শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মানবাধিকার দিবসে বিএনপিকে শোভাযাত্রা করতে দেয়নি পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে পূর্বঘোষিত শোভাযাত্রা করতে পারেনি বিএনপি। প্রস্তুতি গ্রহণ করার পরও পুলিশের বাধায় শোভাযাত্রা পন্ড হয়ে যায় রাজপথের বিরোধীদলটির। গতকাল মঙ্গলবার শোভাযাত্রায় অংশ নিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই নয়াপল্টনের কার্যালয়ে জড়ো হলেও পুলিশের বাধার কারণে রাস্তায় নামতে পারেননি। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে থেকে সকাল সোয়া ১০টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল শোভাযাত্রা। এর আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি মহাসচিব কার্যালয়ে আসেন। শোভাযাত্রা তারই উদ্বোধন করার কথা ছিল।

পুলিশের এই অবস্থানের মধ্যে দলের নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের ভেতর ঢুকে যান। পুলিশের পক্ষ থেকে গেইটের কাছ দাঁড়িয়ে থাকা নেতাকর্মীদের বলে দেওয়া হয়, কেউ প্রধান ফটকের বাইরে আসতে পারবে না। শোভাযাত্রায় পুলিশ বাধা দেয়ায় সকাল ১০টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি পুলিশের বাধার সমালোচনা করে বলেন, আমরা এই মুহূর্তে কোনো কনফনট্রেশনে যেতে চাই না, সংঘাতে জড়াতে চাই না। আজকের দিনটি ছিল দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে সারা বিশ্বের একটি ইস্যু, যে ইস্যুটা হচ্ছে-মানবাধিকার। সেই মানবাধিকারকে রক্ষার জন্য, সোচ্চার হওয়ার জন্যে দিনটি সারা পৃথিবীজুড়ে পালন করা হয়। আজকে আমাদেরকে পুলিশ সেই র‌্যালি করতে না দেয়ায়, আমাদের অধিকারগুলোকে বলতে না দেয়ায় আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি, আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি, নিন্দা জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, কী রকম একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে রেখেছে পুলিশ আমাদের অফিসের সামনে। এই অফিসের সামনে থেকে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসটি পালন করার জন্যে আমরা একটা র‌্যালি করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। আমাদেরকে সরাসরি বলা হয়েছে যে, ‘নিচে নামলেই আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব’।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, সরকারের এখনো বোধদয় হওয়া উচিত- জনগণের অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। একটা কথা তাদের মনে রাখা উচিত, কখনো সব দ্বার বন্ধ করে দিয়ে, সব দরজাগুলো বন্ধ করে দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান করা যাবে না। অবশ্যই সমস্যার সমাধান করতে হলে আজকে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের মুক্ত করতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে এবং জনগনণকে রাজনৈতিক চর্চা, ভিন্নমত পোষণ করার যে অধিকার, সেই অধিকার দিতে হবে। অন্যত্থায় তারা (সরকার) একনায়কোতন্ত্রের মধ্য দিয়ে, স্বৈরাচারের মধ্য দিয়ে দেশ শাসন করতে পারবে না। এদেশের মানুষ কোনোদিন তা মেনে নেয়নি, এখনো মেনে নেবে না।

খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ‘অন্যায়ভাবে ও অমানবিকভাবে’ কারাবন্দি করে তাকে প্রাপ্য জামিনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাঁর (খালেদা জিয়া) প্রাপ্য জামিনটুকুও দেয়া হচ্ছে না, তার চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এটা সম্পূর্ণভাবে হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন (মানবাধিকার লঙ্ঘন) করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশে প্রতি মুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী গত ১০ বছরে প্রায় ১ হাজার ৫৯৯ জন মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে, যেটাকে তারা নাম দিয়েছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। আমাদের হিসাব মতে এটা প্রায় দুই হাজারের উপরে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের হিসাব মতে, সারা বাংলাদেশে আজকে শুধু রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকার কারণে ৩৫ লাখ লোককে আসামি করা হয়েছে, এক লাখের বেশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। গুম- যেটা একেবারে মানবতাবিরোধী একটা অপরাধ, সেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে প্রায় হাজারের মতো। আমাদের দলের শুধু নয়, বাইরেও অনেক মানুষও একইভাবে নিখোঁজ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আজকে সমগ্র বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বড় একটা সমস্যা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে ভিন্নমত যিনিই পোষণ করবেন তারই অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হয়, গ্রেপ্তার করা হয়, ভয় দেখানো হয়, হুমকি দেয়া হয়, না হলে তাকে গুম করে ফেলা হয়। এই ধরনের বিষয়গুলো অহরহ ঘটছে। আমরা জানি যে, আমাদের বেশ কিছু আইনজীবী, আমাদের ছাত্র নেতা, আমাদের শ্রমিক নেতা, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক অনেকেই নিগৃহীত হয়েছেন, হত্যা হয়েছেন, নিহত হয়েছে, গুম হয়ে গেছেন।এরকম পরিস্থিতি আমরা অতীতে কখনো লক্ষ্য করিনি। এই ১০ বছরে এনফোর্স ডিজএপ্রিয়ারেন্স আমরা অতীতে কখনো দেখিনি।

ফখরুল বলেন, মানবাধিকার রক্ষা করবার জন্যে সব সংস্থাগুলো সোচ্চার হয়ে কথা বলছে। বিশ্বের জাতিসংঘের যে কমিশন আছে, সেই কমিশন বাংলাদেশকে চার বছর পর পর ডাকা হয়েছে। সেই চার বছর পর দেখা গেলো- তারা (বাংলাদেশ) যে কমিটমেন্টগুলো করে এসেছিলো তার একটাও তারা পূরণ করতে পারেনি। গতবার তাদেরকে রীতিমতো তিরস্কার করা হয়েছে যে, তোমরা যে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন করছো তা দেখাতে পারছো না। বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের এই সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্যে তারা সবরকমের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রক্রিয়াগুলো করছে। আপনারা দেখবেন, যারা গামেন্টর্সে কাজ করেন তাদের মানবাধিকার সংরক্ষিত হচ্ছে না, যারা বিদেশে মহিলা কর্মী কাজ করছেন তাদের প্রতিমুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ প্রমূখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ahammad ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:০৬ এএম says : 0
জনাব,আপনারা হাতে চুড়ি পরে কেন্দ্রীয় কার্য্যালয়ে বসে থাকুন!কোন সৈরাচার সরকার তার বিরুদ্বে আন্দোলন করার জন্য বিরুধীদলকে সেচ্ছায় আন্দোলন করার সুযোগ দিয়েছিল কি ??দয়াকরে আপনারা জনগনকে আর বেয়াকুপ বানানোর ব্যার্থ চেষ্টা করবেন না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন