শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মানবতার সেবায় বাংলাদেশে আমেরিকান ডাক্তার দম্পতি জেসন-মেরিন্ডি

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৪:২৪ পিএম

মানুষ যেখানে দেশ ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত, ঠিক তখনই বিলাস বহুল জীবন ছেড়ে বাংলাদেশের এক কোনে পাহাড়ী অঞ্চলে মানুষের সেবা দিতে এসেছেন আমেরিকান ডাক্তার দম্পতি জেসন মরগেনসন ও মেরিন্ডি জোসেক। ২০১৮ সালে তারা সুদূর আমেরিকা থেকে ‘কাইলাকুড়ী স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রে’ সাধারণ মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিতে আসেন।

শুধু তাই নয়, তাদের তিন বছরের চার সন্তানকেও নিয়ে আসেন। তাদের ভর্তি করেছেন স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মানুষের চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি ডা. জেসন গ্রামের রাস্তায় লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়ান। সহজেই মিশে গিয়েছেন গ্রামের মানুষদের সঙ্গে। গ্রামে থাকার কারণে তারা তাদের খাদ্যাভাসও পাল্টে নিয়েছেন।
গ্রামের মানুষদের সঙ্গে মিশতে মিশতে শিখে ফেলেছেন বাংলা ভাষা। এখন তারা সুন্দরভাবে বাংলায় কথা বলতে পারেন। শুধু তারা নয়, সন্তানদেরও বাংলা ভাষা শেখাচ্ছেন ডাক্তার এই দম্পতি।

১৯৭৯ সালে ডা. এড্রিক বেকার নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে এসে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চলের শোলাকুড়ী ইউনিয়নের কাইলাকুড়ীতে ‘কাইলাকুড়ী স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র’ নামে একটি প্রাথমিক সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

দীর্ঘ ৩৬বছর পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষদের চিকিৎসা সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। গড়ে তুলেন একটি হাসপাতাল। এদেশে মানুষের ভালোবাসায় নিজেকে বিলিন করে দিয়েছিলেন। এলাকায় সবাই ভালোবেসে তাকে ডাক্তার ভাই বলে নামে। ২০১৫ সালের ১া সেপ্টেম্বর এই মহান ব্যক্তি ডা. এড্রিক বেকার চলে যান না ফেরার দেশে।
ডাক্তার দম্পতি জেসন মরগেনসন ও মেরেন্ডি জোসেক বলেন, ডাক্তার ভাই (ডা. এড্রিক বেকার) ২০১৫ সালে মারা যাওয়ার খবর শুনে তখনি এদেশে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার সন্তানরা ছোট থাকায় তখন আসা সম্ভব হয়নি। তাই গত বছর (২০১৮) পুরো পরিবার নিয়ে গরীবদের সেবা করতে এখানে চলে এসেছি। যতদিন সম্ভব এ দেশের মানুষদের সেবা করে যাবো।

এদিকে আমেরিকান ডাক্তার দম্পতির বিষয়টি ইত্যাদিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন তাদের একনজর দেখার জন্য।

দর্শনার্থীরা জানান, বিদেশী এই ডাক্তার দম্পতি মানবতায় বিশাল নজির রেখেছেন। তাদের এক নজর দেখতে এসেছি। তারা সাধারণ মানুষদের সুচিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সব কিছু ত্যাগ করে আমাদের দেশে এসেছেন। তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এখানে করছি।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা বলেন, এ হাসপাতালে যে বিদেশী ডাক্তার আছেন তারা অনেক ভালো। তাদের চিকিৎসার কারণে আমরা এখন অনেক সুস্থ্য।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রিজন নকরেক বলেন, ডা. এড্রিক বেকার যিনি এই এলাকার মানুষের কাছে ডাক্তার ভাই নামে পরিচিত, তিনি মারা যাওয়ার পর আমরা অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ে যাই। আর্থিক সংকটসহ হাসপাতালে নানান সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তীতে আমেরিকান ডাক্তার দম্পতি এসে হাসপাতালের চিকিৎসা দিতে শুরু করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠার।
কে এই ডাক্তার এড্রিক বেকার?

১৯৪১ সালে নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনে এড্রিক বেকারের জন্ম। তিনি ওটাগো মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে চিকিৎসা দিতে চলে যান যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামে। পরে বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন। টাঙ্গাইলের মধুপুরের প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকায় চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত দরিদ্র লোকদের দেখে তার মন কেঁদে উঠে। পরে সেখানে দরিদ্র মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠা করেন ‘কাইলাকড়ী স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র’।

৩৬ বছর মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে এই হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। হাসপাতালের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়। তিনি মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করে সারাজীবন থেকে যান চিরকুমার।

গরিবের ডাক্তার হিসেবে খ্যাত এই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সালে এ দেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। কাইলাকুড়ী গ্রামে চার একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালে মাটির ছোট ছোট ২৩টি ঘরে ডায়াবেটিক, শিশু, ডায়রিয়াসহ ৭টি বিভাগে ৪০ জন রোগী ভর্তির ব্যবস্থা আছে। এছাড়া প্রতিদিনই আউটডোরে শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়।

এদিকে ডাক্তার বেকারের মৃত্যুর পর এই হাসপাতাল নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন হাসপাতালের ৯৩জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। পরে তারা বেকারের নির্দেশনা মোতাবেক হাসপাতালের হাল ধরে। বর্তমানে হাসপাতাল চলছে ডাক্তার বেকারের স্মৃতি নিয়ে।

প্রতিদিনই দরিদ্র রোগীরা আসছেন আর চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। নতুন রোগীদের জন্য ২০ টাকা আর পুরাতনদের জন্য ১০টাকা করে ফি নির্ধারণ করা।
ডা. এড্রিক বেকারের মৃত্যুর পর অনেকটা অসুবিধার মধ্যে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে কষ্টদায়ক বিষয় হচ্ছে দেশের কোন ডাক্তার এ হাসপাতালের হাল ধরতে এগিয়ে আসেননি। পরবর্তীতে বিদেশী ডাক্তার দম্পতি জেসন-মেরিন্ডি এই হাসপাতলের চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে কাজ শুরু করলে বর্তমানে সাধারণ মানুষ পুণরায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
jack ali ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৪:৪৮ পিএম says : 0
we are shameless ---- this is the duty of our government to give free treatment to our country people---but they are busy to loot our tax payers money....
Total Reply(0)
আবু বকর সিদ্দীক ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:০৭ পিএম says : 0
এরা কোন ধর্মের অনুসারী?
Total Reply(0)
llp ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:১৮ পিএম says : 0
Everything free comes with a much bigger price from changing culture, name, ideology to changing religion. Shameless people looks for free things.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন