শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গণপরিবহন সঙ্কটে দুর্ভোগ

চট্টগ্রামে নতুন আইন আতঙ্কে হাওয়া বাস-মিনিবাস

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের ভিড়। বাস-মিনিবাস আসতেই তাতে উঠার চেষ্টায় ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি। বাসের ভেতরে ভিড়ে দম বন্ধ পরিবেশ, দরজায় ঝুলে ভ্রমণ করতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। বন্দরনগরীর গণপরিবহনের এমন চিত্র এখন নিত্যদিনের। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের পর থেকে নগরীতে গণপরিবহনের তীব্র সঙ্কট চলছে।
পুলিশের তল্লাশির ভয়ে দিনের বেলায় রাস্তায় নামছে না বেশিরভাগ বাস-মিনিবাস। সড়কের কোথাও বাস দাড় করিয়ে কাগজপত্র দেখা হচ্ছে এমন খবর পাওয়ার সাথে সাথেই রাস্তা থেকে সরে যায় বাস-মিনিবাস। এমনিতেই ৬০ লাখ জনসংখ্যার এ মহানগরীতে গণপরিবহনের সংখ্যা অপ্রতুল। তার উপর নতুন আইনে মামলা আতঙ্কে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের লুকোচুরি সঙ্কটকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
এ সুযোগে অটোরিকশা, রিকশা এবং অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনগুলোও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্বল্প আয়ের শ্রমিকেরা। আয়ের বিরাট অঙ্ক ব্যয় হচ্ছে পরিবহন ভাড়ায়। গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সকাল থেকেই নগরীতে ছিল গণপরিবহন সঙ্কট। নগরীর কয়েকটি এলাকায় পুলিশ যানবাহনের বিশেষ করে বাস-মিনিবাসের কাগজপত্র তল্লাশি করছে এমন খবরে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা কমে যায়। নগরীর ১২টি রুটে বাস-মিনিবাস চলেছে হাতেগোনা। এতে করে যাত্রীদের চরম বিপাকে পড়তে হয়।
দুপুরে নগরীর কাটগড়, সিমেন্ট ক্রসিং, হাসপাতাল গেইট, ইপিজেড মোড়, কাস্টম হাউস মোড়, বারিক বিল্ডিং, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, লালখান বাজার-ইস্পাহানি মোড়, ওয়াসা ও কাজির দেউড়ি মোড় ঘুরে দেখা গেছে গণপরিবহনের অপেক্ষায় মানুষের ভিড়। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস-মিনিবাস মিলছে না। কিছু বাস-মিনিবাস চলাচল করলেও সেগুলো ছিল যাত্রীর ভিড়ে ঠাসা। নতুন করে যাত্রীর উঠার সুযোগই ছিল না। এতে করে যাত্রীদের বিভিন্ন মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে বাস না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। নারী এবং শিশু ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেশি দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়। সময়মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলে পৌঁছতে বেগ পেতে হচ্ছে। যাত্রীরা জানান, নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই নগরীতে গণপরিবহন সঙ্কট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে সকালে এবং বিকেলে রাস্তায় পরিবহনের সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। বাস-মিনিবাসের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন রুটে টেম্পু ও হিউম্যান হলারের সংখ্যাও কমে গেছে। এ সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে রিকশা ও অটোরিকশা চালকেরা। অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনের বেশিরভাগই অ্যাপসের বদলে বেশি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে।
নতুন আইনে বিভিন্ন অপরাধে সাজা এবং জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নগরীতে চলাচলকারী বেশিরভাগ গণপরিবহনের ফিটনেস নেই। চালকদের নেই লাইসেন্স। আর এ কারণে এসব গণপরিবহন রাস্তায় নামছে না বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা। একই চিত্র মহানগরী থেকে জেলার বিভিন্ন রুটেও। পুলিশি অভিযানের ভয়ে অধিকাঙ্ক যানবাহন রাস্তায় চলাচল করছে না। এতে করে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
তবে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে রয়েসয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশকে অযথা কাউকে হয়রানি না করতে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করছে। রাস্তায় গণপরিবহন সঙ্কট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেসব বাস-মিনিবাসের কাগজপত্রে সমস্যা আছে তারা হয়ত রাস্তায় নামার সাহস করছে না। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
ট্রাফিক বিভাগ উত্তরের অতিরিক্ত এডিসি ওয়াহিদুল হক বলেন, নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে মামলা হয়েছে হাতেগোনা। যেসব যানবাহনের ফিটনেস নেই কিংবা চালকের লাইসেন্স নেই তারা রাস্তায় নামতে সাহস পাচ্ছে না। এ কারণে রাস্তায় কিছুটা পরিবহন সঙ্কট রয়েছে। তবে অনেক গণপরিবহনে কাগজপত্র হালনাগাদ করা হয়েছে। যাদের কাগজপত্রে সমস্যা নেই তারা রাস্তায় যানবাহন বের করছেন। এদিকে বিআরটিএ কার্যালয়ে ভিড় বেড়েই চলেছে। গাড়ির ফিটনেসসহ যাবতীয় কাগজপত্র হালনাগাদ করতে প্রতিদিনই সেখানে লাইন ধরছেন গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা। অতিরিক্ত কাজের চাপ সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা বিআরটি কর্মকর্তাদের।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম নগরীর জনসংখ্যা দ্রæত বাড়ছে। দেশের সর্ববৃহৎ ইপিজেড এ নগরীতে। দুইটি ইপিজেডে প্রায় চার লাখের মত শ্রমিক রয়েছে। শিল্পাঞ্চল এবং তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে কর্মজীবীদের প্রায় সবাই গণপরিবহনের উপর নির্ভরশীল। সে অনুযায়ী নগরীতে পর্যাপ্ত গণপরিবহন নেই।
নগরীর ১২টি রুটে বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ৮৭৯টি। তবে বাস্তবে রাস্তায় চলাচল করছে আরও কম গণপরিবহন। গণপরিবহনের একটি অঙ্ক সকালে এবং বিকেলে ইপিজেডসহ বিভিন্ন কল-কারখানার শ্রমিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আনা-নেয়ার কাজে রিজার্ভ ভাড়ায় চলে যায়। এতে সঙ্কট আরও তীব্র হচ্ছে। গণপরিবহন সঙ্কটকে পুঁজি করে চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। অফিস শুরু এবং ছুটির পর কোন কোন রুটে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন