্লেষণে পৃথিবীর সেরা মানুষ উনারা। নোবেল পুরস্কারের চেয়ে উচ্চতর কোনো পুরস্কার থাকলে উনারা সেটাই পাওয়ার উপযুক্ত মানুষ’’ মন্তব্য শোহরাব হোসেনের।

আবুল কাশেম লিখেছেন, ‘‘আমি ইত্যাদি দেখি না। তবে ইত্যাদির একটা ভিডিও লিংক খুব প্রচার হচ্ছে। আমেরিকার বিলাসী জীবন ছেড়ে এই দম্পতি বাংলাদেশে এসে নাকি হাসপাতাল চালাচ্ছেন। তারা অবশ্যই সাধুবাদ পাবার যোগ্য সন্দেহ নেই। তবে অনেকেই জানেন না, হাসপাতালটি চলে খ্রিস্টিয়ান মিশনারি দ্বারা। সেবার আড়ালে যে তাদের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য আছে, তা আমরা দেখেও না দেখার ভান করি।

রিপন খান লিখেছেন, ‘‘এই কাজের মাধ্যমে সে লোকের সম্মান কমে নাই বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন কাজই খারাপ না যদি সেটা মানবসেবা অথবা বেঁচে থাকার জন্য হয়।’’

‘‘এদের থেকে আমাদের দেশের লোভী, ব্যবসায়ী, টেস্ট পরীক্ষার নামে গরীবদের রক্তচোষা ডাক্তারদের শিক্ষা নেয়া উচিত।। যারা কিনা মোটা অংকের ফি ছাড়া রোগীর সেবা দিতে চায় না। আফসোস আমাদের দেশের প্রতি’’ লিখেছেন ইমাম হোসাইন জুয়েল।

থোওয়াইনু প্রু মারমা লিখেছেন, ‘‘ভিন্ন জাতির হয়ে আমাদের দেশে এসে নিজের সুখ ত্যাগ করে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের দেশে চিকিৎসকরা কমিশন আর ফি না পেয়ে আন্দোলন করে। হায়রে ডাক্তার শিক্ষণীয় হওয়া উচিত।’’

ওয়াজেদ আলী ফকির লিখেছেন, ‘‘এমন ভাষাজ্ঞান আমার নেই যার মাধ্যমে এ মহানুভবতার প্রকাশ করবো, অপেক্ষায় রইলাম কবে ওনাদের দেখতে যাব সুহৃদ এই আত্মীয়দের।’’

‘‘আমাদের তো শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্য থাকে টাকা কামানোর জন্যে, সেখানে মানবতার ধার ধারার সময় কোথায়। আমরা যে সংকীর্ণমনা হৃদয়ের অধিকারী, সেটার পরিচয় আমরা নিজেরাই বহন করি। বড় আফসোস, কবে আমি, আমরা মানবিক ও ভালো মানুষ হতে পারব?’’ পরিতাপের সাথে লিখেছেন মো. জাহাঙ্গীর।

সালমান খান লিখেছেন, ‘‘আমাদের বাংলাদেশের ডাক্তাররা মানুষকে জিম্মি করে টাকা নেই আর বিদেশী একজন ডাক্তার বাংলাদেশে এসে ফ্রি চিকিৎসা দিতেছে।’’

ডা. জেসিন হানিফ সংকেতকে জানান, ডা. এড্রিক বেকার বেঁচে থাকার সময় কালিয়াকুড়ির এই হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছিলেন। পরে ডাক্তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে জেসন অস্থির হয়ে ওঠেন। কিন্তু তখন নিজের প্রশিক্ষণ ও ছেলেমেয়েরা ছোট থাকার কারণে জেসন বাংলাদেশে আসতে পারেননি।

অবশেষে সবকিছু গুছিয়ে সম্পদ আর সুখের মোহ ত্যাগ করে ২০১৮ সালে পুরো পরিবার নিয়ে আমেরিকা ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে আসেন মধুপুরে। জেসন হয়ে ওঠেন নতুন ডাক্তার ভাই আর মেরিন্ডি হয়ে ওঠেন সবার প্রিয় ডাক্তার বিবি। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন এই দম্পতি। তবে ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশি ডাক্তারদের গ্রামে গিয়ে দরিদ্র মানুষের সেবার আহ্বান জানিয়েছেন জেসন-রেরিন্ডি। তারা মনে করেন, দরিদ্র এসব মানুষের জন্য আরও ভালো চিকিৎসা দরকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মাহদী হাসান । ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:৪২ এএম says : 0
আমরা আল্লাহ্‌ পাকের বান্দা এবং মুসলিম বাংলা ভাষী মানুষ । আমরা খুব সহজে মানুষ্কে বিশ্বাস করে ফেলি কারন আমরা মানবিক কিন্তু দুনিয়াদার তাই টাকার ( ধন-সম্পদ ) মোহ আমাদের আছে । এই কারনে আমদের ডাক্তাররা এত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারেনা । কিন্তু ভাই, প্রত্যেক ঘটনার আড়ালে একটা উদ্দেশ্য থাকে তাই খেয়াল রাখতে হবে যেহেতু হাসপাতালটি খ্রীষ্টান মিশনারি দ্বারা পরিচালিত, তাহারা চিকিৎসার আড়ালে কোন দরিদ্র মুসলিম ভাইবোনকে দুনিয়াবি লোভ-লালসা দেখিয়ে টাকাপয়সা দিয়ে ধর্মান্তরিত করছে কিনা এটা খেয়াল রাখা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব ।
Total Reply(0)
Rohul amin ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:১২ এএম says : 0
ai hospital ti dirgodin jabot cholteche sei rokom kichu hoile seta manuser choke podto,mahdi hasan je comments korchen ata korenni.
Total Reply(0)
parvez ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:২৭ এএম says : 0
এখন উনাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া উচিত, যাতে উনারা পরকালেও লাভবান হন।
Total Reply(0)
Nooruzzaman khandakar ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:৪০ এএম says : 1
মেহদি হাসান যা বলেছেন,ঠিক আছে কিন্তু আমাদের মুসলিম ভাইদের মধ্যে কি এমন কোন বিত্তবান লোক নেই যে এরকম জনসেবামুলক পদক্ষেপ নিয়ে নবী স.এর আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করবে.
Total Reply(0)
TANVIR AHAMMAD ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৫২ পিএম says : 0
parvez vai you are submit for write comments:এখন উনাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া উচিত, যাতে উনারা পরকালেও লাভবান হন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন