বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভারতকে আর কত সুবিধা দিতে হবে?

| প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

আগামী মাস থেকে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় একটি হোটেলে বাংলাদেশ ও ভারতের নৌসচিব পর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরীক্ষামূলক এই বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ট্রানজিট চার্জ ও কাস্টম চার্জ প্রয়োগ করা হবে না। বাংলাদেশের নৌসচিব মো. আবদুস সামাদ বলেছেন, এ সময়ে কেবল প্রথাগত চার্জ ধরা হবে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। অন্যদিকে ভারত শুধু বন্দর ব্যবহারের ফি দিতে রাজি, সড়কের ফি দিতে রাজি নয়। বন্দর ব্যবহারের সময় ভারতীয় জাহাজের ক্রুদের মাটিতে নামার সুযোগ দেয়া হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ভারতের মাটিতে আমাদের জাহাজের ক্রুদের নামতে দেয়া হয় না। বিশ্লেষকরা একে চরম অপমান ও লজ্জার বলে মনে করেন। বন্দর ব্যবহারের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারত নৌপথে কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য নিয়ে আসবে। পরবর্তীতে তা সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরা নিয়ে যাওয়া হবে। পণ্য পরিবহন খরচ ও সময় কমাতে ভারত বহুদিন ধরেই চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। অবশেষে ২০১৫ সালে তা আদায় করতে সক্ষম হয়। ঐ বছরের ৬ জুন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারত ২০১৬ সাল থেকেই বাংলাদেশের নৌবন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করে আসছে।

বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর এবং সড়ক ও নৌ ট্রানজিট ভারতকে ব্যবহার করতে দেয়া নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সচেতন মহলে যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। বিশ্লেষকরা বিভিন্নভাবে এবং বহুভাবে বলেছেন, এতে বাংলাদেশের লাভ বলতে কিছু নেই, পুরোটাই ভারতের স্বার্থ ও লাভের পক্ষে গেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্যপরিবহনে এতদিন অনেক পথ পাড়ি ও অর্থ ব্যয় করতে হতো। বাংলাদেশের সড়ক, নৌ ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের ফলে তার পণ্য পরিবহন খরচ যেমন অনেক কমে যাবে, তেমনি সময়ও অনেক কম লাগবে। এতে বাংলাদেশের স্বার্থ ও লাভের তেমন কিছু নেই। উপরন্তু পণ্য ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে যেটুকু লাভবান হতো, তাও ভারতের আপত্তিতে নাকচ হয়ে যায়। শুরুতে যে শুল্ক নির্ধারণ করেছিল, পরবর্তীতে তা প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগে নামিয়ে আনা হয়। পর্যবেক্ষকদের অনেকে তখন ক্ষোভের সঙ্গে মন্তব্য করে বলেছিলেন, যদি তাই করা হয়, তবে এটুকু শুল্ক ধরারই বা দরকার কি? ভারতকে বিনা শুল্কে দিয়ে দিলেই হয়। বিশ্লেষকদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের কোনো তোয়াক্কা না করেই সরকার উক্ত শুল্ক নির্ধারণ করে। এখন বন্দর ও সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ভারত শুল্ক দেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করছে। সড়ক ব্যবহারে শুল্ক দিতে একেবারেই রাজি নয়। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সরকারও এ নিয়ে তেমন দর কষাকষি করছে না। অনুমান করতে কষ্ট হয় না, বন্দর ব্যবহারের শুল্কহার নির্ধারণে ভারত যা বলবে এবং যেভাবে দিতে চাইবে অতীতের মতো তাই মেনে নেয়া হবে। এ পর্যন্ত ভারতের সাথে যত চুক্তি হয়েছে, তার কোনোটিতেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্বার্থ হাসিলে সরকারকে দর কষাকষি করতে দেখা যায়নি। ভারত যেভাবে চেয়েছে, সেভাবেই বিনাবাক্যে মেনে নিয়েছে। পরিতাপের বিষয়, ভারতের সাথে যেসব চুক্তি হয়েছে, তার কোনোটারই বিস্তারিত বিবরণ সরকার দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরেনি। মানুষকে অন্ধকারে রেখেই সব চুক্তি সম্পাদন এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ভারত আমাদেরকে যতভাবে যত দিক দিয়ে পারছে, তত দিক দিয়েই বঞ্চিত করে চলেছে। সীমান্তে মানুষ হত্যা ও ধরে নিয়ে নির্যাতন করা থেকে শুরু করে পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়াসহ হেন কোনো অপকার নেই যা ভারত করছে না। এখন মুসলমানদের নির্যাতন করে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দুঃখের বিষয়, দেশের সিংহভাগ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজমান থাকলেও আমাদের সরকার ভারতসৃষ্ট সমস্যায় বাধা দেয়া দূরে থাক, ন্যূনতম কূটনৈতিক ভাষায়ও প্রতিবাদ করছে না। এমন দুর্বল পররাষ্ট্র নীতি বিশ্বে আর কোনো দেশে আছে কিনা, আমাদের জানা নেই।

চাহিবা মাত্র কাউকে দিতে থাকলে, সে ক্রমাগত চেয়ে যাবে-এটা স্বাভাবিক। ভারত তার স্বার্থে বাংলাদেশের কাছ থেকে চেয়ে পায়নি, এমন কিছু নেই। তার চাওয়ার পরিধি এত বিশাল যে, আমাদের ভূখন্ড, সড়ক ও বন্দর সে ব্যবহার করবে বা করছে, তার হিসাব অনুযায়ী। এক্ষেত্রে আমাদের হিসাবের কোনো মূল্য দিচ্ছে না। এর চেয়ে অপমান ও লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে! দেখা যাচ্ছে, ভারতের সব ইচ্ছার কাছে আমাদের সরকার বন্ধুত্বের নামে অবনত হয়ে পড়ছে। আমরা মনে করি, ভারতকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী যা দেয়ার দেয়া হয়েছে। এখন তার এসব চাওয়া বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের চাওয়াটিকে প্রাধান্য দেয়া সরকারের উচিৎ। বন্দর থেকে শুরু করে সড়ক ব্যবহারে ভারত নির্ধারিত নয়, দেশের বিশেষজ্ঞদের মতামত ও মানুষের সন্তুষ্টি অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণ করতে হবে। ভারতের সাথে সব চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ দেশের মানুষকে জানাতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
ash ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:১৩ এএম says : 1
AMADER MAKE SURE KORTE HOBE VAROTIO KONO MAL JENO TRIPURA PORJONTO NA POWSAY ! WE BANGLADESHI PEOPLE HAS TO BE STAND UPPPPPPPPPPPPPPPPPPP
Total Reply(0)
jack ali ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:১১ পিএম says : 1
We fought against Pakistan--- because they used to take our wealth---now we liberated our country for what??? to be a slave of our government-- who thinks that our country belongs to them--- they treat our country as if their personal property as such they have sold our beloved country to India.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন