বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

পেঁয়াজে সুখবর নেই মনিটরিং কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ : ক্যাব

শীতের সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম চড়া

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

পেঁয়াজের বাজারে এখনো সুখবর নেই। পেঁয়াজ নিয়ে এতো হৈচৈ, কার্গো বিমান ও সমুদ্রপথে আমদানি, সরকারের নানান উদ্যোগ, সারাদেশে টিসিবি’র বিক্রি, নতুন পেঁয়াজ উঠার পরও পেঁয়াজের প্রত্যাশিত দাম কমেনি। গতকালও কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে এখনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২২০ থেকে কেজি ২৩০ টাকা। তবে কিছুটা কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে এলাকা ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। শুক্রবার কাচা বাজারেও শীতাকলীন সবজির দাম চড়া। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বাড়তি।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাইলে অর্থাৎ পাইকারিতে ১০০ টাকার নিচে বিক্রি নিশ্চিত করতে চাইলে প্রতিদিন ৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের সরবরাহ প্রয়োজন। প্রতিদিন যদি অন্তত এক থেকে দেড় হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাজারে ঢোকে, তাহলেও ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব হবে। স্বাভাবিক সময়ের মতো ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হলে এখনো ‘ভারত ছাড়া গতি নেই’। মিশর-তুরস্ক কিংবা আরব আমিরাত থেকে জাহাজে করে পেঁয়াজ এনে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রির সুযোগ নেই। ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে সড়কপথে যতদিন পর্যন্ত কম খরচে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে না, ততদিন দাম আগের অবস্থায় ফিরবে না। ব্যবসায়ীরা বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারতের মহারাষ্ট্রে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তখন ভারত রফতানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। এ জন্য আরও অন্তত তিন মাস পেঁয়াজের বাজার নিয়ে কোনো সুখবর নেই।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকারের বাজার মনিটরিং কার্যক্রম এখন পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা থাকলেও সেগুলো তেমনভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন না করায় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর চারটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে অধিক দামের কারণে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কম। ক্রেতারা পেঁয়াজ না কিনে পেঁয়াজের কালি (পেঁয়াজ পাতা) কিনছেন। শনির আখড়া বাজারে প্রশ্ন করতেই এক আইনজীবী বিরক্তির ভাব নিয়ে বলেন, আর লিখে কি হবে? বলতে পারেন ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো’র চেষ্টা করছি। দেশি পেঁয়াজ কি আমাদের সামর্থের মধ্যে আছে? তাই পেঁয়াজ পাতাই কিনছি। পাতার সঙ্গে পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে। যাত্রাবাড়ি বাজারেও দেখা গেল ক্রেতারা পেঁয়াজের চেয়ে পাতাসহ পেঁয়াজ কিনছেন বেশি।
যাত্রবাড়ি থেকে মগবাজার কাঁচা বাজার, সেখান থেকে পলাশি, নিউমার্কেট ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেলো পেঁয়াজের কালি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮০ টাকায়। তবে কারওয়ান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ক্রেতাদের কাছে পেঁয়াজের চেয়ে পেঁয়াজ পাতার কদরই এখন সবচেয়ে বেশি। কারণ পেঁয়াজ পাতার সঙ্গে মিলছে পেঁয়াজও। কারওয়ান বাজারে গৃহীনি সালেহা বেগম বলেন, কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা তিন কেজির কমে পেঁয়াজ বিক্রি করতে চাইছেন না। এত দাম দিয়ে কেনা সম্ভব না। আবার খুচরা বাজারেও কেজি প্রতি ২০ টাকা বেশি দাম রাখছে।
যাত্রাবড়ি বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায় এখনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। তবে কিছুটা কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম আগের মতই ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মিশরের ও চায়না পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুচরা বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের কারনে দামের ওপরে তেমন প্রভাব পরেনি। রাজধানীর খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীরা ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি করছে দেশি পেঁয়াজ।
এদিকে শীতকালীন সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজার চড়া। কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল ভোক্তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চাল, ডাল, তেল, চিনি আদা, রসুন, শুকনা মরিচ, আটা-ময়দা থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামই বাড়তি।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া, ধোলাইপাড়, ফকিরেরপুল, কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ঘুরে ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা, যা দাম বৃদ্ধির আগে বিক্রি হয়েছিল ৪২-৪৪ টাকা কেজি। নাজিরশাল বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকায়, যা আগে ৪৪-৪৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪০ টাকায়, যা দাম বাড়ার আগে বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৫ টাকা কেজি। স্বর্ণা চাল বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়, যা আগে প্রতিকেজি বিক্রি হতো ৩২-৩৩ টাকা। খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়, যা দাম এক মাস আগে ছিল ৭৮-৮০ টাকা। পাম অয়েল লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি বলছে, এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পাম অয়েল ৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির তথ্যমতে- বাজারে গত এক মাসে মোটা চাল ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। আর সরু চাল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।
শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারগুলোতে এলাকাভেদে প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকায়। করলা প্রতিকেজি ১২০ টাকা, আধাপাকা টমেটোর কেজি ১২০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৮০ টাকা, শিম ৫০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৩০-৬০ টাকা, লাউয়ের পিস ৬০-৮০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ৬০ টাকা কেজি, কচুর লতি ৬০ টাকা ও ধুন্দল ৬০ টাকা, পাতাকপি ৪০-৬০ টাকা, পুরাতন আলু ৩০ টাকা, নতুন আলুর কেজি ৬০-১০০ টাকা, ধনেপাতা ৮০-২০০ টাকা, মুলার কেজি ৪০-৬০ টাকা, গাজর ৬০-১০০ টাকা, শালগম ৫০-৮০ টাকা, সবুজ বরবটি ৬০ টাকা, লাল বরবটি ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ি বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. সোলায়মান আলম বলেন, বাজারে প্রত্যেকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনো কিছুতেই হাত দেয়া যাচ্ছে না। এমনভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে পারছে না সরকার। বাজার মনিটরিংও চোখে পড়ছে না। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন