বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খুলনায় অনশনে মারা গেলেন এক শ্রমিক দাবি আদায়ে অনড় পাটকল শ্রমিকরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

 বকেয়া মজুরি পরিশোধ, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণসহ ১১ দফা দাবিতে শ্রমিকদের আমরণ অনশন তৃতীয় দিনে পড়েছে। খুলনায় অনশনরত মারা গেছেন এক পাটকল শ্রমিক। এ খবরে তার সহকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। শ্রমিকদের মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত কর্মসূচি এলাকা। কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন থেকে সরবেন না দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলের শ্রমিকরা। মরতে হলে মিল গেটেই মরতে চান বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা।

এদিকে অনশন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে শতাধিক শ্রমিক প্রচ- অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছেন। খুলনা, নরসিংদী ও রাজশাহীতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় কয়েক জন শ্রমিককে স্থানীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্রমেই এ সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
খুলনা : খুলনায় অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে মারা গেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিক আব্দুস সাত্তার (৪৫)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে অনশন চলাকালে অসুস্থ হলে আব্দুস সাত্তারকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান তিনি। আব্দুস সাত্তার খুলনার প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের তাঁত বিভাগের স্থায়ী শ্রমিক ছিলেন। আব্দুস সাত্তারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই পাটকলের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহানা শারমিন।

এদিকে, অনশনে অসুস্থ হয়ে শ্রমিকের মারা যাওয়ার খবরে তার সহকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা লাশ আনতে হাসপাতালে জড়ো হয়েছেন। হাসপাতালে আরো শতাধিক অসুস্থ শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবির খান সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, আব্দুস সাত্তার মিলের সামনের তাঁবুতে অন্যান্য শ্রমিকের সঙ্গে তিন দিন ধরে আমরণ অনশন করছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ৭-৮নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যার দিকে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, সন্ধ্যা পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রায় শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের অনেককে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের অনশনস্থানে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। শরীরে স্যালাইন নিয়ে জীবন বাজি রেখেই তারা ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন।

শ্রমিক নেতারা জানান, আগামী ১৫ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় পাট মন্ত্রণালয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পাটমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য গত বুধবার রাতে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনার কর্মসূচি স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। কিন্তু শ্রমিকরা তা মানেনি।
শ্রমিকরা জানান, ‘জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যদি চাকরি করে টাকা-পয়সা না পাই তাহলে অনশনে মরাও ভালো। ‘মজুরি নেই, ঘরে চাল, ডাল, তেল নেই। ছেলে-মেয়েদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার নিশ্চয়তা নেই। পরিবারে চলে হাহাকার। এভাবে কি জীবন চলতে পারে?’ আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, শ্রমিকরা নিজেদের কাঁথা-কম্বল নিয়ে অনশনে নেমেছে। সমস্যার সমাধান করতে যদি মরতে হয়, তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চলবে। এর আগ পর্যন্ত শ্রমিকরা ঘরে ফিরবে না।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, শীতে এবং অনাহারে থাকায় প্রায় শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫/২৬ জনকে খুমেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের অনশন স্থানেই স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বুধবার রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বাসায় শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রতিমন্ত্রী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করার প্রস্তাব দেন। ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার মিটিংয়ে শ্রমিকদের দাবি পূরণ হবে। কিন্তু শ্রমিক নেতারা মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবে বালে জানান।

রাজশাহী : জুটমিলে তৃতীয় দিনের মত শ্রমিকদের আমরণ অনশন চলছে। গত বুধবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত আটজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরমধ্যে দুইজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থরা হলো, আসলাম হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, সাইদুর রহমান, আব্দুল গফুর। আলতাফুন বেগম, মহসীন কবীর, মোশাররফ হোসেন, মোজাম্মেল হক ও মনসুর রহমান। এদের মধ্যে আসলাম হোসেন ও আব্দুল গফুরকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আসলাম পাটকলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি।
রাজশাহী জুট মিলসের সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জিল্লুর রহমান জানান, রাতে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়লে জুট মিলের চিকিৎসক মাহফুজুর রহমান এসে প্রাথমিক পরীক্ষা করে আসলামকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। পরে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর অপর দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আব্দুল গফর (৪৮) অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসক এসে প্রাথমিক পরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তাকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নরসিংদী : তৃতীয় দিনের মত আমরণ অনশন করছে নরসিংদীর ইউএমসি জুটমিলের শ্রমিকরা। রাতভর শীত উপেক্ষা করে কাঁথা বালিশসহ অনশন স্থলে অবস্থান করছেন শত শত শ্রমিক। গত তিন দিনে অনশনরত ১২জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদিকে আমরণ অনশনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে জুটমিলে। মিলের উৎপাদনবন্ধ হওয়াসহ প্রবেশ করতে পারছেনা পাটবাহী কোন ট্রাক।
আমরণ অনশন কর্মসূচীতে শ্রমিক নেতারা বলেন, ২০১৫ সালে ঘোষণা দিয়েও মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছেন শ্রমিকরা। মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, ১১ সপ্তাহের বকেয়া বেতন পরিশোধ, পিএফ’র টাকা প্রদান, বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণসহ ১১ দফা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী। যা সরকার মানছেন না। এ জন্য বাধ্য হয়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিকরা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন