শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সারের দাম কেজিতে কমছে ৯ টাকা

‘মনিটরিং করে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ডিলার এবং কৃষক পর্যায়ে ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারের দাম প্রতি কেজি ৯ টাকা করে কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, র‌্যাব-পুলিশ বা মনিটরিং করে কোনোদিনই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বাজার মূলত চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। যোগান বা সরবরাহ বেশি হলে কিছু করা লাগবে না, এমনিতেই পণ্যের দাম কমে যাবে বলেন তিনি।

গতকাল বুধবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় কৃষি সচিব নাছিরুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, কৃষক পর্যায়ে ডিএপি সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে প্রতি কেজি ১৬ টাকা। আগে যা ছিল ২৫ টাকা। আর ডিলার পর্যায়ে প্রতি ২৩ টাকা থেকে কমিয়ে ১৪ টাকা করা হবে। যা চলতি ডিসেম্বর মাসেই কার্যকর হবে। ইউরিয়া সারের ব্যবহার হ্রাস ও ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ লাঘবের উদ্দেশে একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী বরাবর উপস্থাপন করলে তিনি সারের দাম কমানোর প্রস্তাবে অনুমোদ দেন। যা বিজয়ের মাসে সরকারের এ পদক্ষেপ কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন মোতাবেক সব পর্যায়ে (অর্থাৎ ডিলার এবং কৃষক পর্যায়ে) ডিএপি সারের দাম প্রতিকেজি ৯ টাকা কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, এর ফলে কৃষক পর্যায়ে ডিএপি সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতিকেজি ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা এবং ডিলার পর্যায়ে প্রতিকেজি ২৩ টাকা থেকে কমিয়ে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত ৮০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে সরকারের। প্রতি বছর সরকার ৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ হ্রাস, সুষম সার ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ, কৃষিক্ষেত্রে গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোসহ পরিবেশবান্ধব টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার ডিএপি সারের মূল্য পুনরায় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, ডিএপি সারে ১৮ শতাংশ নাইট্রোজেন (অ্যামোনিয়াম ফর্মে) এবং টিএসপি সারের সমপরিমাণ ফসফেট (অর্থাৎ ৪৬ শতাংশ ২০৫) রয়েছে। ফলে এ সার প্রয়োগে ইউরিয়া ও টিএসপি উভয় সারের সুফল পাওয়া যায়। ফলে ইউরিয়া ও টিএসপি সারের ব্যবহার হ্রাস পেয়ে অর্থ ও শ্রম উভয়ের সাশ্রয় হয়। ডিএপি সারের দাম কমায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত দশ বছরে সারের দাম এক টাকাও বাড়েনি। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় নন-ইউরিয়া সারের মূল্য অস্বাভাবিক বেশি থাকায় কৃষকের পক্ষে সার ব্যবহার করে ফসল ফলানো কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার দফায় দফায় কমিয়েছে। ২০০৯ সালে টিএসপি সারের দাম ছিল প্রতিকেজি ৮০ টাকা, ২০১৪ সালে এটি কমিয়ে ২২ টাকা করা হয়। ২০০৯ সালে মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সারের দাম ছিল ৭০ টাকা, ২০১৪ সালে তা কমিয়ে ১৫ টাকা করা হয়। এছাড়া ২০০৯ সালে ডিএপি সারের দাম ছিল ৯০ টাকা, ২০১৪ সালে তা কমিয়ে ২৫ টাকা করা হয়। চলতি মৌসুমের এ ডিসেম্বরে খুব শিগগির ডিএপি সারের দাম ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এটির সব ধরনের অনুমোদন হয়ে গেছে। এখন শুধু সার্কুলার জারি করা বাকি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বাড়ছে, সরকার কী বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি সবসময় বলি কাঁচাবাজারের সব পণ্যই পচনশীল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ বা র‌্যাব দিয়ে অভিযান চালিয়ে আপনি কোনোদিনই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। বাজারের যে শক্তি সেটাই এটাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। বাজার মনিটর করার জন্য সব দেশেই কমিটি রয়েছে। কিন্তু তেমনভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটা নির্ভর করে চাহিদা ও যোগানের ওপর। যোগান বা সরবরাহ বেশি হলে কিছু করা লাগবে না, অটোমেটিক্যালি দাম কমে যাবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, কিন্তু সম্প্রতি লবণের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লবণের বিষয়টা ছিল গুজব। তাই সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। চাহিদার তুলনায় লবণ বেশি আছে তাই সম্ভব হয়েছে। আমি বলেছি, শুধু বাজার মনিটর করে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তারপরও বাজার তো মনিটর করতেই হবে। কিছু ভুলতো আমাদের রয়েছেই। যখন আমাদের পেঁয়াজ পচে গেলো তখনই তো আমাদের উচিত ছিল বেশি বেশি পেঁয়াজ আমদানি করা। পেঁয়াজ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যর দামই বাড়ছে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া খুব কঠিন। সব জিনিসের দাম বেড়েছে এটা ঠিক না। ভোজ্যতেলের দাম বাড়েনি, সব কিছুই সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে পেঁয়াজটাই অসহনশীল পর্যায়ে গেছে। কোনোভাবেই এ দাম গ্রহণযোগ্য নয়।

নিজে ২৫০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কেনেন কি না জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কম কেনা হয়। আগে যে রকম কিনতাম এখন ওতোটা কিনি না। আমরা অনেকগুলো পেঁয়াজের ভ্যারাইটি নিয়ে এসেছি। আশা করি আগামীতে আমরা পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব। মূল পেঁয়াজ এখনো ওঠেনি। বীজ থেকে লাগানো পেঁয়াজ উঠতে সময় লাগবে। আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা আছে, তাতে সংরক্ষণ করতে পারলে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।
সারে ভর্তুকি দেয়ার পরও কেন কৃষক ফসলের মূল্য পাচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সারের বেনিফিট পুরো কৃষকরা পাবে। বাজারে শাক-সবজির যে দাম বেশি এগুলোর অনেকগুলোর কারণ রয়েছে। পরিবহন খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেশি। তাই উৎপাদন খরচ ও ভোক্তাদের ক্রয়ে অনেক পার্থক্য। কিন্তু এখন দামটা অনেক বেশি। তবে আমার মনে হয় খুব দ্রুত দাম কমে আসবে। এটা এমন কমবে যে, চাষিরা বিক্রিই করতে পারবে না, এমন পরিস্থিতি হতে পারে।

চালের বাজার নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, খাদ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছেন যে, ওএমএস’র গাড়ি থেকে মোটা চাল মানুষ নিতে চায় না। কোনো মানুষ ওএমএসের চাল নেয় না। মোটা চালের দাম এক টাকাও বাড়েনি। আমরা ভিজিএফ’র মাধ্যমে কিছু চাল দিয়ে থাকি। এসব চাল নিয়ে কেউ খায়, কেউ বিক্রি করে দিয়ে চিকন চাল কেনে। এই হলো পরিস্থিতি। চাল যারা কিনতে পারে, তাদের জন্য দাম বাড়লে সমস্যা কী। চালের দাম না বাড়লে তো আবার কৃষক দাম পাবে না। আমরা তো চাচ্ছি যে ধানের দাম বাড়ুক।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, আমরা যদি ৩০ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারি, তাহলে পেঁয়াজের সমস্যা আর হবে না। আমরা এ লক্ষ্যেই পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। ফরিদপুর, মেহেরপুর ও পাবনা এলাকায় পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয়। আমরা এসব এলাকায় আগামীতে আরও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ ও ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আলু রফতানিতে আরও দুই বছর প্রণোদনা দেওয়া উচিত। রপ্তানি উপযোগী আলুর জন্য কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও টিস্যু কালচারে যেতে হবে। এই শিল্পকে লাভবান করতে বিএডিসি এখন থেকে শুধু বীজ উৎপাদন নয় আগামীতে আলু রপ্তানি করবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আলু রপ্তানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেই। এ বিষয়ে আমি গভীরভাবে চিন্তা করছি। উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করবো। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য ও ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রণোদনা এক দুই বছর বাড়িয়ে দেয়া উচিত। বাজারে প্রবেশের পর তা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা হবে। এছাড়া আলু রপ্তানির উদ্দেশ্য আমদানিকারকদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অ্যাক্রিডেটেড ল্যাব স্থাপন করবে। বারি এ পর্যন্ত ৯১টি আলুর জাত অবমুক্ত করেছে। আলু প্রসেসিং করে রপ্তানির উদ্যোগ নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন