শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বিদেশে নারী কর্মীর সুরক্ষা

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৭:৩৮ পিএম

# সরকারি পরিপত্র জারি
# সংশোধনের দাবি ফোরাবের
# দালাল চক্রের অসমপ্রতিযোগিতা
# ১৫২ গৃহকর্মীর লাশ এসেছে
শামসুল ইসলাম
সউদীসহ বিভিন্ন দেশে কর্মস্থলে প্রবাসী নারী গৃহকর্মীর সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রবাসের কর্মস্থলে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীরা যাতে মর্যাদা ও নিরাপত্তায় শ্রম দিতে পারে সে ব্যাপারে সরকার জোরালো উদ্যোগ নিচ্ছে। অতিসম্প্রতি বেশ কিছু নারী গৃহকর্মী সউদী আরব থেকে নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে খালি হাতে দেশে ফেরায় সরকারসহ বিভিন্ন মহল তৎপর হয়। সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে বিদেশ গমনেচ্ছু নারী কর্মীদের বর্হিগমন প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
তেলসমৃদ্ধ দেশ সউদীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯ লাখ নারী গৃহকর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। কিন্ত একশ্রেণির দালাল চক্রের অসমপ্রতিযোগিতার দরুণ সউদীর শ্রমবাজারটি এখন অনেকটা ঝুঁকির দিকে গড়াচ্ছে। কতিপয় অসাধু মহিলা রিক্রুটিং এজেন্সি বেশি বয়সের নারী কর্মীকে কম বয়স দেখিয়ে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই সউদী পাঠিয়েছে। এসব এজেন্সির সাথে বিএমইটির অসাধু কর্মকর্তাদের দহরমহর সর্ম্পক রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সরকার তদন্ত পূর্বক এসব অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বিদেশে নারী গৃহকর্মীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গত ১০ ডিসেম্বর ১২টি শর্তাবলী সম্বলিত একটি পরিপত্র জারি করেছে। ২০১৫ সনে উভয় দেশের সমঝোতা স্মারকের পর থেকে মহিলা রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিনা অভিবাসন ব্যয়ে তিন লক্ষাধিক নারী গৃহকর্মী সউদী আরবে চাকুরি লাভ করেছে। তারা কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। দেশটি থেকে এ যাবত ১৫২ জন নারী গৃহকর্মীর লাশ দেশে এসেছে। এসব লাশের মৃত সনদে অনেকেরই স্বাভাবিক মৃত্যু, আত্মহত্যা এবং ২/১ জন নারী গৃহকর্মীর মৃত্যু নির্যাতনের কারণে হয়েছে। ফিমেল ওয়ার্কার্স রিক্রুটিং এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফোরাব) সভাপতি টিপু সুলতান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ১১ মাসে সউদী থেকে ২হাজার ১৭ জন নারী কর্মী দেশে ফিরেছে। এক প্রশ্নের জবাবে ফোরাব সভাপতি বলেন, সউদী থেকে দেশে ফেরত আসা নারী কর্মীর মধ্যে ২% নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
জারিকৃত পরিপত্রে বলা হয়েছে, যে সকল রিক্রুটিং এজেন্সি বয়স কম বেশি দেখিয়ে এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ ও মেডিক্যাল পরীক্ষা ব্যতিরেকে নারী কর্মীদের সউদী পাঠিয়েছে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রিক্রুটিং এজেন্সি প্রত্যেক নারী কর্মীকে বিদেশ গমনের পূর্বে একটি স্মার্ট ফোন প্রদান করবে। নারী কর্মীদের কারো কম বয়সী, বেশি বয়সী ও শারীরিকভাবে অসুস্থ প্রতীয়মান হলে বিমানে আরোহণ থেকে বিরত রাখতে পারবে বিমান বন্দরস্থ প্রবাসী কল্যাণ ডেক্স কর্তৃপক্ষ। এতে আরো বলা হয়, আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে বিমান বন্দরের নিকটে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিদেশ থেকে ফেরত আসা নারী কর্মীদের আইনী ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য রি-ইনটেগ্রেশন সেল স্থাপন করবে।
বিদেশে নারী কর্মীদের অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পরিপত্রের ওপর মতামত গ্রহণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং সেন্টারে বায়রাসহ মহিলা রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারীদের ডেকেছেন। ফোরাব নেতৃবৃন্দ গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন, সরকার একতরফা পরিপত্র জারি করে মহিলা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর গলায় ফাঁসির দঁড়ি ঝুলিয়েছে। সউদী আরবে নারী গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে দেশটির কফিলদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। বিদেশের কর্মস্থলে প্রবাসী নারী গৃহকর্মীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা এজেন্সি’র একার পক্ষে সম্ভব নয়। সউদীতে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করতেই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় মহিলা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর একপেশে পরিপত্র জারি করেছে। মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র সংশোধন ছাড়া বিদেশে নারী গৃহকর্মী পাঠানো সম্ভব হবে না বলেও তারা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, বিদেশে নারী গৃহকর্মীর সুরক্ষা আমরাও চাই তবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সুরক্ষা কে দেবে ? তা’ ভেবে দেখতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে নয় পল্টনস্থ একটি হোটেলে সরকারের জারিকৃত পরিপত্রের ওপর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ফিমেল ওয়ার্কার্স রিক্রুটিং এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফোরাম) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। ফোরাব সভাপতি টিপু সুলতানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আরিফুর রহমানের পরিচালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বায়রার সাবেক নেতা ও ফোরাবের উপদেষ্টা কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল , ফজলুল মতিন তৌহিদ, মতিউর রহমান খান, ইউনিভারসেল ওভারসীজের স্বত্বাধিকারী ও ফোরাবের সহসভাপতি এ কে এম বজলুর রহমান, এস আই মজুমদার সিরাজ, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবুল বাশার, আহমেদ উল্লাহ বাচ্চু ও খুরশিদ আলম।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সউদীতে প্রবাসী নারী কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে একমাত্র রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসই কর্তৃপক্ষ। এ জন্য দূতাবাসের লেবার উইংগুলোতে জনবল বাড়াতে হবে। তারা বলেন, বাংলাদেশে বসে হাজার হাজার মাইল দূরে সউদীতে কর্মরত নারী কর্মীদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব মহিলা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়।
সভাপতির বক্তব্যে ফোরাব সভাপতি টিপু সুলতান বলেন, সরকারের উল্লেখিত পরিপত্র বাস্তবায়িত হলে মহিলা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো নির্বিঘেœ নারী কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারবে না। দুই একটি এজেন্সির অপরাধের দরুণ জারিকৃত পরিপত্রে কঠোর শর্তাদি অনুসরণ করে নারী কর্মী পাঠালে এজেন্সির মালিকদের জেলের ভাত খেতে হবে। তিনি বলেন, সউদীতে নারী গৃহকর্মী প্রেরণের অসুস্থ্য প্রতিযোগিতার দরুণ মহিলা রিক্রুটিং এজেন্সির ওপর খড়গ নেমে আসছে। তিনি বিদেশে নারী কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হোক এটা আমরাও চাই। তিনি বলেন, বিদেশে জনশক্তি রফতার ধারা অব্যাহত রাখতে হলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে থেকে জারিকৃত পরিপত্র অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে। অন্যথায় ৫৯৯টি মহিলা রিক্রুটিং এজেন্সি পথে বসবে। এতে শ্রমবাজারে ধস নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। ফোরাব সভাপতি বলেন, অতিসম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসের দুর্নীতি ও কতিপয় রিক্রুটিং এজেন্সির দৌরাত্ম্য শীর্ষক খবর প্রকাশিত হওয়ায় দূতাবাসের টনক নড়েছে। দূতাবাসের চার্জদ্যা অ্যাফেয়ার্স তাৎক্ষণিকভাবে ভিসা ইস্যু নিয়ে ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করে পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিকভাবে সকল রিক্রুটিং এজেন্সির মালিককে ঘুষ ছাড়াই পাসপোর্ট জমা দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তিনি এ জন্য ইনকিলাব সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি সউদী দূতাবাসের কর্তৃপক্ষকেও মোবারকবাদ জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কোনো কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি একজন মহিলা গৃহকর্মীর পাসপোর্ট হাতে পেতে দালালকে ৮০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা কমিশন দিচ্ছে। এতে দালাল চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিদেশ গমনেচ্ছু নারী গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা ও হয়রানি বন্ধের দালালদের অসমপ্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া সভায় আগামী ১৫ ডিসেম্বর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বিদেশে নারী কর্মীর সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের ওপর মতবিনিময় সভায় ফোরাবের পক্ষ থেকে পরিপত্র সংশোধনের দাবি সম্বলিত প্রস্তাবনা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন