মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন : অসীমের প্রশংসিত বার্তা বাহক কে?

উত্তর দিচ্ছেন : আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

উত্তর : ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’র সাথে ওতপ্রোতভাবে বিজড়িত রয়েছেন ‘মুহম্মদুর রসুলুল্লাহ’ (স.)। যাঁর আভিধানিক মর্ম ‘আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ উপাস্য নেই, মোহাম্মদ (স.) তাঁর প্রেরিত রসুল।’ এই অনুপম বাণীর ব্যাখ্যা সুদূর প্রসারী। যা স্বীয় জবানে, জানে ও জরুরি রূপে কর্মে রূপান্তরিত করা ইমানের বৈশিষ্ট্য। তা ক্বোরআন হাদিসে মূল উৎস। এতে রাসুলুল্লাহ (স.)-কে পেরিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব নয়। তাঁকে ব্যতীত সৃষ্টি জগতের জল্পনা কল্পনাও নেই। লতিফা প্রসঙ্গে নফি ইসবাতের ঝলকে তৎসমূহ সমুদ্ভাসিত হয়। তাইতো কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছা করেÑ “চন্দে ছুজম দর-ফিরাক্কত ইয়া মুহম্মদ মুস্তাফা, কয়-ববিনম আঁ-জামালত ইয়া মুহম্মদ মুস্তাফা।” রসুলুল্লাহ (স.)-কে স্বাগতের অভিসিক্তে সর্বজনীন খুশির পয়গাম নিয়ে আসে ‘ফাতেহা দোয়াজ দাহম’। যা স্মরনীয় বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দুর পাশে অন্ধকারের তমিস্রা ভেদ করে জ্যোতির্ময়ের আলোতে পরিপূর্ণ করেছে। অনুসন্ধিৎসুদের তত্ত্ব-তালাশে প্রতীয়মান যোগ্য যে, সৃষ্টিকর্তার আদেশ-বর্তিকায় হযরত আদম (আঃ) থেকে যুগ-যুগান্তের ঘূর্ণিতে একলক্ষ চব্বিশ হাজার মতানৈক্যে দু’লক্ষ চব্বিশ হাজার বিশ্ববরেন্য নবীর শুভাগমন ঘটে, যাতে শান্তির বাণীর প্রকল্পে একেশ্বরবাদের প্রকাশ পায়। সবশেষে স্রষ্টার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ও প্রশংসিত রসুল (স.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন রবিউল আউয়াল সোমবার শুভলগ্নের অন্তরায়। দিবা-রাত্রির ফয়সালাতে সুবহ সাদেকের মহিমায় জাগ্রত। আরবের মক্কা নগরে বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু পবিত্র কাবা’র নিকটবর্তী স্থানে মা আমিনার গৃহে আত্মপ্রকাশ করেন। নির্ণেয় তারিখ থেকে ‘ঈদে মিলাদুন-নবী’ বা ‘ফাতেহা দোয়াজ দাহম’ সারা বিশ্বে উদযাপিত হয়ে থাকে। সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ রসুলের (দঃ) পূর্বাভাসে পিতা আব্দুল্লাহর মৃত্যু হলেও পরবর্তী স্বল্পতায় মাতা আমিনা আল্লাহ পাকের মরজিতে আলমে দুনিয়া ত্যাগ করেন।

রসুলুল্লাহ (স.) জীবনে বহু ধরনের বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে ৬১১ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি (১৭ রমজান) ৪০ বছর বয়সে পরম কৌশলী সুমহান আল্লাহ পাকের আদেশে নবী বা রসুল হিসাবে ঘোষিত হন। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে পূণ্যময়ী ভূমি মক্কা থেকে মদিনা শরিফ অভিনন্দিত হয়ে প্রত্যাবর্তনের তারিখ থেকে হিযরত বা হিজরি সন গণনা করা হয়। যার প্রথম হিজরিতে মসজিদে নববী স্থাপন, যেখানে প্রতি নামাজের ফজিলত পঞ্চাশ হাজারের সম্পূরক। দ্বিতীয় হিজরিতে আজান, জাকাত ও রোজা নির্ধারিত এবং বদরের যুদ্ধ। অতঃপর তৃতীয় হিজরিতে ওহুদের যুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে দুঃখ ও শোচনীয় অধ্যায় রচনা করে। পুণরায় ৬ষ্ঠ হিজরিতে খন্দকের যুদ্ধ ও হুদাই বিয়ার সন্ধি এবং পর্দা প্রথা তৎসঙ্গে পবিত্র হজ্বের তাৎপর্য ও তা জরুরি বলে গুরুত্ব আরোপ করে। ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে বা ৭ম হিজরিতে মদ্যপান সম্পূর্ণভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে বা ৮ম হিজরীতে মক্কা শরিফ বিজয় করেন তিনি। ৬৩১ খ্রিস্টাব্দে বা ৯ম হিজরিতে তাবুক অভিযানের পর ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে বা ১০ম হিজরিতে স্বীয় পবিত্র জীবনের সর্বশেষ হজ্বব্রত পালন করেন অগণিত সঙ্গী সাহাবী বা অনুগামী নিয়ে। উক্ত সাহাবীদের হৃদয়তন্ত্রীতে ছিল জেহাদি প্রয়াস। স্বার্থবাদী বিধর্মীদের জুলুম অত্যাচার ও ধর্মীয় হস্তক্ষেপ রোধ করত অন্যায়ের বিপক্ষে ন্যায়ের রক্তেরাঙা সংগ্রাম ছিল তাঁদের আদর্শ। নিষ্ঠুর জেহাদ ক্রান্তির অন্তরালে বৈপ্লবিক সংগ্রামের সুপ্ত রেখায় লিপ্ত হয়ে যাঁরা শহিদের মৃত্যু বরণ করেছে তাঁরাই বেহেশতের মানচিত্রে ধন্য হয়েছে। এতে জেহাদ কালের মল্লভূমিতে প্রতি নামাজের সমন্বয়ে বিশ হাজারের মর্যাদা রাখে। আবার ওয়ারাসাতুল আম্বিয়াদের প্রভাবে ও তথ্যাদির চ্যানেলে ধর্মীয় প্রগতির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে মানসুর হয়ে যাঁরা শক্তভাবে হাল ধরেছে তাঁরাই মনজিলে মাকসুদে সিরাতে মুসতাক্কিমে পৌঁছেছে।
সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ পাক যুগে যুগে তাঁর বান্দাদের হেদায়তের অভিপ্রায়ে ওহী কিতাব পয়গাম সহিফা এমনকি তা ব্যতিরেকেও অসংখ্য নবী বা রসুল পাঠিয়েছেন, তন্মধ্যে কারও মতে অনুমেয় ৩১৩ বা ৩১৫ জন ছিলেন পয়গামপ্রাপ্ত রসুল। তথ্যাদির সহন ক্ষমতায় নিরাপত্তার প্রযুক্তিতে সংযত রাখার বাস্তবায়নে আসমানি কেতাবের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ক্বোরআন মজিদ। এতে ২৫ জন নবী বা রসুলের নাম প্রকাশ পায়। মূলত স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ নবী রিসালাতের অগ্রদূত হযরত মোহাম্মদের (স.) প্রতি এ অতুলনীয় কেতাব নাজেল হয়েছে, যা শব্দালঙ্কারের পরিপাট্যে, ছন্দের সুবিন্যাসে, ভাষার মাধুর্যে ও ভাবের গাম্ভীর্যে এ দুনিয়ায় অতুলনীয় ও অদ্বিতীয় মহাগ্রন্থ হলেও অলৌকিকত্বের দিক দিয়ে একেবারেই অনুপম। সমস্যাবহুল পরিক্ষেত্রে আচমকা রূপের ক্রমবিকাশে পবিত্র ক্বোরআন হচ্ছে সত্যের প্রাণকেন্দ্র। তাই তো অতীতের তুচ্ছ কথার রেফারেন্স টেনে আজ চ্যালেঞ্জের বার্তায় ইন্টারনেট ম্যাসেজের যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পথে। যৌক্তিকতার খসড়া প্র্যাকটিসে অবর্ণনীয় সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার বর্ণোজ্জ্বল রূপ পরিগ্রহ করছে আল ক্বোরআন। সত্যতা নিয়ে সন্দিহানের বিতর্কে সকলের সার্বিক সহযোগিতায় নিত্যানন্দে রাজনৈতিক অথবা অরাজনৈতিক আলোচনা চক্রে নৈতিকতার ক্ষেত্রে একমাত্র ক্বোরআন হাদিসই যথেষ্ট। তথ্যাদির চ্যানেলে প্রচারিত ও বিশেষজ্ঞের প্রভাবে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ নিয়ে ধর্মীয় প্রগতির লক্ষ্যে যাঁরা শক্তভাবে হাল ধরছে তাঁদের জীবন অবশ্যই ধন্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন