শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শাহজালালের উন্নয়নে আরো ৭৭৮৯ কোটি টাকা

একনেকে ৭ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয়েছিল আগেই। এবার এই চলমান প্রকল্পে নকসা ও অন্যান্য কম্পোনেন্ট যুক্ত করে আরও ৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, টানেলযুক্ত মাল্টি লেভেল কার পার্কিং, নতুন কার্গো কমপ্লেক্স, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স ও রেসকিউ অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং সুবিধা বাড়ানো হবে। এতে বছরে ২ কোটি যাত্রী সেবা দিতে পারবে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। যা বর্তমান সক্ষমতার চেয়ে ৮০ লাখ বেশি।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ প্রকল্পের ১ম সংশোধনী অনুমোদন পায়। এর বাইরে আরও ৬টি প্রকল্প অনুরমোদন দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের সভার বিস্তারিত ব্রিফ করেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, শাহজালাল বিমান বন্দর স¤প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমে এই প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা ঋণ হিসাবে দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে। এখন প্রকল্প সংশোধন করে এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা, মূল প্রকল্প বরাদ্দে চেয়ে ৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা বেশী। ২০২২ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ করার উদ্যোগ ছিল। সংশোধনীর ফলে ৩ বছর মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্পের নতুন নতুন কাজ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের বিমানবন্দরের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই জন্য যাত্রী সক্ষমতা বাড়াতে হচ্ছে। বিমান পরিবহনের ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণ ও আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই অবকাঠামোগত সুবিধার উন্নয়নে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যমান অবকাঠামোতে বছরে ৮০ লাখ (৮ মিলিয়ন) যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। প্রতি বছরই এ সংখ্যা গড়ে ৫ লাখ হারে বাড়ছে। একইভাবে বছরে অভ্যন্তরীণ রুটে ৬ লাখের মতো যাত্রী ব্যবহার করছে বিমান বন্দরটি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় প্রথমে ২ লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে নির্মিত হবে তিনতলা বিশিষ্ট প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল-থ্রি নির্মাণ করার কথা ছিল। এখন এই কাজের পরিধি বেড়ে ৪ হাজার বর্গমিটার হয়েছে। প্রায় ৬২ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে টানেলযুক্ত মাল্টি লেভেল কার পার্কিং, চার লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জুড়ে থাকবে পার্কিং অ্যাপ্রোন। প্রকল্পের নকশাও পরিবর্তন করা হয়েছে। বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালের সুবিধা সংযুক্তিসহ মূল টার্মিনাল ভবন-৩ এবং কার্গো কমপ্লেক্সের কাজের পরিধি পরিবর্তন করা হয়েছে। উন্নত ভবন ব্যবস্থাপনা সিস্টেম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। পৃথক পৃথক আমদানি-রফতানি ভবন নির্মাণ করা হবে। পৃথক ভিআইপি ভবন বাতিল করে একই ভবনের নীচে এটা নির্মিত হবে। ঠিকাদারের মাধ্যমে মূল ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। কাজের পরিধি পরিবর্তন এবং পরামর্শক সেবার মেয়াদ ৩৬ মাস থেকে বেড়ে ৪৮ মাস করা হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে।

প্রতিবছর বর্তমানে বিমান বন্দরে কার্গো পরিবহন ফ্যাসিলিটি দুই লাখ টন। কিন্তু কার্গো পরিবহন করা হচ্ছে ২ দশমিক ৫৯ লাখ টন। এই লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় কার্গো পরিবহন সুবিধাও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪১ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বানানো হবে নতুন কার্গো কমপ্লেক্স। এছাড়া ৫ হাজার ৯০ বর্গমিটার জুড়ে ভিভিআইপি কমপ্লেক্স ও ১ হাজার ৮২০ বর্গমিটার জুড়ে থাকবে রেসকিউ অ্যান্ট ফায়ার ফাইটিং সুবিধা। প্রায় ৬৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে থাকবে ট্যাক্সিওয়ে। একই সঙ্গে প্রায় ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জুড়ে থাকবে আরও একটি ট্যাক্সিওয়ে। জরুরি মুহুর্তে বের হয়ে আসার দুটি পথ থাকবে। জলাধার ও পানি সরবরাহের নতুন ব্যবস্থা থাকবে প্রকল্পের আওতায়। বর্তমানে দৈনিক সরকারি-বেসরকারি, সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৩৫-২৪০টি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। সামনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। আর সে বিবেচনা থেকেই নতুন এই প্রকল্পের আওতায় সব ধরণের অবকাঠামোগত বড় বড় পরিবর্তন আসছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে।

একই সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারী কমপ্লেক্স নির্মাণ (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এই প্রকল্প চলছে গত ১৫ বছর থেকে। যা দ্রæত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন থোক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এ প্রকল্প বিষয়ে বলেন, ২০০৭ সালের জুলাইয়ে নেয়া প্রকল্পের কোন অগ্রগতি হয়নি। এবার ব্যয় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এতে মোট প্রকল্প ব্যয় দাড়ালো ৭৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তবে এবার প্রকল্পের কাজ দ্রæত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা

পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, এর বাইরে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে আরও ৪টি প্রকল্প অনুমোদ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলার রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণে ২৬৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নেয়া হাতে নেয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চলতি বছর থেকে জুন ২০২২ নাগাদ এর বাস্তবায়ন করবে।
ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের হাসাড়া পর্যন্ত জেলা মহাসড়ক যথাযথমানে উন্নিত ও প্রশস্ত করতে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চলতি বছর থেকে ডিসেম্বর ২০২২ নাগাদ এটির বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৪০৯ কোটি টাকা।

দেশের দক্ষিনাঞ্চলের ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী-দাশুরিয়া জাতীয় মহাসড়কের কুষ্টিয়া শহরাংশ ৪- লেনে উন্নীতকরণসহ অবশিষ্টাংশ যথাযথ মানে উন্নীতকরণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চলতি বছর থেকে জুন ২০২২ সাল নাগাদ বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৭৪ কোটি টাকা।
এছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী-কাশিপুর-ফুলবাড়ী-কুলাঘাট-লালমনিরহাট জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন করবে। চলতি বছর থেকে জুন ২০২১ সাল নাগাদ এর কাজ শেষ হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকা, মাদারীপুর ও রংপুর জেলার ৩টি কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে চায়। এ জন্য ৮৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। চলতি বছর থেকে জুন ২০২২ সাল নাগাদ এর কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন