বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত

এইচ এম গোলাম কিবরিয়া (রাকিব) | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৩৬ পিএম

॥ শেষ ॥

যাতে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব নিজেই জীবিকা অর্জনে ব্রতী হয়। রাসুল সা. নিজের পরিশ্রম লব্দ উপার্জনকে সর্বোত্তম উপার্জন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তবে নিশ্চয় উপার্জনের পন্থা শরিয়াত নির্ধারিত পন্থায় হতে হবে। এমন উপার্জনকে ইসলাম অবৈধ ঘোষণা করেছে, যাতে প্রতারণা, মিথ্যা, ধোঁকাবাজি, জনসাধারণের অকল্যাণ সর্বোপরি জুলুম রয়েছে। দুনিয়ার জীবনে রযেছে এর জন্য জবাবদিহি ও সুবিচার। সে জন্য ইসলাম হালাল উপার্জনের অপরিসীম গুরুত্ব প্রদান করেছে। হালাল বলতে আমরা সাধারণত যাবতয বৈধ পন্থাকেই বুঝি। যা কল্যাণকর ও হিতকর এবং যাবতীয় অবৈধ ও অকল্যাণকর হতে মুক্ত। ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ মানব জাতিকে উপার্জনের জন্য উৎসাহ দিয়েইে ক্ষান্ত হন নি; বরং যাবতীয় বৈধ ও অবৈধ পন্থাও বাতলে দিয়েছেন। অতএব হালাল উপার্জন বলতে বোঝায় উপার্জনের ক্ষেত্রে বৈধ ও শরিয়ত সম্মত পন্থা অবলম্বন।
হালাল উপায়ে জীবিকা উপার্জনের ফলে সমাজ ব্যবস্থায় ধনী দরিদ্রের মাঝে সুষম ভারসাম্য ফিরে আসে; কৃষক দিন মজুর, ক্রেতা-বিক্রেতা, শ্রমিক-মালিক এবং অধস্তনদের সাথে ঊর্ধ্বতনদের সুদৃঢ় ও সঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে সকল শ্রেণির নাগরিকই তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায় এবং সমাজ সংসারে নেমে আসে শান্তির সুবাতাস।
মূলত ইসলমা যে পেশাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে সেসব পন্থায় উপার্জন ব্যতীত অন্যান্য পন্থায় উপার্জন করা বৈধ বলে বিবেচিত। ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম কয়েকটি পেশা হলো- অপ্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তি, বেশ্যাবৃত্তি, নৃত্য শিল্প, অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন, মুর্তি, অবৈধ পানীয়, ভাষ্কর্য ও প্রতিকৃতি নির্মাণ শিল্প, সুদি কারবার, ওজনে কম দেয়া, ধোঁকা ও প্রতারণামূলক ব্যবসা, মিথ্যার আশ্রয় নেয়া, ও চাকরি হতে অবৈধ উপার্জন যথা ঘুষ গ্রহন। ইত্যাদি। ইসলাম প্রদত্ত সীমারেখা ও মূলনীতি ঠিক রেখে বৈধ যে কোনো পণ্যের ব্যবসা করার মাধ্যমে উপার্জনকে ইসলামি শরিয়ত হালাল আখ্যা দিয়েছে। এ ছাড়া যদি কেউ বৈধ উপায়ে যোগ্যতানুযায়ী চাকরি কের এবঙ ঘুষসহ যাবতীয় অবৈধ লেন-দেন ও অসৎ মানসিকতা থেকে দূরে থাকে তবে সেটাও জীবিকার্জনের হালাল পন্থা হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
মহান আল্লাহ মানুষকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এটি শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা, জাকাত প্রভৃতির উপরই সীমাবদ্ধ নয়। জীবন ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ রূপ রেখার প্রণেতা হিসেবে ইসলামে রয়েছে জীবনধারণের যাবতীয বিষয় সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে হালাল উপায়ে উপার্জনের ব্যবস্থা গ্রহণও অন্যতম একটি মৌলিক ইবাদত। শুধু তাই নয়, ইসলাম এটিকে অত্যাবশ্যক বা ফরজ কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ মর্মে রাসুল সা. এর একটি হাদিস প্রণীধানযোগ্য। তিনি বলেন- ‘ফরজ আদায়ের পর হালাল পন্থায় উপার্জনও ফরজ। [সুনানে বায়হাকি, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-১২৮]
উপযুক্ত হাদিসের মাধ্যমে প্রতিভাত হয় যে, ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব কতোখানি এবং কোনো ব্যক্তি যেনো হারাম কোনো পেশা অবলম্বন না করে উপরোক্ত হাদিসে সে মর্মেও অন্তর্নিহীত নির্দেশ রয়েছে। পরকালীন জীবনে এ ফরজ ইবাদতটি সম্পর্কে যে মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা যাবতীয় ফরজ সম্পর্কে বান্দা জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব এটি ফরজ কাজসমূহের অন্তর্গত এক মৌলিক অত্যাশ্যকীয় ইবাদতে গণ্য হয়েছে।
বৈধ ও হালাল উপার্জনের উপর নির্ভর করা এবং অবৈধ ও হারাম উপার্জন বর্জন করা ইসলামি শরিয়ত্যের অন্যতম ফরজ ইবাদত। শুধু তাই নয়, এর উপর নির্ভর করে মুমিনের আরো অনেক ফরজ ও নফল ইবাদত আল্লাহর নিকট কবুল হওয়ার বা না হওয়া। বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন না হওয়ার কারণে অনেক মুসলিম এ বিষয়ে মারাত্মক বিভ্রান্তিতে নিপতিত। অনেক ধার্মিক মানুষ রয়েছেন যারা সুন্নাত, মুস্তাহাব ইত্যাদির বিষয়ে অনেক সচেতন হলেও হারাম উপার্জনের বিষয়ে মোটেও সচেতন নন।
কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে এটি বক-ধার্মিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ বলেন- ‘হে রাসুলগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর। তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবহিত।’
এখানে দেখা যাচ্ছে, পবিত্র বস্তু হতে আহার করা সৎকর্ম করার পূর্ব শর্ত। বৈধ ও অবৈধের দু’টি প্রকার রয়েছে। এক প্রকার খাদ্য স্থায়ীভাবে অবৈধ। যেমন শুকরের মাংস, মদ প্রবাহিত রক্ত, মৃত জীবের মাংস ইত্যাদি। এই প্রকারের অবৈধ খাদ্য বাধ্য হলে ভক্ষণ করা যাবে বলে কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রকারের অবৈধ খাদ্য উপার্জন সংক্রান্ত। সুদ, জুয়া, ঘুষ, ডাকাতি, জুলুম, যৌতুক, অবৈধ মজুদদারি, অবৈধ ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ওজনে-পরিমাপে কম দেয়া, ভেজাল দেয়া, প্রতারণা বা মিথ্যার মাধ্যমে ক্রয় বিক্রয় করা, চাকরিতে চুক্তিমত দায়িত্ব পালন না করে বেতন নেয়া, সরকারের বা জনগণের সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ করা ইত্যাদি এ জাতীয় অবৈধ খাদ্য কোনো কারণে বা প্রয়োজনে বৈধ হবে বলে বলা হয় নি।
অবৈধ উপার্জন থেকে আত্মরক্ষার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপেরের অর্থ- সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ কর না এবং মানুষের ধন সম্পদ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করার জন্য তা বিচারকগণের নিকট পেশ কর না।’
কুরআন ও হাদিসে বিশেষ কয়েক প্রকার অবৈধ উপার্জনের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। যেমন উপরের একটি আয়াতে বৈধ ব্যবসায়িক লেনদেন ছাড়া অন্যের সম্পদ গ্রহণ নিষেধ করা হয়েছে। যৌতুকও এক প্রকারের চাঁদাবাজি এবং তা সন্ত্রাসকর্মের মতো অন্যের সম্পদ জোর করে বা চাপ দিয়ে গ্রহন করা। বিবাহের ইসলাম সম্মত লেনদেন হলো কনে বা কনেপক্ষ পাত্র বা পাত্রপক্ষকে কিছুই দেবেন না। শুধুমাত্র কনেই পাত্রের ঘরে আসবে। আর পাত্র পক্ষ কনেকে মোহরানা প্রদান করবেন। বিবাহ উপলক্ষে ওলিমবার দায়িত্ব পাত্রের। এর বাইরে কোনো প্রকারে দাবি দাওয়া অবৈধ। এমনকি কনের তার ইচ্ছা ও আগ্রহের অতিরিক্ত বরযাত্রীর মেহমানদারি করতে তাকে বাধ্য করাও বৈধ নয়। আল্লাহ আমাদেরকে হারাম থেকে রক্ষা করুন। অবৈধ উপার্জনের অন্যতম পদ্ধতি ঘুষ। যে ব্যক্তি কোনো কর্মের জন্য বেতন, সম্মানী বা ভাতা গ্রহণ করেন, সেই কাজের জন্য ‘সেবা গ্রহনকারী’ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা অন্য কারো থেকে কোনো প্রকার হাদিয়া, বখশিশ বা বদলা নেয়াই ঘুষ। এ ছাড়া নেতা, কর্মকর্তা, কর্মচারী, বিচারক প্রমুখকে তাদের কৃপাদৃষ্টি আকৃষ্ট করার জন্য যে হাদিয়া প্রদান করা হয়।
ইসলাম প্রদত্ত সীমারেখা ও মূলনীতি ঠিক রেখে বৈধ যে কোনো পণ্যের ব্যবসা করার মাধ্যমে উপার্জনকেইসলামি শরিয়ত হালাল আখ্যা দিয়েছে। এ ছাড়া যদি কেউ বৈধ উপায়ে যোগ্যতানুযায়ী চাকরি করে এবং ঘুষসহ যাবতীয় অবৈধ লেন-দেন ও অসৎ মানসিকতা থেকে দূরে থাকে তবে সেটাও জীবিকার্জনের হালাল পন্থা হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
** হতদরিদ্র দিনমজুর কহে ** ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৬:৪৭ এএম says : 0
** হালাল রুজি ইবাদতের পুর্ব শর্ত **
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন