মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সাগরের গ্যাস পাচার

জাতীয় কমিটির ‘জাতীয় কনভেনশন ২০১৯’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

দেশের মানুষ তথা প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অডিটোরিয়ামে কমিটি আয়োজিত ‘জাতীয় কনভেনশন ২০১৯’ থেকে বক্তারা এ আহ্বান এ জানান। তারা বলেন, পিএসসি ২০১৯-এর নামে দেশের বঙ্গোসাগরের গ্যাস বিদেশিদের কাছে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই চেষ্টা রুখতে হবে। বিদেশেীদের ব্যবসা দেয়ার উদ্দেশ্যে নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এতে ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়। সেই দুর্নীতি ও অপকর্ম থেকে দলীয় সিন্ডিকেটকে বাঁচাতে সরকার যে ‘দায়মুক্তি আইন’ করেছে তা বাতিল করতে হবে। জাতীয় কনভেনশনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
দুই সেশনে এই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। সকালে বিস্তারিত আলোচনা এবং বিকেলে কর্মস‚চি ঘোষণা করা হয়। ‘সুন্দরবন ও উপক‚লবিনাশী কয়লা এবং দেশবিনাশী পারমাণবিক প্রকল্প বাতিল করো’ শীর্ষক এই কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন প্রকৌশলী শেখ মো. শহীদুল্লাহ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
বঙ্গোপসাগরের গ্যাস বিদেশে পাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে কনভেনশন থেকে সরকারের উদ্দেশে তুলে ধরা দাবিগুলো হলো এক. রামপালসহ সুন্দরবনবিনাশী সব প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। উপক‚লজুড়ে কয়লা বিদ্যুতের বদলে সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের বৃহৎ প্রকল্প তৈরি করে বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ কমাতে হবে। দুই. পিএসসি ২০১৯ বাতিল করে স্থল ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বাপেক্সে বিদেশি কোম্পানির সাব-কন্ট্রাক্টর না বানিয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক মানের সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গ্যাস সংযোগের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের লোভের বোঝা মেটাতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো চলবে না। তিন. অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করতে অবশ্যই দায়মুক্তি আইন বাতিল করতে হবে। চার. ফুলবাড়ি চুক্তির প‚র্ণ বাস্তবায়ন করে খুনি জালিয়াত এশিয়া এনার্জি (জিসিএম)-কে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে।ফুলবাড়ির নেতাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বড়পুকুরিয়ায় কয়লা চুরির বিচার করতে হবে। পাঁচ. ব্যয়বহুল, আমদানি ও ঋণনির্ভর, প্রাণ-প্রকৃতিবিনাশী পরিকল্পনা বাতিল করে সুলভ, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জাতীয় কমিটির বিকল্প খসড়া প্রস্তাবনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
শেখ শহীদুল্লাহ্ বলেন, আমাদের জাতীয় সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সুলভ, জনবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় দাবি অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করছি। দেশের স্বার্থরক্ষায় এই আন্দোলন আরও বেগবান করতে হবে। পুঁজিবাদ জনগণের এই স্বার্থকে গ্রাস করতে চাইছে। সবাই মিলে পুঁজিবাদের এই আগ্রাসী ভ‚মিকা রুখে দিতে হবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকারের কাছে জনগণের গুরুত্ব থাকলে উপক‚লে বিদ্যুৎকেন্দ্র করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাধা তৈরি করা হতো না। উপক‚লজুড়ে প্রায় ২২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে জলবায়ু মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে। জলবায়ু উদ্বাস্তুর পাশাপাশি আমাদের উন্নয়ন উদ্বাস্তুও তৈরি হবে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলে চলছে আরেক কান্ড। এশিয়া এনার্জি ফুলবাড়িয়ায় কয়লা তুলতে চাইছে। চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করছে। তারা নানা রকম প্রপাগান্ডা করছে। কিন্তু সরকার বাধা দিচ্ছে। তাদের এসব কাজ বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ফুলবাড়িয়া ছাড়াও উত্তরাঞ্চলে হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই কেন্দ্রের জন্য কোনও রকম জনসম্মতি নেওয়া হয়নি। নেই কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এমনকি কেউ যেন প্রতিবাদ করতে না পারে, সেজন্য ভয় দেখানো হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানা কথা বোঝানো হচ্ছে। এই অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, পিএসসি ২০১৯-এর নামে দেশের সাগরের গ্যাস বিদেশিদের কাছে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা বিকল্প মহাপরিকল্পনা করেছি। সে পরিকল্পনায় দেশের ক্ষতি না করে বিদ্যুতের চাহিদা প‚রণ করা সম্ভব। দেশের মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা প‚রণ নয়, বিদেশিদের ব্যবসা দেওয়াই সরকারের ম‚ল উদ্দেশ্য।
ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের পরিবেশ ধ্বংসের বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের সবাইকে মিলে সেই ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। সুন্দরবন আর আমাজন একই স‚ত্রে বাঁধা। আমাজন আগুনে জ্বলছে আর সুন্দরবন ধ্বংসের চেষ্টা চলছে। উন্নয়নের নামে দেশে যে বিনিয়োগ হচ্ছে, তা পুঁজিবাদী বিনিয়োগ। পুঁজিবাদী বিনিয়োগই সব দুর্গতির জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীরা বলছেন ১০-১২ বছরের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে, যা পৃথিবীর জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমাতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। প্রকৃতিকে উত্ত্যক্ত করার কারণে প্রকৃতিও এখন প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে। তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘তিন ভাগ গ্রাসে আছো, এক ভাগ বাকি। সেই একভাগও সমুদ্র গ্রাস করতে চাইছে।’ তিনি আরও বলেন, এই অনিয়ম অন্যায় রুখতে হলে পুঁজিবাদকে বিদায় করে সামাজিক বিপ্লব ঘটাতে হবে।
সুলতানা কামাল বলেন, দেশের প্রকৃতি ও প্রাণ বিপর্যয়ের মধ্যে চলে গেছে। আমরা মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশ স্বাধীন করেছি, তা শুধু ভূখন্ড অর্জনের জন্য ছিল না। আমাদের কিছু নৈতিক লক্ষ্য ছিল। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। আমাদের সরকার এখন নারীবান্ধব ও জনবান্ধবের চেয়ে ব্যবসাবান্ধব হয়েছে। তারা সবকিছু করছে ব্যবসার জন্য। সুন্দরবনকে আমাদের জাতীয়ভাবে বাঁচাতে হবে। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Muhammad Al Imran ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৭ এএম says : 0
একদিকে সুন্দরবন ধ্বংস হচ্ছে অন্য দিকে সুন্দরবন ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে।
Total Reply(0)
Shake Rashal Job ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 1
যারা রামপালের বিরোধী। তারা আগে তাদের নিজ গৃহের বিদুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে।প্রতিবাদ করুন।দেখি আপনাদের ঘরে আপনাদের জায়গা হয় কিনা।।।
Total Reply(0)
সত্য বলবো ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানোয় ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রামপালে কয়লাভিত্তিক ও রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ থেকে সরকার বহু আগেই সরে আসত
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
দেশে সংকট রেখে গ্যাস রপ্তানি জাতীয় স্বার্থবিরোধী
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
Total Reply(0)
Bivash ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:২২ এএম says : 0
বিদু্্যত ঘরে ঘরে প্রয়োজন
Total Reply(0)
jack ali ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:৫৪ এএম says : 0
This government don't care about our country----they are enemy of our Beloved Country-----
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন