শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারতকে শেখ হাসিনার কড়া বার্তা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভারত সফর আটকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোদি সরকারকে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করছে কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা। গতকাল শুক্রবার ‘বিদেশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর আটকে বার্তা হাসিনার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকাটি। ইন্ডিয়ান ওশিয়ান সংলাপে যোগ দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরের পর হঠাৎ করেই ওই সফর বাতিলের কথা জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে শুক্রবার সকালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার আমন্ত্রণে মেঘালয়ে যাওয়ার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। বৃহস্পতিবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু মন্ত্রীর এই সফর স্থগিতের কথা জানান। 

বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর হঠাৎ করেই ভারত সফর বাতিলকে দিল্লির জন্য বার্তা হিসেবেই দেখছে কলকতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। পত্রিকাটি জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তেই শেষ মুহূর্তে দুই মন্ত্রী তাদের সফর বাতিল করেছেন।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- নয়াদিল্লির বিমানে ওঠার কয়েক ঘণ্টা আগে সফর বাতিল করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। ভারত ওশিয়ান সংলাপে যোগ দিতে তিন দিনের এই সফর বাতিলের কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস (১৪ ডিসেম্বর) সামনেই। সেই অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত থাকতে হবে তাঁকে। একই সময়ে ওশিয়ান সংলাপের তারিখ পড়ায় তাঁর ভারত যাওয়া হচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার আমন্ত্রণে শিলংয়ে যাওয়ার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরে ‘উপযুক্ত সময়ে’ মন্ত্রী এই সফরে যাবেন।
প্রশ্ন উঠেছে, যে-সব অনুষ্ঠানের কারণ দেখিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফর বাতিল করা হল, সেগুলো বহু বছর ধরে ওই দিনেই হয়! ওশিয়ান সংলাপের দিনও স্থির হয়েছে মাসখানেক আগে। তা হলে সম্মতি দিয়েও শেষ মুহূর্তে কেন বিমানে উঠলেন না মোমেন? ক‚টনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বুধবার রাতে মোমেন শেখ হাসিনার বাসভবনে দেখা করতে গিয়েই এই নির্দেশ নিয়ে ফিরেছেন। স¤প্রতি সংসদে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি যে ঢাকার রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিসরে গভীর অসন্তোষ তৈরি করেছে তা, এই সিদ্ধান্তে স্পষ্ট হয়ে গেল। মোদী সরকারকে এতটা কড়া বার্তা দিতে সা¤প্রতিক কালে দেখা যায়নি বলে মনে করছেন ক‚টনীতিকেরা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিল করা এবং সিএবি পাশের বিষয়টিকে পৃথক ভাবে দেখা উচিত বলে জানিয়েছেন। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তৃতা উদ্ধৃত করে রবীশ জানিয়েছেন, অমিত শাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ভারত সরকার মনে করে সামরিক শাসন এবং খালেদা জিয়ার সময়েই সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার ভ‚মিকার প্রশংসাই করেছেন শাহ।
কিন্তু ঘটনার গতি থেকে স্পষ্ট যে বাংলাদেশের অসন্তোষ গভীরে। বৃহস্পতিবার রাতে সিএবি পাশ হওয়ার পর এই মোমেনই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘ভারতের নিজের দেশে অনেক সমস্যা রয়েছে। ওরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করুক, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। বন্ধু দেশ হিসাবে আমরা আশা করছি ভারত এমন কিছু করবে না, যাতে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের মতো খুব কম দেশই রয়েছে যেখানে এত সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি রয়েছে। উনি (অমিত শাহ) আমাদের দেশে কয়েক মাস থাকলেই দেখতে পাবেন, এখানকার স¤প্রীতি নজির হতে পারে।’’
বাংলাদেশ সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছেন, বিল পাশের সময় যে ভাবে বার বার পাকিস্তানের সঙ্গে একই বন্ধনীতে বাংলাদেশকে রেখে সংখ্যালঘু নিপীড়নের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে, তা শেখ হাসিনা সরকারের জন্য বিড়ম্বনার।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফর বাতিল করার পর রবীশ বলেছেন, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং মজবুত। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফর বাতিল এবং নাগরিকত্ব বিল পাশ হওয়া, দু’টি আলাদা ঘটনা। নয়াদিল্লি না আসতে পারার কারণ হিসাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেটিকেই মানা উচিত।’’ পাশাপাশি রবীশ বাংলাদেশকে বার্তা দিতে চেয়ে বলেছেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কি, কিছু বিভ্রান্তি হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে সাফ ব্যাখ্যা করেছেন যে সংখ্যালঘুদের উপর ধর্মীয় উৎপীড়ন বর্তমান সরকারের সময় হয়নি। সে দেশে পূর্ববর্তী সরকার এবং সামরিক শাসনের সময় এটা হয়েছে। বরং বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন।’’
ঢাকা সূত্রের বরাতে আরও বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু ও হাসিনার প্রশংসা করার পাশাপাশি অমিত শাহ এ কথাও বলেছেন, ‘‘একাত্তরের পরেও সে-দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।’’ ঢাকা মনে করে, কার সময়ে কী ঘটেছে সেই কাদা বার বার ছোঁড়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সার্বিকভাবে একটি বার্তা গিয়েছে। আওয়ামী লীগের কট্টর ইসলামি অংশকে ভারত-বিরোধিতার জিগির তোলায় উদ্বুদ্ধ করার পক্ষে তা যথেষ্ট। ভারত-বিদ্বেষী প্রচারের ইন্ধন জোগাতে শুরু করেছে বিএনপিও।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যে ক‚টনৈতিক কর্ম-কর্তারা ভারতে গিয়েছিলেন, তাঁদের মতে— আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুসলমানদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের জনমানসে। ঘরোয়া রাজনীতিতে তা শেখ হাসিনার পক্ষে অনুকূল নয়। আওয়ামী লীগের ইসলামপন্থী অংশ ভারত-বিরোধী প্রচার শুরু করলে ভারত-বাংলাদেশ কৌশলগত ও বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বাধার মুখে পড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। মাঝখান থেকে চিনের প্রতি নির্ভরতা বাড়বে ঢাকার।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
Sharif Ahmmed Sandwipi ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 1
ভারতের নাগরিত্ব বিল ও বাংলাদেশ ঃ- বাংলাদেশ সর্বদা মনে করে ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু।কিন্তু সাম্প্রতিক ভারত যে নাগরিকত্ব বিল পাস করেছে এবং তাতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের নামও জুড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একটা বৈষম্য বা অবন্ধত্বপূর্ণ আচরণ প্রকাশ পাচ্ছে। ফলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সোনালী অধ্যায় বলে বিবেচনা করা হয় তা ভারতের চানৈক্য বা কূটকৌশলের আঘাতে ঝড়ঝড়িত হবার আশংকা রয়েছে। ভারত উক্ত বিল পাসের ফলে প্রতিবেশী দেশ গুলোর অভ্যন্তরেও অস্থিতিশীলতা তৈরী হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভারতের কু-আচরণের ফলে স্ব-ধর্মবলম্বী নেপাল ও শ্রলংকা হাত ছাড়া হয়েছে। ফলে উক্ত দেশ দুটি চীনের ভগলতলে গিয়ে ডুকডুগি বাজাচ্ছে। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালকে স্মরণ রেখে ভারতের সাথে সু-সম্পর্ক বাজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। উক্ত বিলের ফলে ভারত হতে মুসলমানদের ঢল নামতে পারে বাংলাদেশে ঢুকার জন্য। এ যেনো ইচ্ছাকৃত অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা প্রতিবেশী একটা দেশের জন্য। উপসংহার ঃ সরকারের উচিৎ হবে শীমান্তে কড়াকড়ি করা যাতে ভারত হতে কোন মুসলিম আমাদের দেশে না আসতে পারে। আমরা এমনিতেই ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গা নিয়ে সমস্যায় ঝড়ঝড়িত।
Total Reply(0)
Shahadat Shb ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 2
ওটা‌ কিছুই না । সরকার মো‌দির সা‌থে আরো ক‌য়েক বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য চু‌ক্তি কর‌বে তার জন্য কত জন ভারতীয়দের বাংলা‌দে‌শে আশ্রয় দি‌তে হ‌বে তার হি‌সেব নি‌কেশ করার জন্য তা‌দের সফর আট‌কি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে। ... সেই মুরদ নেই ভার‌তকে চ্যা‌লেন্জ করার।
Total Reply(0)
জাগ্রত বিবেক ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 2
হায় হায় কি বলে বন্ধু রাষ্ট্র হঠাৎ করে হামলা করতেছে কেনো ইন্ডিয়া বাংলাদেশ থেকে যা নেয়ার তারা সব নিয়ে গেছে এখন থালা বাটি হাতে ধরিয়ে দিয়েছে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে তাই এখন বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা চালায় ভালো অনেক ভালো 20 থেকে 50 লাখ লোক একসাথে পাঠিয়ে দিবে বাংলাদেশে
Total Reply(0)
Sharif Ali ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 1
বাংলাদেশের দালালরা সুদু খমতা টিকেথাকার কথাই ভাবছে দেশের ১২টা বাজলেও কিছু আসে যায়না
Total Reply(0)
Manjurul Alam Shahin ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
এই সব মন্ত্রীদের কোন মূল্য আছে ভারতে? বাংলাদেশকেই ওরা কখনো কোন মূল্যায়ন করেনি, আর এইসব চুনোপুঁটি!
Total Reply(0)
Altaf Hussen ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 1
অনেক দেরি হয়ে গেল ? তার পরও ভালো, অরাত কিছুটা বুজবে যে, আমাদেরও জাতীয়তা জাতীসত্তা কিছুটা না হলেও আছে।
Total Reply(0)
Firoz Hossain ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
Now visiting India is not safe. Due to personal safety it's done, I think. But they are presenting it differently to satisfy publics.
Total Reply(0)
Rasel Ahmed ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 1
প্রধানমন্ত্রী কে ধন্যবাদ এত্ত দিনে তার শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে।ভারত এক‌টি সাম্প্রদায়িক..পাগল দেশ।আর নিজের সার্থ ছারা কিছুই বুঝে না ওরা।
Total Reply(0)
Mubarak Hossen Sobuj ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 1
ভারত কোন বাঘ বা ভাল্লুক নয়,তেল মারা বন্ধ করুন,দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করুন।১২ লক্ষ রোহিঙ্গা ঢুকেছে,সুযোগ পেলে কোটি লোক বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে পাঠাবে ভারত।
Total Reply(0)
Md Golam ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 1
ভারত বাংলাদেশ কে টিসু পেপার এর মতো ব্যাবহার করে এখন পেলে দিয়েছে।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৪২ এএম says : 2
বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
jack ali ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:০৬ পিএম says : 1
Our Beloved country is the best in the world where we muslim never oppressed non-muslim --- every where in the world like burma/china/india/Philippine/Thailand/Bratain/America/Russia, as a whole every where Muslims are oppressed.
Total Reply(0)
Alamgir Pasha ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২১ পিএম says : 0
bolar kisui nei..
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন