শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে স্বার্থবিরোধী চুক্তি আড়াল করতে চান--- রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে ও বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা কুৎসা রটনা করে প্রধামন্ত্রী নিজেদের অবৈধ সত্ত্বা এবং মহাসমারোহে দুর্নীতি ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তিকে আড়াল করতে চান বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একই মিথ্যা ও কল্পিত কাহিনী বারবার প্রচার করে সত্য রূপে প্রতিষ্ঠা করতে চান। কারণ শেখ হাসিনার গুরু হচ্ছেন গোয়েবলস্সহ নাৎসীরা, কোন মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রনায়ক বা চিন্তানায়করা নন। গতকাল (সোমবার) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ কোম্পানির সঙ্গে কম্পিউটার আমদানির চুক্তি বাতিল সম্পর্কে শেখ হাসিনা আবারো মিথ্যে গালগল্প ফেঁদেছেন। কয়েকদিন আগে গণভবন এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “খালেদা জিয়ার প্রতিহিংসার কারণেই দেড় যুগ আগে চুক্তি করেও নেদারল্যান্ডসের ‘টিউলিপ’ কোম্পানির কম্পিউটার না নেওয়ায় সরকারকে ৩২ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছিল। খালেদা জিয়াকে বোঝানো হল যে, শেখ রেহানার মেয়ের নাম টিউলিপ। এই কোম্পানির নাম টিউলিপ ওদের কম্পিউটার নেওয়া যাবে না। নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ কোম্পানি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করলে বাংলাদেশ হেরে যায় এবং ক্ষতিপূরণও দিতে হয়।” রিজভী বলেন, শেখ রেহেনার কন্যা টিউলিপের নামের সঙ্গে কোম্পানির নামের মিল থাকার কারণেই বেগম খালেদা জিয়া চুক্তি বাতিল করেছিলেন-প্রধানমন্ত্রীর এই গাল গল্পের সূত্র কী?
টিউলিপ চুক্তি বাতিলের তিনটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে টিউলিপ কোম্পানির সাথে করা চুক্তিটি ছিল দুর্নীতি ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির একটি খারাপ নজির। বিএনপি সরকার এই চুক্তি বাতিল করেছিল তিনটি কারণ দেখিয়ে। এক. আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের তুলনায় দ্বিগুণ মূল্যে কম্পিউটার কেনার এই চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তি বাতিলের পর বিএনপি সরকার অন্যান্য দেশ থেকে টিউলিপের সাথে চুক্তির প্রায় অর্ধেক দামে কম্পিউটার আমদানি করেছিল। দুই. চুক্তির শর্তাবলীর সবই ছিল কোম্পানির পক্ষে এবং বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে। তিন. চুক্তির শর্তানুযায়ী নেদারল্যান্ডস অনুদানের প্রায় ৫০ কোটি টাকা বাংলাদেশকে দেয়নি।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এখন চারদিকে চলছে মিথ্যার বেসাতি, রাজনৈতিক পাপাচার আর বাচালতা। প্রধানমন্ত্রী প্রায় প্রতিদিন নিত্যনতুন আজগুবি গল্প ফাঁদেন। তার কথা বরাবরই অতিকথনে দুষ্ট। বেগম খালেদা জিয়া যদি প্রতিহিংসাপরায়ণ হতেন তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কারাগারে থাকতেন। কিন্তু সেই ধরণের প্রতিহিংসাপরায়ণ দৃষ্টান্ত বেগম খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপি’র নেই। তবে বাংলাদেশের জনগণ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের প্রকল্প মানেই দুর্নীতির মহাধুমধাম। তারা ২০১২ সালে একবার ‘দোয়েল কম্পিউটার’ নামে একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেছিল। সেই ‘দোয়েল’ কোথায় উড়ে গেছে তা জনগণ কিছুই জানেনা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গত এক দশকে দেশ থেকে নয় লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেলো, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লোপাট হয়ে গেলো আটশো দশ কোটি টাকা। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। এভাবে রাষ্ট্রীয় মদদে নানা উপায়ে চলছে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লুন্ঠন। অথচ, ¯্রফে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বেগম জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় আদালতের দোহাই দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাকে যথোপোযুক্ত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছেনা, জামিনও দেয়া হচ্ছেনা। জামিন নিয়ে মাসের পর মাস ধরে গড়িমসি করা হচ্ছে। কেন এই গড়িমসি, কেন এতো অজুহাত? জনগণের বুঝতে কিছুই বাকি নেই।
রিজভী বলেন, কিছুদিন আগে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামে লোক দেখানো অভিযানে চুনোপুঁটিদের ধরার পর গণমাধ্যমে যেই রাঘব বোয়ালদের নাম বের হয়ে আসতে লাগল তখনই অভিযান বন্ধ করে দেয়া হলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রেসনোট দিয়ে গণমাধ্যমে দুর্নীতির খবর প্রকাশে বিধি নিষেধ আরোপ করা হলো। অথচ প্রধানমন্ত্রী এখনও অভিযান নিয়ে মিথ্যা বলেই যাচ্ছেন। গতকালও বিদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারী, শেয়ারবাজার লুটপাটকারী, উন্নয়নের নামে সারাদেশে যে হরিলুট এই ১১ বছরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে না কেন? ভোটের আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে জনগণের ভোটের অধিকার ক্ষুন্নকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান যে চলবে না তা জনগণ জানে। যদি সত্যিকার দুর্নীতি বিরোধী অভিযান করতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। সেই সৎ সাহস প্রধানমন্ত্রী রাখেন না। ভোগ-লালসায় অস্থির থাকায় যারা মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করছে তারা কখনোই ন্যায়সঙ্গত কাজ করতে পারে না।
বিএনপির এই নেতা বেগম জিয়ার মুক্তি দাবি করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলবেন না। জামিনে বাধা সৃষ্টি করবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আইন-আদালত কব্জায় নিয়ে সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নাজেহাল করা হচ্ছে জনগণ তা আর বেশি দিন মেনে নিবে না। জনগণ কাউকেই ক্ষমা করবেনা। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তাঁকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করার সুযোগ দিন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমূখ।
১০ ডিসেম্বর শোভাযাত্রা: আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। এ উপলক্ষে ওই দিন রাজধানীতে শোভাযাত্রা করবে বিএনপি। বেলা ১১টার সময় ঢাকায় এবং দেশব্যাপী বিভাগীয় সদরে র‌্যালী অনুষ্ঠিত হবে। 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
** মজলুম জনতা ** ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৯:২৪ এএম says : 0
মুক্ত চিন্তা।মনোনশীলতা।উদর নিতি।.....।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন