শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নাগরিকত্ব বিল নিয়ে জ্বলছে ভারত, গুলিতে নিহত ৫

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আসামের গন্ডি পেরিয়ে গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তরপূর্বের অন্য রাজ্যগুলি তো বটেই, বিতর্কিত এই বিলটির প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তেও শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভের আঁচ গিয়ে পড়েছে রাজধানী দিল্লি, কর্ণাটক, কেরল, উত্তরপ্রদের মতো রাজ্যগুলিতে।
আসামে এখনও পর্যন্ত ২৬ প্লাটুন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গোটা রাজ্যে স্কুল-কলেজ আগামী ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। কার্যত গোটা রাজ্যেই কারফিউ জারি করা হয়েছে। ডিব্রæগড়ে কারফিউ কিছুটা শিথিল হলেও, রাজ্যের বাকি অংশে তা বলবৎ। কিন্তু সেসব উপেক্ষা করেই ঈঅই নিয়ে বিরোধিতায় নেমেছে আসামবাসী। পুলিশের গুলিতে মৃত অন্তত ৫ জন বিক্ষোভকারী। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় পথে নেমেছেন আসামের ভ‚মিপুত্র গায়ক জুবিন-পাপন, অভিনেতা আদিল হুসেন। এমতাবস্থায় দলের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেন আসামের বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা যতীন বোরা।

আসাম সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি পরিষেবার জন্য হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। জরুরি পরিষেবার আলাদা সেন্টারও খোলা হয়েছে। এদিকে, বিরোধীরাও কোমর বাঁধছে। কংগ্রেসের তরফে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ কর্মস‚চির ডাক দেওয়া হয়েছে। তিনদিনের অনশন সত্যাগ্রহের ডাক দিয়েছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। যাতে শামিল হচ্ছেন বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে শিল্পমহলও।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল লোকসভায় পাশ হওয়ার পর থেকেই প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়েছে আসামে। প্রায় গোটা রাজ্যেই আসামীয়ারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে। রাজধানী দিসপুর, গুয়াহাটি-সহ বঙ্গাইগাঁও, গোলাঘাট, তিনসুকিয়া, ডিব্রæগড়, শিবসাগর, জোরহাট, মাজুলির মতো জেলাগুলিতে পথ অবরোধ শুরু হয়েছে। গুয়াহাটি ও ডিব্রæগড়ের রাস্তায় ফ্ল্যাগ মার্চ করছে সেনা। বিপদ বুঝে একাধিক অঞ্চলে সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করেছে প্রশাসন। গুয়াহাটিগামী সমস্ত ট্রেন এবং বিমান বাতিল করা হয়েছে। ত্রিপুরা থেকেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গুয়াহাটির। কিন্তু তাতেও দমন করা যাচ্ছে না বিক্ষোভকারীদের। কারফিউ উপেক্ষা করেই পথে নামছেন হাজার হাজার মানুষ। ইতিমধ্যেই, রাজ্যের শাসকদলের একাধিক নেতামন্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনেও ঢিল ছুঁড়েছে বিক্ষোভকারীরা। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবাও। এককথায়, অচলাবস্থা আসামে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই আসাম ভ‚মিপুত্র যতীন বৃহস্পতিবার বিজেপি ছাড়লেন। ইস্তফা দিয়েছেন দলের সদস্যপদ থেকে। যদিও দল ছাড়ার কোনও কারণ ব্যক্ত করেননি অভিনেতা। তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আসামের এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জন্যই যে দলত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছে যতিনের ঘনিষ্ঠরা।
অন্যদিকে, ক্যাব প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে আদিল হুসেন বলেছেন, ‘আসাম খুব কষ্টে আছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা অচলাবস্থা কাটিয়ে আসাম সদ্য স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। তবে আমাদের নেতা-মন্ত্রীরা আসামের জটিল পরিস্থিতি এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোর ব্যাপারে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল জোর করে চাপিয়ে দেয়া সরকারের সর্বকালের সেরা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।” জুবিন-পাপনের কথা, ‘আসামে আক্রান্ত হচ্ছে মানবতা।’

একই পরিস্থিতি মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়েও। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শিলংয়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। গতকাল কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন স্থানীয়রা। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তাকর্মীদের গুলি পর্যন্ত চালাতে হয়েছে বলে খবর। এদিকে, বিক্ষোভের জেরে শিলং সফর বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়েছে রাজধানী দিল্লিতেও। দিল্লির জামিয়া এলাকায় এদিন বিক্ষোভে শামিল হন জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জাতীয় পতাকা হাতে অবরোধ করা হয় রাস্তা। বেশ কিছু জায়গায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ফাটানো হয়েছে শব্দবাজিও। বিক্ষোভের জেরে ব্যহত হয়েছে মেট্রো পরিষেবাও। দিল্লির পাশাপাশি কেরালা, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটকেও বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছে। কেরালায় সরকার এবং প্রধান বিরোধী কংগ্রেস দুই দলই সিএবির বিরোধিতা করছে। উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে ইন্টারনেট। কর্ণাটকের কালবুর্গিরও একই পরিস্থিতি।

বাদ যাননি বাংলার সাধারণ মানুষও। পথে নেমে আন্দোলনে শামিল তারা। উলুবেড়িয়া, খড়দহ, ডায়মন্ড হারবার এবং মুর্শিদাবাদে স্থানীয়দের আন্দোলনে ব্যাহত যানচলাচল। রেললাইনে অবরোধের জেরে বেশ কয়েকটি স্টেশনে বন্ধ ট্রেন চলাচলও। তবে কারও আসাুবিধা করে রেল এবং পথ অবরোধ না করারই অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংযত হয়ে আন্দোলন করতে বলেছেন তিনি। সূত্র : এনডিটিভি, টিওআই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন