শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নে কোন আপোষ নয় : প্রধান বিচারপতি

প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস.কে সিনহা) বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রশ্নে কারো সাথে কোন আপোস করবো না। আমার শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতেও এ বিষয়ে আপোষ নেই। তিনি আরো বলেন, টেকনিক্যাল আইন দিয়ে কোন বিচার আটকানো যায় না। আইন-প্রণয়ন যারা করেন তারা সচেতন না হওয়ায় আইনি অনেক ত্রুটি দেখা দেয়।
দেশব্যাপী সফরের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় আদালতের বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শেষে আইনজীবী সমিতির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম কুমিল্লার আদালতের বিচার ব্যবস্থার ইতিবাচক বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, বিচারপ্রার্থীরা দিনের পর দিন আদালতের দুয়ারে এসে হয়রানীর শিকার হয়ে ফিরে যাবেন এটা হতে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, বিভিন্ন আদালতের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বিচারকদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম সাক্ষী না আসার কারণে অনেক মামলা বছরের পর বছর ধরে ঝুলছে। সাক্ষী সমস্যার কারণে কেবল মামলার বাদীই নয়, আসামীরাও হয়রানী হচ্ছেন। বিচারের রায় না হওয়া পর্যন্ত একজন আসামীকে অপরাধী বলা যাবে না। কিন্তু সেও তো ধার্য্য তারিখে তারিখে আদালতে এসে ফিরে যাচ্ছে। যথাসময়ে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার ব্যাপারে কোর্ট পুলিশ, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক হতে হবে। না হয় মামলাজট লেগেই থাকবে। আমি এ অবস্থা দেখতে চাই না। মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সাক্ষী না এলে মামলাটিতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কুমিল্লার আদালতের বিভিন্ন কক্ষের অবস্থা দেখে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, কোর্টগুলোতে ঠিকমতো বসার জায়গা নেই। ফাইল রাখার কোন ব্যবস্থা নেই। কোর্টের প্রত্যেকটি কক্ষ ছোট ছোট। আলো বাতাস ঠিকমতো পাওয়া যায় না। দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। আর এ অবস্থার মধ্যেই মামলা নিয়ে আমাদের বিচারক, আইনজীবী থেকে শুরু করে বাদী-বিবাদী সবাই কষ্ট করছেন। তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অসংখ্য মামলা ও বিচারক অপ্রতুলতার বিষয়টি সারাদেশে একই চিত্র। আমরা যেখানে মামলা বেশি এবং যেখানে বিচারক সংকট সেখানে বিচারক নিয়োগ দেবো। এটা সহসাই হচ্ছে।
আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদেরকে বিজ্ঞ আইনজীবী বলা হয়ে থাকে। এটির মর্যাদা ধরে রাখুন। মানাভিমান ভুলে কাজ করুন। আর গরীব বিচার প্রার্থীরা যাতে কোনভাবে হয়রানী না হয় সেইদিকে বেশি খেয়াল রাখবেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। বিচারকরা সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিচারকাজে কোন হস্তক্ষেপ হয় না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের বিষয়ে আমার শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে কারো সাথে কম্প্রোমাইজ (আপোস) করবো না।      
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সফিকুল আলমের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট  সৈয়দ নুরুর রহমানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মফিজুল ইসলাম। সাবেক সভাপতিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ আবদুল্লাহ পিন্টু, অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক, অ্যাডভোকেট নাজমুস সাদাত, অ্যাডভোকেট আহম তাইফুর আলম ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সদস্য অ্যাডভোকেট কাইয়ুমুল হক রিংকু। অনুষ্ঠানে কুমিল্লা জেলা পিপি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান লিটন ও কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।  
মতবিনিময় শেষে কুমিল্লা সার্কিট হাউজে বিকেল সোয়া ৫টায় কুমিল্লার আদালতে কর্মরত বিচারকদের সঙ্গে বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দিক নির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন