শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দানব সরাতে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে

সেমিনারে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

দানব সরকারকে সরাতে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এমন একটা দেশে, পরিবেশে আমরা আছি। এটাকে ভেঙে নতুন সমাজ, নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে। আমাদের বয়স হয়ে যাচ্ছে, আমরা বৃদ্ধ। আমাদের সময় আমরা একটা নতুন দেশ তৈরি করেছিলাম। আজকে আমাদের তরুনদেরকে এগিয়ে আসতে হবে, যুবকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তরুনদের ওপর দায়িত্ব এসে পড়েছে যে, এই মনোস্টার বা দানব যে আমাদের সমস্ত অর্জনকে তছনছ করে দিচ্ছে, স্বপ্নগুলোকে ভেঙে খান খান করে দিয়েছে, আমার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে ফেলেছে তাদের সরাতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে সমস্ত দলমত নির্বিশেষ রাস্তায় নেমে পড়তে হবে। এটাই একমাত্র পথ। অনেকে হতাশার কথা বলেন। হতাশা শেষ কথা নয়। মনে রাখতে হবে প্রতি রাতের পরেই হবে নতুন সূর্যদয়।

গতকাল (রোববার) দুপুরে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সকল নৃশংসতাই যেন বিচ্ছিন্ন ঘটনা! সাগর-রুনি, বিশ্বজিৎ, নুসরাত, তনু, মীম, আবরার, সুমি’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।
ক্ষমতাসীনরা ‘টাকা বানানো’র রোগে আক্রান্ত মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, টাকা বানানো নাকী একটা ব্যাধি বা রোগ। সেই রোগে তো আপনারাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে গেছেন। আপনার সোনার ছেলেরা তাদেরকে এখন ধরে ধরে আনছেন, তাদেরকে বলার চেষ্টা করছেন-তোমরা এখন ভালো হয়ে যাও।
তিনি বলেন, আজকে বলা হচ্ছে- রোল মডেল বাংলাদেশ। কিসের? উন্নয়নের রোল মডেল। এই রোল মডেল-এখন যেটা দাঁড়িয়েছে, তা হচ্ছে- সন্ত্রাসের রোল মডেল, নারী-শিশু ধর্ষণের রোল মডেল, দুর্নীতির রোল মডেল। হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার করে দিচ্ছে-এটা আমার কথা নয়। গেøাবাল ইনটিগ্রিটি, তারা কিছুদিন আগে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে চলে যাচ্ছে, শেয়ার মার্কেট লুট হয়ে গেছে। মেগা প্রজেক্ট কিছুক্ষণ আগে শুনলেন- ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট চলে গেছে ৫০ হাজার কোটি টাকাতে। তারপরেও ২২/২৩টা মাত্র স্পেন বসেছে। সর্বত্র, সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি।

বিদেশে নারী শ্রমিক নির্যাতন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের নারীরা কাজ করবেন মর্যাদার সঙ্গে, মর্যাদাহানী করে কাজ করবেন এটা আমরা কখনো মেনে নিতে পারি না। আজকে অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে শুনি, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলছেন যে, এটা তো একটা সাধারণ ব্যাপার ৫৫ জন। এই যে মানসিকতা, সবচেয়ে ভয়ংকর মানসিকতা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে গ্রামের যে জোদ্দার জাতীয় কিছু লোক থাকেন, ভীষণ রকমের দুষ্ট বুদ্ধি থাকে আর মানুষকে এরা শুধু হয়রানি করে মিথ্যা মামলা দিয়ে থাকে তাদের সাথে খুব মিল। এরা হীনমন্যলোক এবং বেশিরভাগকে দেখবেন এরা গলাবাজী খুব বেশি করবে। চায়ের দোকানে ঢুকলে বুঝতে পারবেন এখানে আছে টেবিল চাপড়াচ্ছে।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্যের জবাবে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, তথ্যমন্ত্রী সাহেব বলেছেন যে, জিয়াউর রহমান সাহেব উনি সুযোগে পেয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং জিয়াউর রহমান নাকী টেন্ডার দিয়ে রাজনীতিবিদদের নিয়ে এসছিলেন, তারপরে তাদেরকে নাকী মন্ত্রণালয়-টন্ত্রণালয় দিয়ে সেভাবে দেশ চালিয়েছেন। এটা আমাকে কিছুটা আঘাত করলো বলে আমি গুগলে তার (তথ্যমন্ত্রী) প্রোফাইলটা বের করলাম- ভদ্রলোকের জন্ম কবে? দেখলাম ১৯৬৩ সাল। অর্থাৎ ১৯৭১ সালে যথন স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে তখন তার বয়স ৮বছর। জিয়াউর রহমান কি ছিলেন, কখন এসছেন, কি অবস্থার প্রেক্ষিতে তিনি বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষে পরিণত হয়েছিলেন-এটা তো তার জানার কথা নয় সেভাবে।

সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাÐের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রুনি আমার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হয়। রুনি যে দিন নিহত হলেন সেদিন ছুটে গিয়েছিলাম বাসায়। কিছুক্ষণের মধ্যে চারদিক ঘিরে ফেললো এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি ঘুরে এসে বললেন যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাকারীকে ধরা হবে। আজকে ৮ বছর হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত সাগর-রুনি হত্যাকাÐের কোনো সুরাহা হয়নি। সাগর-রুনিকে নিয়ে জরালো আন্দোলন শুরু হয়েছিল এরপর হঠাৎ একদিন বিভক্ত হয়ে গেলো। একটি শ্রেনী তারা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন। আরেক দল কিছুদিন চিৎকার করে করে ক্লান্ত হয়ে গেলো। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অপরাধ তারা এই সমাজকে বিভক্ত করে ফেলেছে, সমাজকে পুরোপুরিভাবে দূষিত করে ফেলেছে।”

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বেগম জিয়ার একজন জাতীয় নেত্রী, তিনি নারী নেত্রী। কি নির্যাতনটা হচ্ছে দেখছেন? রাজনীতির কথা বাদ দেন আমি মনে করি এতো বড় অন্যায়। এতো বয়সী, এতো অসুস্থ তারপরেও কেউ কেউ পাশবিক আনন্দ পায়। কিছু কিছু লোক আছে- অন্যের কষ্ট দেখে ভালো লাগে। মনে হয় বেগম জিয়া যত কষ্ট পাচ্ছেন তত বেশি প্রাণভরে ভেতরে ভেতরে হাসছেন। হয়ত টেলিভিশনে হাসেন না, আমরা দেখতে পারছি না। এই রকম পৈশাচিক আনন্দ যারা পান তাদের বিরুদ্ধে একসাথে সবাই মিলে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, আস্তে আস্তে অনেক কিছু বদলায়, সারা পৃথিবী বদলায়। বাংলাদেশ এখানে থাকবে কেনো? এখন বদলাবার জন্যে আপনারা কী তৈরি হচ্ছেন? যুগে যুগে তাই হয়েছে। অত্যাচারের সীমা আছে, নির্যাতনের সীমা আছে, গায়ের জোরে দখলদারিত্বে করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখারও একটা সীমা আছে। ওই সীমা পার হবার সময়, পড়ে যাওয়ার সময়। এখন আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে।

মান্না বলেন, এদিকে নারীরা দাঁড়াবে, আরেকদিকে কর্মচারিরা দাঁড়াবে, শ্রমিক দাঁড়াবে, সমস্ত পেশার মানুষরা দাঁড়াবে। একসাথে কোনো এক সময়ে সমস্ত রাজপথ আমাদেরই হবে। এটাই আমাদের দরকার। সেজন্য আমাদেরই প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার এখন। এই বিজয়ের মাসে আমরা সেই বিজয়ের ঘন্টা বাজাতে চাই।
সংগঠনের আহবায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজ উদ্দীন আহমদ, শিক্ষাবিদ প্রফেসর দিলারা চৌধুরী, প্রফেসর এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান ও সাংবাদিক মাহমুদা চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা তাহসিনা রুশদীর লুনা, শিরিন সুলতানা, আবদুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ফরিদা মনি শহিদুল্লাহ, আবদুস সালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম, হারুনুর রশীদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, শামসুল আলম প্রামানিক, বিলকিস ইসলাম, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ফরিদা ইয়াসমীন, নুরজাহান মাহবুব, আনোয়ার হোসেইন, খন্দকার আবু আশফাক প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
** মজলুম জনতা ** ২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৯:২৬ এএম says : 0
।।টাকা বানানো ছোঁয়াছে রোগ।।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন