বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দ্বি-জাতিতত্ত্ব ও রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক

নাগরিকত্ব ও ধর্ম নিয়ে বিজেপির বিপজ্জনক খেলা- শেষ পর্ব

দ্য ডন | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

অযোধ্যা বিতর্কের পাশাপাশি, বিজেপি’র আরেকটি বিভাজক এজেন্ডা প্রয়োজন যা দিয়ে জাতিকে মাতিয়ে রাখা এবং নির্বাচনী অঙ্গনে ভোট ধরে রাখা যায় এবং অবৈধ অভিবাসী ইস্যু নিয়ে ধারণা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে যে, রোহিঙ্গা মুসলমান এবং অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমানদের উপস্থিতি ভারতের সুরক্ষার জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টিকে আরও খারাপ করার জন্য, রাজনৈতিক প্রচার ও গণমাধ্যমের সংবাদের মাধ্যমে সেই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। বিজেপি মনে করে, দেশের মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে সন্দেহ জাগানে ও সন্ত্রাস মুক্ত ভারতের ধারণার ভিত্তিতে ¯েøাগান দেয়ার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে অনুরণিত হবে এবং দলের পক্ষে নির্বাচনী লক্ষ্য পূরণ হবে।
অন্যদিকে, মুসলিম সম্প্রদায় এনআরসি-তে নাম অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ভয় ও গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। এমন একটি আশঙ্কা রয়েছে যে, সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীর অনেক দরিদ্র ও নিরক্ষর মুসলিম পরিবারের কাছে নাগরিকত্বের দাবি সমর্থন করার জন্য পর্যাপ্ত দলিলের সংস্থান নাও থাকতে পারে।
তদুপরি, দেশের গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাসরত লোকেরা এসব দলিল রক্ষণের বিষয়ে তেমন সচেতন নন, এবং অনেক মহিলারাই যারা বিয়ের পরে ভারতের এক অংশ থেকে অন্য অঞ্চলে স্থানান্তরিত হন, তাদের কোনও কোনও নথি নেই যা তাদের জন্ম ও জাতীয়তার কথা উল্লেখ করে। আসামে অনেক দরিদ্র মুসলিম মহিলাকে এনআরসি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল কারণ তাদের কাছে এই তথ্য সরবরাহকারী নথি নেই।
এই উদ্বেগ পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের মধ্যেও দৃশ্যমান এবং তারা সংশ্লিষ্ট সরকারী দফতর থেকে প্রশংসাপত্র সংগ্রহের চেষ্টায় দিন কাটাচ্ছে। নাগরিকত্ব হারানোর ভয়ে রাজ্য থেকে আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, এরআরসি’র ভয়ে ইতিমধ্যে ১১ জন আত্মহত্যা করেছেন। তবে ২০২০-সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় ক্ষমতা দখলের প্রয়াসে, বিজেপি এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রয়োগের ঘোষণা দিয়ে সমাজে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এনআরসি থেকে যারা বাদ পড়বেন, তাদেরকে রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করা হবে। যদিও এর অর্থ এই নয় যে তাদের দেশের বাইরে তড়িয়ে দেয়া হবে। বিকল্প যে ব্যবস্থা করা হতে পারে তা সম্ভবত আরও খারাপ। এনআরসি মহড়ার ফলস্বরূপ যারা রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করা হবে তাদের জন্য ভারত সরকার বিভিন্ন জায়গায় আটক কেন্দ্র তৈরি করছে। আসামে, বিদ্যমান তিনটি কেন্দ্র ছাড়াও আরও সাতটি আটক কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করা হলে, ব্যক্তি তার গণতন্ত্রে প্রদত্ত সমস্ত মৌলিক অধিকারও হারাবে এবং বঞ্চিত হবে। তবে এনআরসি ধিঠক তা-ই করছে - ভারতে মৌলিক অধিকার বিহীন একটি নতুন রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক শ্রেণির তৈরি করা হচ্ছে। এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল যোগ হলে, সেটি হবে নিশ্চিতভাবে মুসলমানদের মৌলিক অধিকারের উপর আক্রমণ, যা ধর্মনিরপেক্ষ দেশের চেতনার পরিপন্থী।
সবচেয়ে বড় কথা, এনআরসি এবং নতুন নাগরিকত্ব বিল কেবলমাত্র দ্বিজাতী তত্ত¡কে বৈধ করার চেষ্টা করছে যা ভারত সর্বদা প্রত্যাখ্যান করেছে। পার্টিশনের ক্ষত আবার জাগিয়ে তুলে ও মুসলিম নাগরিকদের এর লক্ষ্য হিসাবে চিহ্নিত করার ফলে ভারতীয় সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মানবাধিকারকর্মী হর্ষ ম্যান্ডার লিখেছেন যে, এনআরসি ‘দেশকে ছিন্ন করে ফেলা, দেশভাগের ক্ষতগুলিকে আবার খুলে দেয়া এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধানকে ধ্বংস করবে’।
মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি অংশ এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে বর্জনের প্রচার শুরু করেছে। মুসলমানরা যখন এটিকে প্রধান লক্ষ্য বলে মনে করছে, তবুও এনআরসি হ’ল ভারতের পরিচয় এবং তার ধর্মনিরপেক্ষ নৈতিকতার উপর আক্রমণকে রূপান্তরিত করার প্রয়াস এবং তাই সব অধিকার-চিন্তাশীল ভারতীয়দের উচিত এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া উচিত।
ভারত যদি তার ধর্মনিরপেক্ষ নীতিগুলির দিকে ফিরে আসে এবং নিজেকে হিন্দু জাতি হিসাবে ঘোষণা করে তবে এর প্রভাবটি এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে অনুভ‚ত হবে এবং কেবল দক্ষিণ ভারতে নয় প্রতিবেশী দেশগুলিতেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলবে এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ধর্মীয় উগ্রবাদকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আবু আব্দুল্লাহ ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:৪৪ এএম says : 0
হিন্দুরা যদি ইহা করে কামিয়াব হয় তা হলে আমরা মুসলিমরা বসে বসে আঙ্গুল চুচীবনা
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন